একাধিক অফিসারের সই জাল করে প্রায় ১ কোটি টাকা নয়ছয়ের অভিযোগে দফতরের একজন পদস্থ কর্মীর বিরুদ্ধে এফআইআর করেন জেলাশাসক। কোচবিহারে ঘটনাটি ঘটেছে। জেলাশাসক মোহন গাঁধীর অভিযোগ, প্রদীপ চক্রবর্তী নামের ওই আপার ডিভিশন ক্লার্ক বহু টাকা নয়ছয় করেছেন। শহরের চিত্রকরপাড়ার বাসিন্দা প্রদীপবাবু তৃণমূল প্রভাবিত ইউনাইটেড স্টেট গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ ফেডারেশনে কোচবিহার জেলা কমিটি কোষাধ্যক্ষ ছিলেন। ১১ জানুয়ারি জেলাশাসক ওই কর্মীর বিরুদ্ধে সরকারি অর্থের নয়ছয়, সই জাল করে কাজ পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ কোতোয়ালি থানায় দায়ের করেন। কোচবিহারের পুলিশ সুপার অনুপ জয়সওয়াল বলেন, “অভিযুক্ত পলাতক। গোটা ঘটনা গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। অভিযুক্তের খোঁজে তল্লাশি চলছে।” জেলাশাসক মোহন গাঁধী ওই বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকার করেন। সাংসদ নৃপেন রায় বলেন, “মনিটরিং মিটিংয়ে খোঁজ নিয়ে এ নিয়ে যা বলার বলব।”
পুলিশ জানায়, অভিযুক্তের বিরুদ্ধে সরকারি অর্থ তছরুপ, প্রতারণা, সই জালের অভিযোগে মামলা রুজু করা হয়েছে। তাঁর বাড়ির লোকজনকে জেরা করা হয়েছে। থানায় অভিযোগ জানানোর দিনই তিনি অসুস্থতার নামে ছুটি নিয়ে আত্মগোপন করেন। মোবাইল বাড়িতে ফেলে গিয়েছেন।
পুলিশ জেনেছে, দফতরে সাংসদের এলাকা উন্নয়ন তহবিলের নথি দেখভালের পাশাপাশি ওই খাতে চেক ইস্যু করার দায়িত্বে ছিলেন প্রদীপবাবু। অভিযোগ তিনি ওই সুযোগ নিয়ে জেলাশাসক, অতিরিক্ত জেলাশাসক, ডিস্ট্রিক্ট প্ল্যানিং অফিসার ও সাংসদের সই জাল করে কমিশনের ভিত্তিতে নির্দিষ্ট কয়েক জন ঠিকাদারকে কাজের ভুয়ো বরাত পাইয়ে দিয়েছেন। এর পরে ভুয়ো ওয়ার্ক অর্ডার দেখিয়ে আধিকারিকদের চেক সই করিয়ে টাকা তুলে নেওয়ার ব্যবস্থাও করতেন। প্রাথমিকভাবে ১৩টি ভুয়ো প্রকল্পে প্রায় ১ কোটি টাকার নয়ছয়ের সন্ধান মিলেছে। তদন্ত সম্পূর্ণ হলে ওই অঙ্ক দুই কোটি টাকা ছাড়াতে পারে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, যে ভুয়ো তালিকার একাধিক নথি উদ্ধার হয়েছে তারমধ্যে রয়েছে ফরওয়ার্ড ব্লক সাংসদ নৃপেন রায়ের এলাকা উন্নয়ন তহবিল থেকে বরাদ্দ গীতালদহ, ওকরাবাড়ি, নয়ারহাট, গোবড়াছড়া, জোরপাকড়ি এলাকার বিভিন্ন স্কুল ও রাস্তার কাজ। সম্প্রতি সাংসদ জেলাশাসকের দফতরে তাঁর সুপারিশ করা প্রকল্পের খোঁজ নিতে গিয়ে প্রকল্পের তালিকা দেখে অবাক হন। তিনি সুপারিশ করেননি এমন একাধিক প্রকল্প সেখানে রয়েছে। এর পরেই জেলাশাসক নিজে ঘটনার তদন্ত করে বড় মাপের দুর্নীতির খোঁজ পান। তৃণমূল প্রভাবিত ইউনাইটেড স্টেট গর্ভমেন্ট এমপ্লয়িজ ফেডারেশনের কোচবিহার জেলা সম্পাদক উত্তম বণিক বলেন, “১৯৮৬ সাল থেকে প্রদীপবাবু ওই সমস্ত ফাইল দেখছেন। আমাদের সংগঠন হয়েছে মাত্র দেড় বছর হল। এতদিন কেন ওই অভিযোগ উঠল না সেটাই অবাক লাগছে। ঘটনার কথা শোনার পরেই ওই কর্মীকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।” কো-অর্ডিনেশন কমিটির জেলা সম্পাদক আশিস গোস্বামী বলেন, “একই ব্যাক্তিকে প্রকল্পের নোট দেওয়া থেকে চেক কাটার দায়িত্বে রাখা নিয়ে আপত্তি জানানো হয়েছিল। অভিযুক্তের কড়া শাস্তির দাবিতে বৃহস্পতিবার জেলাশাসককে স্মারকলিপি দেওয়া হবে।” অভিযুক্তের ছেলে শুভঙ্কর চক্রবর্তী বলেন, “বাবা কোথায় আছেন কিছুই বলতে পারব না। উনি ১১ জানুয়ারি অফিসে জন্য বার হয়ে আর ফিরে আসেননি।” |