হলদিয়া মেডিক্যাল কলেজ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টেও প্রতিকূলতার মুখে পড়ল রাজ্য সরকার।
বুধবার সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি আলতামাস কবীরের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দিয়েছে, অবিলম্বে কলেজের প্রথম বর্ষের প্রথম সেমেস্টারের পরীক্ষার ফল প্রকাশ করতে হবে। যাঁরা ওই পরীক্ষায় কোনও বিষয়ে ন্যূনতম যোগ্যতামানের কম নম্বর পেয়েছেন, দ্বিতীয় সেমেস্টারের সঙ্গে তাঁদের সেই সব বিষয়ে সাপ্লিমেন্টারি পরীক্ষা নিতে হবে। আদালতের নির্দেশ, কলেজে পঠন-পাঠনও অব্যাহত রাখতে হবে।
পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক পালাবদলের পরে হলদিয়ায় ‘আই কেয়ার’ মেডিক্যাল কলেজের অনুমোদন বাতিলের লক্ষ্যে তৎপর হয়ে উঠেছিল নতুন শাসকদল। তার সরকারি অনুমোদন বাতিল করা হয়, মেডিক্যাল কাউন্সিল এবং রাজ্য স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ও পর্যায়ক্রমে অনুমোদন খারিজ করে। এই পরিস্থিতিতে পড়ুয়ারা যাতে প্রথম সেমেস্টার দিতে পারেন, সেই আর্জি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন কলেজ-কর্তৃপক্ষ। সুপ্রিম কোর্ট তাঁদের পক্ষেই রায় দেয়। তবে সর্বোচ্চ আদালত তখন এ-ও জানিয়েছিল, পরীক্ষার ফলাফল সিল করে রেখে দিতে হবে। কলকাতা হাইকোর্ট অনুমতি দিলেই তা প্রকাশ করা যাবে।
কিন্তু কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অনিরুদ্ধ বসু ফল প্রকাশের বিরুদ্ধে রায় দেন। তাই পরীক্ষা দিয়েও ফল জানতে পারছিলেন না হলদিয়া মেডিক্যালের ছাত্রছাত্রীরা। পরবর্তী সেমেস্টারের পড়াশোনাও শুরু করা যাচ্ছিল না। অচলাবস্থার অবসান চেয়ে বিচারপতি বসুর নির্দেশ চ্যালেঞ্জ করে ছাত্রছাত্রীরা সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। সেই মামলায় এ দিন সুপ্রিম কোর্টের তিন সদস্যের ডিভিশন বেঞ্চ হলদিয়া মেডিক্যাল নিয়ে রাজ্য সরকারের কাজকর্মের সমালোচনা করে তাদের রায় ঘোষণা করেছে। শুনে রাজ্য সরকার কী বলছে?
রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “পরীক্ষার পরেই ফল প্রস্তুত করে রেখেছে স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়। আদালতের নির্দেশে ফল প্রকাশ স্থগিত ছিল। এ বার আদালত যদি বলে, তা হলে ফল প্রকাশ করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক মিনিটও লাগবে না। দেরির জন্য আমাদের তো কোনও দোষ নেই!”
কলেজ-কর্তৃপক্ষের কী বক্তব্য?
হলদিয়ার মেডিক্যাল কলেজটি পরিচালনা করে যারা, ‘আই কেয়ার’ নামে সেই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার চেয়ারম্যান তথা প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ লক্ষ্মণ শেঠের প্রতিক্রিয়া, “বিচার ব্যবস্থার প্রতি আমার আস্থা রয়েছে। এই রায় প্রত্যাশিতই ছিল। আশা করা যায়, রাজ্য সরকার এটা মেনে নেবে। পড়ুয়াদের ভবিষ্যতের কথা ভেবেই কলেজটি তৈরি হয়েছে।” আর আইনের জটিলতায় যাঁদের পরীক্ষার ফল ও পরবর্তী ধাপের পঠন-পাঠন আটকে ছিল, শীর্ষ আদালতের নির্দেশে তাঁরাও স্বস্তিতে। তবে অস্বস্তির একটা কাঁটাও বিঁধে আছে তাঁদের মনে। প্রথম বর্ষের এক ছাত্র এ দিন বলেন, “কলকাতা হাইকোর্টে আর একটা মামলা নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে। তার কী হবে, সে ব্যাপারে দুশ্চিন্তা থেকেই যাচ্ছে।”
কী সেই মামলা?
সেটা হলদিয়ার মেডিক্যালের অনুমোদন বিষয়ক আপিল-মামলা। আই কেয়ারের তরফের কৌঁসুলি সুব্রত মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, কলেজের অনুমোদন বাতিল সংক্রান্ত রাজ্য সরকারের বিজ্ঞপ্তিটি মাস কয়েক আগে খারিজ করে দিয়েছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি গিরিশ গুপ্ত। “এমনিতেই এ রাজ্যে চিকিৎসকের অভাব। পঞ্চাশ কিলোমিটার দূরে গিয়েও কোথাও-কোথাও এক জন ডাক্তার মেলে না। এ অবস্থায় একটা চালু মেডিক্যাল কলেজ বন্ধ করে দেওয়ার মতো বিলাসিতা দেখানো এ রাজ্যে সাজে না।’’ মন্তব্য করেছিলেন বিচারপতি গুপ্ত। ওই কলেজে পড়াশোনা অব্যাহত রাখার ব্যবস্থা করতে কর্তৃপক্ষকে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশও দিয়েছিলেন তিনি। এবং তাঁর সেই রায় চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চে আপিল মামলা ঠুকেছে রাজ্য সরকার, যার নিষ্পত্তি এখনও হয়নি।
তবে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পরে ডিভিশন বেঞ্চে আপিল-মামলাটির আর গুরুত্ব রইল না বলে মনে করছেন আইনজীবীদের একাংশ। |