খেলার খবর: (হারিয়ে যাওয়া খেলা - পর্ব ৩২)
‘বৌ আনা আনি’
—ইসকা বিসকা কিসকা ডাক?
—হাম পিক পিক আমার ডাক।
—কে নিবিরে লতা আর কে নিবিরে পাতা?
—আয়রে আমার লতা।

কোনও আভিধানিক অর্থ থাক বা না থাক, বছর কুড়ি-পঁচিশ আগেও কচিকাঁচাদের মুখে শোনা যেত এমন মজাদার কথোপকথন! ওই সংলাপ আসলে ‘বৌ আনা আনি’ নামে একটি খেলার। বাচ্চারা যা খেলার সময় ছড়ার সুরে ওই কথাগুলি আওড়াত। কিন্তু এখন তার কোনও চর্চা নেই। বর্তমান প্রজন্মের অনেকে জানেও না। তাই গ্রাম বাংলার অন্য অনেক খেলার মতোই হারিয়ে যেতে বসেছে এটিও।
মূলত মেয়েদের খেলা হলেও ছেলেমেয়েরা একত্রেও এই খেলায় যোগ দিতে পারে। খেলার জন্য প্রয়োজন জোড় সংখ্যক খেলোয়াড়। কারণ, এই খেলায় সমান সংখ্যক খেলোয়াড় নিয়ে দু’টি পক্ষ বা দল তৈরি করতে হয়। একদল ‘বরপক্ষ’ হলে অন্যদের চিহ্নিত করা হয় ‘কনেপক্ষ’ হিসাবে।
বৌ আনা আনি খেলা।
সেই পক্ষ বা দল গঠনের নিয়মটিও বেশ মজার। প্রথমে আলোচনার মাধ্যমে দু’পক্ষের জন্যই নির্বাচিত করা হয় সমান উচ্চতা ও আকৃতির দু’ জন পৃথক দলপতি। এর পর একই ভাবে সম উচ্চতা ও আকৃতির আরও দু’জন খেলোয়াড় ‘গলা ধরাধরি’ করে গোপন জায়গায় গিয়ে ‘লতা-পাতা’, ‘থালা-বাটি’ বা ‘শিল-নোড়া’ জাতীয় ছদ্মনাম নিয়ে দলপতিদের সামনে ফিরে আসে। দু’ জনেই এক সঙ্গে দলপতিদের উদ্দেশে বলে, “ইসকা বিসকা কিসকা ডাক?’ উত্তরে পর্যায়ক্রমে এক এক জন দলপতি বলে ওঠে, “হাম পিক পিক আমার ডাক।’ তখন খেলোয়াড় দু’ জন নিজেদের ছদ্মনাম বলে। তা শোনার পর পালা করে দলপতিরা পছন্দ অনুযায়ী ছদ্মনামধারী খেলোয়াড়কে বেছে নেয়। এই ভাবে গঠিত হয় ‘বরপক্ষ’ ও ‘কনেপক্ষ’। টসের মাধ্যমে ঠিক হয় কারা কোন পক্ষ হবে বা দান নেবে।
প্রথমে মাটিতে দাগ কেটে তৈরি করা হয় ঘর। খেলার ভাষায় ওই ঘরটিই হল ‘বাপের বাড়ি’। ওই ঘরে বৌ হিসাবে রাখা হয় কোনও পুতুল বা ইট-পাথর। বাপের বাড়ি থেকে প্রায় ৩০-৩৫ ফুট দূরত্বে টানা হয় সরলরেখা। ‘শ্বশুরবাড়ি’র চৌকাঠ হিসাবে চিহ্নিত হয় ওই রেখা। ওই রেখার পিছনে দাঁড়িয়ে থাকে বরপক্ষের খেলোয়াড়েরা। বাপের বাড়ির চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে কনেপক্ষের খেলোয়াড়েরা।
নিয়ম হল, শ্বশুরবাড়ি থেকে এক জন করে খেলোয়াড় এক নিঃশ্বাসে ‘চান চু’ বা অন্য কোনও ডাক ধরে বৌকে বাপের বাড়ি থেকে উঠিয়ে আনার চেষ্টা করবে। আর তার ছোঁয়া বাঁচিয়ে কনেপক্ষের খেলোয়াড়েরা সন্তর্পণে তাকে লক্ষ করবে। বৌ নিয়ে ফেরার সময় যদি শ্বশুরপক্ষের খেলোয়াড় দম হারিয়ে ফেলে তা হলেই বিপত্তি। কনেপক্ষের কেউ ছুঁয়ে দিলেই তাকে ‘মরা’ হতে হয়। কিন্তু তাকে ছোঁয়ার
জন্য ওঁত পেতে থাকা কনেপক্ষের কোনও খেলোয়াড়কে যদি নিঃশ্বাস না ছেড়ে ডাকধারী ছুঁয়ে দিতে পারে, তা হলে উল্টে তাকেই মরা হতে হয়। ডাকধারী যদি নির্বিঘ্নে বৌ নিয়ে নিজেদের ঘরে ফিরতে পারে, তা হলে এক ‘চিক’ খেয়ে যায় বিপক্ষেরা। একই ভাবে শ্বশুরপক্ষের সকলে দান নেওয়ার পর সুযোগ পায় কনেপক্ষেরা। সে ক্ষেত্রে তারা তখন শ্বশুরপক্ষ ও অন্যেরা কনেপক্ষের ভূমিকা গ্রহণ করে। খেলা শেষে চিকের সংখ্যা অনুযায়ী বিজয়ী দল বা পক্ষ নির্বাচিত করা হয়। ছোটবেলায় ওই খেলায় মজে থাকতেন রামপুরহাটের বধূ ছায়া রায় বা ময়ূরেশ্বরের অজ্ঞনওয়াড়ি কর্মী রুকসানা বেগমরা। তাঁদের কথায়, “ওই খেলার জন্য প্রায় পাগলই ছিলাম! এখনও যেন কানে বাজে ‘ইসকা বিসকা কিসকা ডাক’।” এখনকার ছেলেমেয়েদের ওই খেলার প্রতি অনাগ্রহ দেখে হতাশ দু’জনেই।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.