প্রতিবাদে ধিক্কার মিছিল উত্তর জুড়ে
দিনহাটায় কলকাতার নাট্যকার বেণু চট্টোপাধ্যায়কে হেনস্থার ঘটনার প্রতিবাদ হল উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন এলাকায়। শিলিগুড়ি, রায়গঞ্জ, বালুরঘাট, কোচবিহার-সহ উত্তরবঙ্গের একাধিক এলাকায় বুধবার প্রতিবাদ মিছিল করেন নাট্যকর্মীরা। সরব হয়েছেন বাসিন্দা ও বিদ্বজনের একাংশও।
দিনহাটা থেকে মাথাভাঙাকোচবিহার জেলাজুড়েই ওই ঘটনায় সমালোচনার ঝড় উঠেছে। ব্যাপক ক্ষুব্ধ কোচবিহারের নাট্যকর্মী ও বিদ্বজনদের একাংশ। কলকাতার নাট্যগোষ্ঠীকে জেলায় অনুষ্ঠানের জন্য ডেকে এনে রীতিমতো লাঞ্ছনা করা থেকে রাজরোষে সাংস্কৃতিক জগতকে দমিয়ে রাখার মত চেষ্টার অভিযোগও উঠেছে শাসক দলের বিরুদ্ধে।
কোচবিহারের ‘রূপকথা’ নাট্যগোষ্ঠীর কর্ণধার উত্তীয় দে বলেন, “সংস্কৃতির ক্ষেত্রেও রাজরোষ ছড়িয়ে পড়ার প্রবণতা উদ্বেগজনক। তার উপর সেটা যদি প্রশাসনকে পাশে নিয়ে করা হয় তবে তা আরও মারাত্মক। যদিও শেষ পর্যন্ত নাটকের জয় হবেই।” ওই প্রসঙ্গেই উত্তীয়বাবুর অভিযোগ, “যে বয়সে চাপ নেওয়া যায় না, সেখানে পরিচালককে প্রশাসন যুক্ত থেকে ক্ষমা চাওয়াবেন, এটা দুর্ভাগ্যজনক।” কোচবিহারের ‘ইন্দ্রায়ুধ’ নাট্যগোষ্ঠীর কর্ণধার দীপায়ন চট্টোপাধ্যায় মনে করছেন, ওই বিষয়ে মানুষই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। দীপায়নবাবুর বক্তব্য, “নাটকে কে কী বলবে সেটা যদি সরকার ফরমান দিয়ে ঠিক করে দেয় তবে মানুষই ঠিক করবেন সেটা মানবেন কি না।”
গোটা ঘটনা তৃণমূলের সকলেও সমর্থন করবেন না বলে মনে করেছন মাথাভাঙার ‘গিলোটিন’ নাট্যগোষ্ঠীর পরিচালক নারায়ণ সাহা। তাঁর কথায়, “রাজ্যের রাজধানীর একটি নাট্যগোষ্ঠীকে জেলায় অনুষ্ঠান করতে এসে যে ভাবে হেনস্থা হতে হল তা দেখে কোচবিহারের মানুষ ও নাট্যকর্মী হিসেবে হতবাক হয়ে গিয়েছি। আমার ধারণা দিনহাটার ঘটনা তৃণমূলের সকলে সমর্থন করবেন না।”
শিলিগুড়িতে ধিক্কার মিছিল নাট্যকর্মীদের। বুধবার ছবি তুলেছেন বিশ্বরূপ বসাক।
নাট্যকর্মীদের পাশাপাশি এই ঘটনায় সরব হয়েছেন জেলার প্রবীণ বাসিন্দা ও বিদ্বজনের একাংশও। নায়েব আলি টেপু স্মরণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক চন্দন পাল বলেন, “দিনহাটার ঘটনা জানি না। ওই ব্যাপারে ভাল করে খোঁজ না নিয়ে মন্তব্য করতে চাইছি না। তবে এটুকু বলতে পারি কোনও নাট্যকারের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা উচিত নয়।” দিনহাটা নাগরিক মঞ্চের সম্পাদক জয়গোপাল ভৌমিক বলেন, “নাটকের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের বিরোধী আমরাও। কিন্তু শিল্প-সংস্কৃতি ঘিরে রাজনীতিকরণ যাতে না হয় সে ব্যাপারে পরিচালকরা দায় এড়াতে পারেন না। কারণ নাটক দলমত নির্বিশেষে সবাই দেখেন। সেখানে যে কোনও বার্তাই সর্বজনীন হওয়া উচিত।” মঙ্গলবার দিনহাটার প্রগতি নাট্য সংস্থা আয়োজিত ওই নাট্য উৎসবে যাওয়ার কথা থাকলেও যাননি বনমন্ত্রী হিতেন বর্মন। দিনহাটার বাসিন্দা তথা তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সম্পাদক পার্থনাথ সরকার অবশ্য বলেন, “রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে কুৎসার ঘটনার জন্য দিনহাটাতে এলেও স্মরণিকা প্রকাশের কথা থাকলেও বনমন্ত্রী নাট্য উৎসবে যান নি। আমরাও ওই দিন অনুষ্ঠানে যাইনি।” বনমন্ত্রী হিতেন বর্মন বলেন, “রাজ্য সরকারের ভাবমূর্তি নষ্টের চেষ্টার অভিযোগ শোনার পর ওই অনুষ্ঠানে যাওয়ার সিদ্ধান্ত বাতিল করেছি। সেইসঙ্গে বনমন্ত্রীর দাবি, নাটকের সংলাপ দর্শকদের আঘাত দিয়েছে। নাট্যকারদের স্বাধীনতা থাকার মানে দর্শকদের আঘাত দেওয়া নয়। আয়োজক সংস্থার সভাপতি নারায়ণ সাহা ফোন না ধরায় এ নিয়ে তাঁর বক্তব্য জানা যায়নি।”
নাটকের বক্তব্যের সঙ্গে অনেকে সহমত নাও হতে পারেন। গণতন্ত্রে তারা প্রতিবাদও করতে পারেন। তাই বলে সেটা হুমকি, নাট্যকার এবং অন্যদের সাবধান করা বা ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকির মতো হলে তা ঠিক নয়।
পার্থ চৌধুরী,
দিনহাটার ঘটনা সংস্কৃতির স্বাধীনতার উপর আঘাত। কোনটা বলব আর কোনটা বলতে পারব না, তা জোর করে চাপিয়ে দেওয়ার ঘটনাকে বাম আমলেও কোনও দিন সমর্থন করিনি এখনও করব না।
হরিমাধব মুখোপাধ্যায়,
 
যা ঘটেছে তা কাম্য নয়। তবে যে নাটক সেখানে মঞ্চস্থ হচ্ছিল তা অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তার সময় তিনি ‘মা-মাটি’, ‘দিদি’ এ ধরনের শব্দবন্ধ ব্যবহার করেননি। যারা নাটকে সস্তা দরের এ ধরনের শব্দ ব্যবহার করেছেন তারা এটা না করলেই পারতেন।
মলয় ঘোষ,
শিল্পের শর্ত মেনে নাট্যকারের সংলাপ রচনার স্বাধীনতা রয়েছে। তা নিয়ে মতের মিল নাও হতে পারে। সে জন্য হেনস্থা করা, ক্ষমা চাওয়ানো নিন্দনীয়। সকলেরই বাক স্বাধীনতা রয়েছে।
সুতপা সাহা,
দিনহাটা-কাণ্ডের প্রতিবাদে বুধবার রায়গঞ্জে পথসভা করে ধিক্কার মিছিল করেন স্থানীয় নাট্যকর্মীরা। এ দিন বিকেলে শহরের ছ’টি নাট্য সংস্থার প্রায় ১০০ জন নাট্যকর্মী শহরের বিভিন্ন এলাকায় পথসভা করে নাট্যকারকে হেনস্থার ঘটনার নিন্দা করেন। এরপর তাঁদের প্রতিবাদ মিছিল শহরের বিভিন্ন এলাকা পরিক্রমা করে শেষ হয়। ‘ছন্দম’ নাট্য সংস্থার সম্পাদক স্বপন বসু বলেন, “পুলিশ, প্রশাসন ও তৃণমূল নেতারা যে ভাবে নাট্যকার বেণু চট্টোপাধ্যায়কে হেনস্থা করেছেন, তা কোনওমতেই মেনে নেওয়া যাচ্ছে না। কোনও ভুল না করেও বেণুবাবুকে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করানো হয়। বাংলার নাট্য সংস্কৃতির ওপর এই আঘাতের প্রতিবাদে নাট্যকর্মীরা রাস্তায় নেমে ধিক্কার জানাতে বাধ্য হলেন। ভবিষ্যতে এরকম ঘটনা এড়াতে ও নাট্যশিল্পকে বাঁচাতে অভিযুক্তদের কড়া শাস্তি হওয়া উচিত।” এ দিন শিলিগুড়িতেও ধিক্কার মিছিল করেন নাট্য কর্মীরা।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.