প্রতিযোগিতার মুখে পড়তেই উলটপুরাণ!
খদ্দেরদের ‘এমআরপি’-র উপরে ছাড় দেওয়ার যে রেওয়াজে দাঁড়ি টেনেছিল ওষুধের দোকানগুলো, সরকারি হাসপাতালে ‘ফেয়ার প্রাইস শপ’-এর সঙ্গে পাল্লা টানতে আবার তাতেই ফিরে এল তারা। পশ্চিমবঙ্গে বেসরকারি ফার্মাসির বৃহত্তম সংগঠন ‘বেঙ্গল কেমিস্টস অ্যান্ড ড্রাগিস্টস অ্যাসোসিয়েশন (বিসিডিএ) জানিয়েছে, ফেয়ার প্রাইস শপে জেনেরিক নামের যে সব ওষুধ কম দামে পাওয়া যায়, সেগুলো তারাও সস্তায় বেচবে।
অথচ মাস আটেক আগে এই বিসিডিএ-ই ঘোষণা করেছিল, তাদের সংগঠনভুক্ত কোনও দোকানে ওষুধ-মূল্যে কোনও ছাড় মিলবে না। এমনকী, ‘ফরমান’ অমান্য করলে সংশ্লিষ্ট ফার্মাসি’কে একঘরে করার হুমকিও দেওয়া হয়েছিল। বহু দোকান-মালিক তখন আক্ষেপ করে বলেছিলেন, তাঁরা ছাড় দিতে চাইলেও সংগঠনের চাপের কাছে নিরূপায়। কিন্তু হাসপাতাল চত্বরে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপে ‘ফেয়ার প্রাইস শপ’ চালু হতেই সুর নরম করেছে বিসিডিএ। স্থির হয়েছে, তাদের আওতাভুক্ত রাজ্যের প্রায় ২৫ হাজার ফার্মাসিতে এ বার ১৪২টি জেনারিক ওষুধে ২০%-৭০% ছাড় পাওয়া যাবে। উত্তরবঙ্গে ইতিমধ্যে তা দেওয়া শুরু হয়েছে। তবে ‘ব্র্যান্ডেড’ ওষুধে এখনই ছাড় মিলছে না। |
কিন্তু আচমকা উল্টো সিদ্ধান্ত কেন? চড়া দামে ওষুধ কিনতে গিয়ে সাধারণ মানুষ সর্বস্বান্ত হচ্ছে দেখে কি বিসিডিএ হঠাৎ সহানুভূতিশীল হয়ে পড়ল? ওষুধ-ব্যবসায়ী মহলের একাংশের দাবি, প্রতিযোগিতার বাজারে অস্তিত্বরক্ষার তাগিদেই এই মতবদল। এই মহলের মতে, ফেয়ার প্রাইস শপে সস্তায় জেনেরিক ওষুধ বিক্রি শুরু হওয়ায় পরে বেসরকারি ফার্মাসিতে বিক্রি কমছে। বিসিডিএ-র সাধারণ সম্পাদক তুষার চক্রবর্তীও বলছেন, “আমরা তো ব্যবসা করে খাই! কেউ ঠেসে-ঠুসে মারার চেষ্টা করলে বাঁচার জন্য যা করতে হয়, সেই সমঝোতা-ই করতে হচ্ছে।”
অর্থাৎ, পিপিপি মডেলের দোকানের সঙ্গে প্রতিযোগিতার মুখে পড়েই যে পিছু হঠার সিদ্ধান্ত, সংগ তা মানছে। যাকে সরকারি নীতির ‘জয়’ হিসেবে দেখছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। কী বলছে তারা? দফতরের দাবি: দাম কমানোর এই টক্করে আমজনতাই লাভবান হবে। স্বাস্থ্য দফতরের বিশেষ সচিব প্রবীর লাহিড়ির কথায়, “ফেয়ার প্রাইস শপ খোলার উদ্দেশ্য ছিল মানুষকে একটু সাহায্য করা। বেসরকারি দোকানগুলো অতিরিক্ত মুনাফার লোভে ছাড় ব্যাপারটাই তুলে দিয়েছিল। যা ইচ্ছে দাম নিচ্ছিল। উপরন্তু বিস্তর চেষ্টা করেও ওদের দিয়ে জেনেরিক ওষুধ বিক্রি করাতে পারিনি। এ বার এক ঢিলে দুই পাখি মারা গিয়েছে।” তিনি জানান, পিপিপি-তে কোথাও ওষুধের দামে ৪৮%, কোথাও ৬৭% ছাড় দেওয়া হচ্ছে। জেনেরিক, ব্র্যান্ডেড সব ওষুধ অনেক কম দামে পাওয়া যাচ্ছে। “এতে হাসপাতালের আশপাশে ওষুধের দোকানে ব্যবসা মার খেয়েছে। এখন তাই টনক নড়েছে। ওরাও জেনেরিক ওষুধ রাখছে, দামে ছাড়ও দিচ্ছে।” মন্তব্য প্রবীরবাবুর।
সরকারি-সূত্রে খবর: স্বাস্থ্য দফতর আপাতত ছ’টি ফেয়ার প্রাইস শপ চালু করেছে। প্রতিটিতে দৈনিক বিক্রির অঙ্ক তিরিশ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকা। |