|
|
|
|
এ বার মমতাকে হুঁশিয়ারি পীরজাদার |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
এক দিকে তাঁর সংখ্যালঘু-নীতির বিরুদ্ধে সরব বামেরা। সেই নীতিরই ফায়দা নিতে সক্রিয় বিজেপি। অন্য দিকে, প্রতিশ্রুতি আর বাস্তবের মধ্যে ফারাক বাড়তে থাকায় ক্ষুব্ধ সংখ্যালঘুরাও। সেই তালিকায় ঢুকল ফুরফুরা শরিফের পীরজাদা ত্বহা সিদ্দিকির নাম! অবাস্তব প্রতিশ্রুতি বন্ধ না করলে এবং ভুল শুধরে না নিলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার পাঁচ বছরের বেশি টিকবে না বলে হুঁশিয়ারি দিলেন ত্বহা, সংখ্যালঘুদের মধ্যে বাম-বিরোধী ভাবাবেগ তৈরি করতে যিনি কয়েক বছর ধরে তৃণমূল নেত্রীর পাশেই।
প্রতিশ্রুতি পূরণে রাজ্যের ব্যর্থতার অভিযোগের পাশাপাশিই ত্বহার সমর্থকদের ক্ষোভ বাড়িয়েছে বুধবার শহরে পুলিশের আচরণ। ফুরফুরা দরবার শরিফের একটি অনাথ ফাউন্ডেশন ও মাদ্রাসা ছাত্র ফেডারেশন আয়োজিত রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে এ দিনের সমাবেশে যোগ দিতে হুগলি জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ট্রেনে হাওড়ায় নেমে মিছিল করে আসছিলেন শ’তিনেক সমর্থক। তাঁদের অভিযোগ, হাইকোর্টের কাছে পুলিশ পথ আটকে তাঁদের ফিরে যেতে বলে। এই নিয়ে বচসার পরে রাজভবন সংলগ্ন একটি গলিতে ঢুকিয়ে পুলিশ তাঁদের উপরে এলোপাথাড়ি লাঠি চালায় বলে অভিযোগ। আহতদের মধ্যে হাফেজ আবুল কাশেম ও শেখ মোশারফ হোসেন নামে দুই প্রতিবন্ধীও আছেন। জনা দশেক আহত সমর্থককে সমাবেশ-মঞ্চের পিছনে ছাউনিতে এনে প্রাথমিক শুশ্রূষা করা হয়।
সারা বাংলা ইমাম ও মোয়াজ্জিন সমিতির সভাপতি এ টি এম রফিকুল হাসানের ক্ষোভ, “যাদের ভোট নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন, তাদেরই উপরে এখন পুলিশ দিয়ে নির্লজ্জ ভাবে হামলা করছেন!” পুলিশ অবশ্য লাঠি চালানোর অভিযোগ অস্বীকার করেছে। যুগ্ম কমিশনার জাভেদ শামিমের বক্তব্য, “১৪৪ ধারা ভেঙে কয়েকটা মিছিল ঢুকে পড়ার চেষ্টা করেছিল। তখন পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয়। লাঠি চালনার ঘটনা ঘটেনি।” |
|
জনসভায় ফুরফুরা শরিফের পীরজাদা ত্বহা সিদ্দিকি। বুধবার। —নিজস্ব চিত্র |
পুলিশ ও সংখ্যালঘু দফতরের মন্ত্রী মমতাকে এ দিন অবশ্য ছেড়ে কথা বলেননি ত্বহা। তাঁর বক্তব্য, “এই সরকারকে ফেলে দেওয়ার জন্য এখানে আসিনি। বামফ্রন্ট আমাদের পিছিয়ে দিয়েছিল। জানি, ৩৪ বছরের খিদে ১৮ মাসে মিটবে না। কিন্তু সংখ্যালঘুদের জন্য ৯৯% কাজ হয়ে গিয়েছে, এই অবাস্তব, মিথ্যা কথা বলবেন না! সময় চেয়েছেন, সময় নিন! কিন্তু ফুসকুড়ি না সারালে ফোঁড়ার আকার নেবে এক দিন!” তাঁদের সমাবেশের অন্যতম দাবিই ছিল শিক্ষা ও চাকরিতে সংখ্যালঘুদের জন্য ২০% সংরক্ষণ। ত্বহার অভিযোগ, এক শ্রেণির আমলার জন্য পুলিশে নিয়োগে মুসলিমদের সুযোগ মিলছে না। ইমাম, মোয়াজ্জিনদের ভাতা অনিয়মিত এবং তা আদায় করতে গিয়ে হয়রানির মুখে পড়তে হচ্ছে। ডানকুনি-ফুরফুরা শরিফ রেল রেলমন্ত্রী মমতা শিলান্যাস করার পরে দীনেশ ত্রিবেদী ও মুকুল রায় দ্রুত কাজ শেষ করার প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু এক কিলোমিটারও কাজ এগোয়নি!
ত্বহার হুঁশিয়ারির প্রেক্ষিতে সংখ্যালঘু দফতরের প্রতিমন্ত্রী গিয়াসউদ্দিন মোল্লার প্রতিক্রিয়া, “দুর্ভাগ্যজনক মন্তব্য! সংখ্যালঘুদের জন্য কোন কাজটা হচ্ছে না? শুধু এমএসকে, এসএসকে-টা আটকে আছে। রাজ্য সরকার সংখ্যালঘু উন্নয়নে খুবই সক্রিয়।”
ত্বহা সমাবেশে সাফ বলেছেন, “শুধু শিলান্যাস করে গেলে হবে না! ৫ বছর, ১০ বছর, চাইলে ৩৪ বছর থাকুন! কিন্তু ভুল শুধরে নিন। তৃণমূলের নেতারা মনে হচ্ছে নিজেরাই ঠিক করে নিয়েছেন, পাঁচ বছরের বেশি থাকবেন না! মনে রাখবেন, সিপিএমের ৩৪ বছরের শিকড় যদি তুলে ফেলা যায়, এঁদের জন্য ৫ বছরের বেশি লাগবে না!” আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূল, সিপিএম বা কংগ্রেস বিচার না-করে উন্নয়নের স্বার্থে কাজের লোকেদেরই সমর্থন করার ডাক দিয়েছেন ত্বহা। তবে মমতা ডাকলে তিনি আলোচনায় বসতে রাজি বলেও জানিয়েছেন।
ত্বহার হুমকিতে সিপিএম উৎফুল্ল না হলেও বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র এ দিন বলেছেন, “রাজভবনের কাছে ওঁদের উপরে লাঠি চালানোর অভিযোগ শুনেছি। ওঁরা কেউ লাল ঝান্ডা ধরেন না। তবু তৃণমূল সমর্থকদের কাছে জানতে চাইব, প্রতিবন্ধীদের উপরে লাঠি চালানো ওঁরাও কি সমর্থন করেন?” |
|
|
|
|
|