তৃণমূল জমানায় গড়ে ওঠা রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলের অস্থায়ী (অ্যাডহক) কমিটি আর রাখা যাবে না বলে জানিয়ে দিল কলকাতা হাইকোর্ট।
পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পরে আগেকার রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিল ভেঙে দিয়েছিল তৃণমূল সরকার। কিন্তু নির্বাচন হয়নি। সরকার ঘনিষ্ঠদের নিয়ে অস্থায়ী ভিত্তিতে নয়া কমিটি গড়া হয়। তাতে ঠাঁই পান শাসকদলের বিধায়কেরাও। এর বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্টে জনস্বার্থ-মামলা করেছিল রোগী ও তাঁদের পরিজনদের সংগঠন ‘পিপল্স ফর বেটার ট্রিটমেন্ট’ (পিবিটি)। তাদের অভিযোগ: অগণতান্ত্রিক ভাবে অস্থায়ী কমিটি তৈরি হয়েছে। কমিটির বৈধতা ও তার কাজ নিয়ে মামলায় প্রশ্ন তুলেছে পিবিটি।
বুধবার সেই মামলারই রায় দিল হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি অরুণ মিশ্র ও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচির ডিভিশন বেঞ্চ। বেঞ্চের নির্দেশ: ছ’মাসের মধ্যে রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলের নির্বাচন করতে হবে, যার প্রস্তুতি শুরু করা চাই দেড় মাসের মধ্যে। আর ওই নির্বাচন পরিচালনার সব খরচ বহন করতে হবে রাজ্য সরকারকেই। মেডিক্যাল কাউন্সিলের নির্বাচিত কমিটির মেয়াদ পেরিয়ে গিয়েছে দু’বছর হল। তা সত্ত্বেও নির্বাচন না-হওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করেছে ডিভিশন বেঞ্চ।
এ দিন মামলার শুনানিতে আবেদনকারী সংগঠনের তরফে কুণাল সাহা বলেন, অ্যাডহক কমিটির সদস্যের অধিকাংশই শাসকদলের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। গাফিলতির দায়ে পড়া চিকিৎসকদের একাংশকে আড়াল করতেই কাউন্সিলের নির্বাচন হচ্ছে না বলে তাঁর অভিযোগ। অন্য দিকে কাউন্সিল এবং রাজ্য সরকারের পক্ষের কৌঁসুলি জয়দীপ কর ও প্রদীপ দত্ত আদালতকে জানান, অ্যাডহক কমিটি নির্বাচন করতে দায়বদ্ধ। তার কাজও শুরু হয়ে গিয়েছে বলে ওঁদের দাবি।
এই বক্তব্যে অবশ্য বিচারপতিরা সন্তুষ্ট হতে পারেননি। ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দেয়, প্রায় এক বছর আগে অ্যাডহক কমিটি কাউন্সিলের দায়িত্ব নিলেও এখনও নির্বাচন হয়নি, প্রস্তুতিও সে ভাবে শুরু হয়নি। আদালতের মতে, নির্বাচিত কমিটি ছাড়া কোনও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না। তাই অ্যাডহক কমিটিকে ছ’মাসের মধ্যে নির্বাচন করে নতুন কমিটির হাতে কাউন্সিলের দায়িত্বভার তুলে দিতে বলেছে বেঞ্চ। উল্লেখ্য, ১৯১৪-র বেঙ্গল মেডিক্যাল অ্যাক্ট মোতাবেক, কাউন্সিলের মেয়াদ পাঁচ বছর। তার মধ্যে নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গড়তে হবে।
সরকারি সূত্রের খবর: বিগত কাউন্সিলের নির্বাচিত কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছিল ২০১০-এর ১০ এপ্রিল, অর্থাৎ বাম আমলে। তদানীন্তন সরকারও তখন নির্বাচন করে নতুন কমিটি তৈরির পথে হাঁটেনি। একই কমিটি কাজ চালিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পরে অর্ডিন্যান্স জারি করে একটি অ্যাডহক কমিটি বানিয়ে দেয়। সময়টা ২০১২-র ১৩ ফেব্রুয়ারি। কমিটির সদস্য হন তিন জন ত্রিদিব বন্দ্যোপাধ্যায়, নির্মল মাজি ও সুদীপ্ত রায়। শেষের দু’জন তৃণমূল বিধায়কও। ওঁরা কমিটির আট সদস্যকে মনোনীত করেন। ১৩ সদস্যের কমিটিতে বাকি দু’টি পদ সরকারি আধিকারিকের।
হাইকোর্টের রায় শুনে কমিটি কী বলছে? কাউন্সিলের বর্তমান সভাপতি ত্রিদিববাবু বলেন, “নির্দেশের প্রতিলিপি না-দেখে মন্তব্য করব না। তবে বর্তমান কমিটি গড়ার সময়েই বলা হয়েছিল, তিন বছরের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। সুতরাং আজ হোক বা কাল, নির্বাচন হবেই।” সুদীপ্তবাবুর প্রতিক্রিয়া, “আমরা সব সময়ে চাই, এই ধরনের কমিটি গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে তৈরি হোক। আদালতের নির্দেশকে তাই স্বাগত জানাচ্ছি।” রাজ্য কাউন্সিলের প্রাক্তন সদস্য সুবীর গঙ্গোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “হাইকোর্টের নির্দেশে যদি নির্বাচিত প্রতিনিধিরা আসার সুযোগ পান, সেটা সকলের পক্ষেই মঙ্গল।”
মেডিক্যাল কাউন্সিলের সর্বভারতীয় কমিটিও চলছে অস্থায়ী ভাবে। কেন্দ্রীয় সংস্থার নির্বাচন কবে হবে, এখন সেই প্রশ্ন তুলেছেন সুবীরবাবুরা। |