তার বাবা দিনমজুর। মা পরিচারিকা। মাথার উপর ছাদ বলতে টালির চালা। মাটির মেঝে। দরমার দেওয়াল। ভূমিহীন ওই পরিবারের ঝুপড়িটিও রয়েছে রাস্তার পাশে নয়ানজুলি লাগোয়া সরকারি জমিতে। এ হেন পরিবারের সন্তানের মুখে দু’ বেলা ভরপেট ভাত যোগাড় হওয়ার ঘটনা অস্বাভাবিক বটে। তার চেয়েও অস্বাভাবিক বছর আটেকের ওই এক রত্তি ছেলেই কিনা রাজ্য ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় মুর্শিদাবাদ জেলার মকুটে পরাল তিন তিনটি বিভাগে চাম্পিয়নের শিরোপা। শিশুশিক্ষা কেন্দ্রের চতুর্থ শ্রেণির ওই শিশু মহরম শেখ। বাড়ি জিয়াগঞ্জ ব্লকের এলাহিগঞ্জে।
ব্লকের শিশুশিক্ষা কেন্দ্রগুলির অ্যাকাডেমিক সুপারভাইজার রাখি শর্মা বলেন, “ওই শিশুর সাফল্যে গর্বিত মুর্শিদাবাদ-জিয়াগঞ্জ ব্লকের শিশুশিক্ষা কেন্দ্রগুলির শিক্ষক-শিক্ষিকারা মঙ্গলবার পঞ্চায়েত সমিতির হলঘরে আনুষ্ঠানিক ভাবে সম্বর্ধনা দিয়েছেন।” ওই অনুষ্ঠানে মুর্শিদাবাদ-জিয়াগঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি রফিকুল ইসলাম বলেন, “মহরমের কৃতিত্বকে সম্মান জানাতে তার বাবা-মায়ের নামে ‘নিজগৃহ নিজভূমি’ প্রকল্প থেকে বাস্তুজমির পাট্টা দেওয়ার পর ঘর তৈরি করে দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।” |
সল্টলেক স্টেডিয়ামে গত ১৫ ডিসেম্বর থেকে ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত তিন দিন ধরে রাজ্যস্তরের ক্রীড়া প্রতিযোগিতা হয়। সেখানেই মহরম ৭৫ মিটার দৌড়, আলু দৌড় ও রিলে দৌড়ে প্রথম স্থান অধিকার করে। হতদরিদ্র পরিবারের ওই শিশুটি কী করে অসাধ্যসাধন করল? সে অবশ্য ওই কৃতিত্ব দিতে চায় মূলত দু’ জনকে। একজন তার প্রধানশিক্ষক আইজুদ্দিন শেখ। অন্য জন তার থেকে বছর দুয়েকের বড় দাদা আল্লারাখা শেখ। মহরম বলে, “দাদা গত বছর রাজ্য ক্রীড়ায় চাম্পিয়ান হয়েছিল। তখন থেকে জেদ চেপেছিল আমাকেও চাম্পিয়ন হতে হবে।” ছাত্রের সেই জেদকে সাফল্যের শিখরে নিয়ে যান প্রধানশিক্ষক আইজুদ্দিন শেখ।
মহরমের বাবা সুজাউদ্দিন শেখ বলেন, “কোনও দিন কাজ জোটে, কোনও দিন বেকার থাকি। এর আগে সাত পুরুষের কেউ কখনও স্কুলের চৌকাঠ মাড়ায়নি। তাই কোনও কোনও দিন অভাবের জ্বালা তীব্র হয়ে উঠলে দুই ছেলেকে স্কুল থেকে ছাড়িয়ে চায়ের দোকানে কাজে লাগানোর কথা ভেবেছি অনেকবার প্রধান শিক্ষক তখন আমাকে বাধা দিয়েছেন। তিনি না থাকলে ছেলের ওই সাফল্য আসত না।” আইজুদ্দিন শেখের বাড়িও এলাহিগঞ্জে। তিনি বলেন, “স্কুল ছুটির পর নিয়মিত ছাত্রছাত্রীদের খেলাধুলা হয়। পুজোর সময়ে স্কুল ছুটি থাকলেও অনুশীলন বন্ধ থাকে না। তারই ফল, মহরম রাজ্য চাম্পিয়ন।” |