পৃথক গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে ফের ‘হুমকি’র পথে মোর্চা
‘তেলেঙ্গানা’ পৃথক রাজ্যের স্বীকৃতি পেতে পারে, এমন দক্ষিণী-বার্তা সামনে রেখে ফের তাতছে দার্জিলিং পাহাড়।
বুধবার মোর্চা সভাপতি বিমল গুরুঙ্গের নির্দেশে দলের সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি ২০ জানুয়ারি থেকে পৃথক গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে লাগাতার আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। তাঁর কথায়, “এটা হুমকি নয়। বাস্তবে এমনই করা হবে। যত দূর শুনেছি, ২৯ জানুয়ারি তেলেঙ্গানা নিয়ে কেন্দ্র নির্ণায়ক সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে। তা হলে আমাদের শতবর্ষের পুরনো গোর্খাল্যান্ডের দাবি মানা হবে না কেন? তাই আন্দোলনের সিদ্ধান্ত।”
তবে গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (জিটিএ) গঠনের সুবাদে পাহাড়ের প্রশাসন এখন মোর্চার হাতে। তাই প্রথমেই বন্ধ, অবরোধ, অনশন কিংবা বিল ও রাজস্ব বয়কটের রাস্তায় হাঁটার কথা ভাবছে না মোর্চা। স্থির হয়েছে, ২০ জানুয়ারি দার্জিলিঙে সভা-বিক্ষোভ ও মিছিল হবে। ২৭ জানুয়ারি কার্শিয়াঙে মহাসভা ও মহামিছিল হবে। ২৮ জানুয়ারি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শিলিগুড়িতে উত্তরবঙ্গ উৎসবে যোগ দিতে যাওয়ার কথা। সব ঠিক থাকলে মুখ্যমন্ত্রী দার্জিলিঙেও যেতে পারেন বলে তৃণমূল সূত্রের খবর। তাঁর সফরের প্রাক্কালে আলাদা রাজ্যের দাবিতে পাহাড় ফের তেতে উঠলে মুখ্যমন্ত্রীর পক্ষে তা কিছুটা হলেও অস্বস্তির ব্যাপার হবে বলে পুলিশ-প্রশাসনের অনেকেই মনে করছেন।
মোর্চার আন্দোলনের ঘোষণা নিয়ে এ দিন সরকারকে কটাক্ষ করেন বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র। তাঁর কথায়, “এ রকম যে হতে পারে, তা আমরা আগেই বলেছিলাম। জিটিএ-চুক্তির সময়েও তাতে গোর্খাল্যান্ডের বিষয়টি থাকা নিয়ে বিধানসভাতে আপত্তি জানিয়েছিলাম। ওঁরা (সরকার পক্ষ) শোনেননি। এমনকী, সম্প্রতি পাহাড়ে জিটিএ-র নির্বাচনেও তৃণমূল প্রার্থী দিতে পারেনি। ফ্রাঙ্কেনস্টাইন নিয়ে রাজনীতি করতে গেলে পরিণতি এটাই হওয়ার কথা।”
শিলিগুড়িতে সাংবাদিক বৈঠকে রোশন গিরি। —নিজস্ব চিত্র
এই অবস্থায় ‘পাহাড় হাসছে’ ভেবে চুপ করে থাকলে যে চলবে না, সে কথা বিলক্ষণ জানেন স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। ফলে, তাঁরা মোর্চা নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছেন। খোঁজখবর নিচ্ছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেবও। মন্ত্রী বলেন, “মোর্চা নেতাদের সঙ্গে আমার যোগাযোগ দীর্ঘ দিনের। আলাপ-আলোচনা হবে। জঙ্গলমহলের মতো পাহাড়ও বর্তমানে শান্তি, উন্নয়ন ও প্রগতির পথে হাঁটছে। আমাদের আশা, এই ধারা অব্যাহত থাকবে।” প্রশাসন সূত্রের খবর, যেখানে জিটিএ-র হাতে রাজ্য সরকারের বেশ কিছু দফতরের দায়িত্বভার হস্তান্তর নিয়ে আলোচনা চলছে, সেখানে হঠাৎ মোর্চার এই ঘোষণায় কিছুটা বিস্মিত রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ কর্তারাও। রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরের তরফে এ ব্যাপারে দার্জিলিং জেলা প্রশাসনের কাছে বিশদে রিপোর্ট তলব করা হয়েছে।
গোর্খা পার্বত্য পরিষদ গঠনের পরে টানা ২০ বছর পাহাড়ের কর্তৃত্বে ছিলেন জিএনএলএফের শীর্ষ নেতা সুবাস ঘিসিং। তিনি গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে পরে কোনও আন্দোলনে যাননি। স্বজনপোষণ, আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগে জর্জরিত, জিএনএলএফের বিরুদ্ধে জনতার ক্ষোভকে কাজে লাগিয়ে পাহাড়ে মোর্চার কর্তৃত্ব কায়েম করেন গুরুঙ্গ। ২০১১ সালের ১৮ জুলাই গঠিত হয় জিটিএ। কিন্তু ঘটনা হল, মোর্চার কিছু নেতা-কর্মীর ভূমিকায় এখন পাহাড়ের নানা মহলে ক্ষোভের পারদ চড়ছে। মোর্চা সূত্রের দাবি, তাদের কাছে খবর, মোর্চা-বিরোধী হাওয়া নিজেদের পালে টানতে আসরে নেমে পড়েছে একাধিক বিরোধী দল। জিটিএ নয়, গোর্খাল্যান্ড চাই বলে পোস্টারও দেওয়া হয়েছে। বিরোধীরা তলে-তলে তেলেঙ্গানা তথা আলাদা গোর্খাল্যান্ডের প্রসঙ্গ তুলে আন্দোলনের প্রস্তুতিও নিচ্ছে।
তেলেঙ্গানা আলাদা রাজ্য হলে আন্দোলনে নামা ছাড়া তাঁদের উপায় থাকবে না বলে নয়াদিল্লিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীলকুমার শিন্দের সঙ্গে দেখা করে সম্প্রতি জানিয়েছেন মোর্চা নেতৃত্ব। পাহাড়ে বিরোধীদের এককাট্টা হওয়ার খবর আসতে থাকায় সোম ও মঙ্গলবার দু’দফায় বৈঠক করেন তাঁরা। ঠিক যে সব কারণে ঘিসিংকে ‘বিশ্বাসঘাতক’ বলে সমালোচনা সহ্য করতে হয়েছে, তার পুনরাবৃত্তি কিছু মোর্চা নেতার ক্ষেত্রেও হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন দলের একাংশ। আলোচনার পরে মোর্চা সভাপতি জানিয়ে দেন, গোর্খাল্যান্ড নিয়ে পাহাড়ের মানুষের ভাবাবেগ যাতে কোনও মতেই অন্য কোনও দলের দিকে ঝুঁকে না পড়ে, তা নিশ্চিত করতে হবে। মোর্চার কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্য বলেন, “সেই প্রেক্ষিতে কেন্দ্র ও রাজ্যের উপরে চাপ বাড়িয়ে এক ঢিলে দু’পাখি মারার কথা ভাবা হয়। প্রথমত, মোর্চা আন্দোলনে নামলে পাহাড়ের বিরোধী দলগুলি আলাদা রাজ্যের দাবিতে পালে তেমন বাতাস টানতে পারবে না। দ্বিতীয়ত, আন্দোলনের দৌলতে জিটিএ-র পক্ষেও কেন্দ্র এবং রাজ্যের থেকে বাড়তি কিছু সুবিধা দ্রুত আদায় করার পথও মসৃণ হবে।” মোর্চার এই ‘অবস্থান’কে বিঁধতে ছাড়েনি পাহাড়ে তাদের বিরোধীরা। অখিল ভারতীয় গোর্খা লিগের সাধারণ সম্পাদক প্রতাপ খাতির মন্তব্য, “গোর্খাল্যান্ডের নাম করে জিটিএ গড়ে পাহাড়ের মানুষের বিশ্বাসভঙ্গ করেছে মোর্চা। এখন আন্দোলনের ঘোষণা করে চরম রাজনৈতিক সুবিধাবাদের দৃষ্টান্ত রাখছে।” সিপিআরএমের কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অরুণ ঘাটানির বক্তব্য, “মোর্চা যদি জিটিএ ছেড়ে আন্দোলনে নামে, তবে ওদের কথা বিশ্বাস করব।” আর দার্জিলিং জেলা সিপিএমের তরফে প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য বলেন, “তৃণমূল নেতা-নেত্রীদের সঙ্গে যোগাযোগ ও বোঝাপড়ার ভিত্তিতে মোর্চা চলে। কাজেই এখনই উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। দেখা যাক, কী হয়।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.