সরকারি নির্দেশিকা আর বাস্তবের মধ্যে আশমান-জমিন ফারাক!
সরকারি নিয়ম অনুযায়ী কৃষি জমির উপরে চাষআবাদ ছাড়া অন্য কিছু করতে গেলে কৃষি দফতরের নো-অবজেকশন সার্টিফিকেট নেওয়া বাধ্যতামূলক। অন্য দিকে জমির শ্রেণী পরিবর্তন করতেও জরুরি ভূমি সংস্কার দফতরের অনুমতি। কিন্তু বাস্তব তো বলছে অন্য কথা।
নিয়ম কি কোথাও মানা হচ্ছে?
কৃষি জমির উপরে গজিয়ে ওঠা আদৌ কোন ইটভাটা এমন কোন এনওসি নিয়েছে বলে মনে করতে পারছেন না পোড় খাওয়া জেলা কৃষি দফতরের এক কর্তাই। নদিয়ার ভূমি সংস্কার দফতরের আর এক কর্তাও কার্যত মেনেই নিয়েছেন, ‘‘বেআইনি ইটভাটার দাপটে অনেক ক্ষেত্রে আমাদের অজান্তেই জমির শ্রেণী পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। এমনটা যাতে আর না হয় সে দিকে কড়া নজর রাখা হচ্ছে।’’ কিন্তু তা বাস্তবে কতটা ‘কড়া’ তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। রাস্তার ধারে টাঙানো বিভিন্ন থানার নাম লেখা সাইনবোর্ড আর সেই বোর্ডের নীচে অনেক সময় জ্বলজ্বল করে ‘সৌজন্যে অমুক ব্রিকফিল্ড’। নিন্দুকেরা অবশ্য বলে ওগুলো নাকি বেআইনি ইটভাটা! |
তেহট্ট মহকুমার সহকারি কৃষি অধিকর্তা গৌতম সেনগুপ্ত বলেন, “ইটভাটা থেকে নির্গত সালফার ডাই অক্সাইডের ফলে আম, কলার পাশাপাশি ভাটা লাগোয়া সব ধরণের ফসলেরই মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। আমের মুকুল যেমন পুড়ে যাচ্ছে তেমনি ফসলের বৃদ্ধিও ব্যাহত হচ্ছে। জমির উর্বরতা শক্তি থাকে মাটির ১৫ থেকে ৩০ সেমি গভীরে। ফলে জমি থেকে মাটি কেটে নেওয়ায় জমির চরিত্র পাল্টে যাওয়ার পাশাপাশি তার উর্বরতাও হারাচ্ছে।” গৌতমবাবু জানান, সবথেকে বড় কথা কৃষি জমির উপরে যে ভাবে ভাটার অত্যাচার বাড়ছে তাতে কৃষি জমির পরিমাণ হু হু করে কমছে।
জমির পাশাপাশি বিপন্ন হচ্ছে নদীও। নদিয়া কিংবা মুর্শিদাবাদের প্রায় সব নদীর পাড় থেকেই যেভাবে মাটি কাটা হচ্ছে তাতে উদ্বিগ্ন নদী বিশেষজ্ঞ কল্যাণ রুদ্রও। তিনি বলেন, ‘‘নদীর পাড় থেকে যে ভাবে মাটি কাটা হচ্ছে তাতে নদীর ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। বদলে যেতে পারে নদীর গতিপথ। যে কোন সময় নদীর পাড় ভাঙতে শুরু করবে। নদীর পাশের জমিগুলো উর্বরতা হারাবে বাড়বে বন্যার সম্ভবনাও।’’
কিন্তু তাতে কী? শীত পড়তেই নদীর পাড় থেকে মাটি কাটার ধুম পড়ে গিয়েছে। মেঠো রাস্তায় ধুলো উড়িয়ে ঝড়ের বেগে ভাটার দিকে পাড়ি দিচ্ছে একের পর এক মাটি বোঝাই ট্রাক্টর। অবস্থা এমনই দাঁড়িয়েছে যে ধুলোর দাপটে শিকেয় উঠছে রান্নাবান্নাও। রেজিনগরের মাঙ্গনপাড়ার চৌরাস্তা এলাকার বাসিন্দাদের কাছে তাই শীতকাল মানেই যেন আতঙ্ক। বছর কয়েক আগে ওই ধুলো- ঝড়ের প্রতিবাদে হেঁশেল ছেড়ে রাস্তায় নেমেছিলেন প্রত্যন্ত গ্রামের ওই আটপৌরে মহিলারা। আটকে রেখেছিলেন মাটি বোঝাই খান দশেক ট্রাক্টর। ছুটে এসেছিলেন প্রশাসনের কর্তারা। প্রশাসনের ‘কড়া’ নজর বলতে এটুকুই! |