নর্দমার মধ্যে অচেতন হয়ে প্রায় বিবস্ত্র অবস্থায় পড়ে থাকা এক আদিবাসী তরুণীকে উদ্ধার করলেন এলাকার বাসিন্দারা। বুধবার ভোরে শিলিগুড়ির চম্পাসারি গ্রাম পঞ্চায়েতের কলাবাড়ি এলাকা থেকে তাঁকে উদ্ধার করা হয়। রাতে পরিবারের তরফে পুলিশে ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করা হয়। যে এলাকায় থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়েছে সেখান থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে কড়াইবাড়ি এলাকায় তাঁর বাড়ি। বর্তমানে ওই অপ্রকৃতিস্থ তরুণী উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর ঠোঁটে ও পায়ে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্রে খবর। শিলিগুড়ির ডেপুটি পুলিশ কমিশনার ও জি পাল বলেন, “অভিযোগ পেয়েছি। মামলা রুজু হয়েছে। তদন্ত শুরু হয়েছে। তরুণীর ডাক্তারি পরীক্ষা করানো হয়েছে।”
এ দিন স্থানীয় মহিলারা তাঁকে উদ্ধার করে পোশাক পরিয়ে স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য রাজু বাসনেটকে খবর দেন। তাঁর বাড়ির কাছেই ঘটনাটি ঘটেছে। রাজুবাবু গিয়ে পুলিশকে খবর দেন। বেলা ৯টা নাগাদ পুলিশ তরুণীর পরিবারকে খবর দিয়ে তাঁকে প্রথমে শিশুডাঙি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এবং সেখান থেকে শিলিগুড়ি হাসপাতালে নিয়ে যান। এর পর উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে তাঁর ডাক্তারি পরীক্ষা করানো হয়।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই তরুণী মানসিক ভারসাম্যহীন। ভাল করে কথাও বলতে পারছে না। তবে সে যে বোবা তা নয়। তরুণীর বাবা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা থেকেই তাঁর খোঁজ মিলছিল না। অনেক সময়ই সে বাড়ি থেকে বেরিয়ে বিভিন্ন জায়গায় যায়। তবে এক দেড় ঘণ্টার মধ্যে ফিরে আসে। এ দিন রাত বাড়লেও না ফেরায় নানা জায়গায় পরিবারের লোকেরা খোঁজ শুরু করেন। কিন্তু পাননি। ভোর থেকেই ফের খোঁজ শুরু হয়। পরে পুলিশের তরফে তাঁদের পরিবারকে খবর দেওয়া হয় মেয়েকে নর্দমায় পড়ে থাকা অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে বলে। তরুণীর বাবার দাবি, “মেয়ের উপর কেউ বা কারা অত্যাচার চালিয়েছে।”
স্থানীয় বাসিন্দাদের কথার সঙ্গে পুলিশের বক্তব্যের কিছুটা অসঙ্গতি রয়েছে। ওই তরুণী যে নর্দমায় প্রায় নগ্ন অবস্থায় পড়ে ছিল তা পুলিশ জানে না বলেই দাবি করেছে। অথচ স্থানীয় বাসিন্দারাই জানিয়েছেন, নর্দমায় পড়ে থাকা অবস্থায় তরুণীর নিম্নাঙ্গে অন্তর্বাস ছাড়া শরীরে কিছু-ই ছিল না। গ্রামের মহিলারা বাড়ি থেকে কাপড় এনে তাঁকে পরিয়ে দিয়েছেন। কলাবাড়ির পঞ্চায়েত সদস্য রাজু বাসনেট বলেন,“এলাকার বাসিন্দারা আমাকে জানান, এক তরুণী প্রায় নগ্ন অবস্থায় নর্দমায় পড়ে রয়েছে। গিয়ে দেখি মহিলারা তাঁকে উদ্ধার করে পোশাক পরিয়ে দিয়েছেন। জল খেতে দিয়েছেন। এর পর তিনি পুলিশকে বিষয়টি জানান। হাসপাতাল সূত্রে খবর, তরুণীর পায়ে এবং ঠোটে ছড়ে যাওয়ার মতো চিহ্ন রয়েছে। প্রকৃত ঘটনা আড়াল করার চেষ্টা হচ্ছে কি না তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে সিপিএমের মহিলা সমিতি। শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটে গিয়ে তারা ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করে। তরুণীর বাবা এক সময় সিপিএমের সমথর্র্ক ছিলেন। এ দিন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তরুণীকে দেখতে যান সিটুর দার্জিলিং জেলা সভাপতি তথা রাজ্যসভার প্রাক্তন সাংসদ সমন পাঠক। তিনি বলেন, “পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেছি। তরুণীর ডাক্তারি পরীক্ষা করানো হয়েছে। তাঁকে ধর্ষণ করা হয়েছে বলেই মনে হচ্ছে।” |