|
|
|
|
ফের উত্তপ্ত ঝাড়গ্রাম রাজ কলেজ |
মনোনয়নপত্র লুঠের অভিযোগ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • ঝাড়গ্রাম |
আশঙ্কা সত্যি হল। ঝাড়গ্রাম রাজ কলেজের ছাত্র সংসদে নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরুর দিনেই অশান্তি বাধল।
বুধবার মনোনয়নপত্র সংগ্রহের দিন দুপুরে পুলিশ ও প্রশাসনিক কর্তাদের উপস্থিতিতেই কলেজ গেটের সামনে এসএফআই-সহ দু’টি বাম ছাত্র সংগঠনের নামে তোলা ১৪০টি মনোনয়নপত্র লুঠ হয়ে গেল। এসএফআইয়ের অভিযোগ, বাম সংগঠনের সদস্যরা মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করে কলেজ থেকে বেরনোর পর টিএমসিপি’র হামলার আশঙ্কায় প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে কলেজ গেটের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। বার বার পুলিশ ও প্রশাসনিক আধিকারিকদের কাছে নিরাপত্তা চাওয়া হলেও তাঁরা কর্ণপাত করেননি। এরপরই পুলিশের চোখের সামনে বাম ছাত্র সংগঠনের তিন প্রতিনিধির কাছ থেকে ১৪০টি মনোনয়নপত্র কেড়ে নেন টিএমসিপি’র সমর্থকেরা। পুলিশ ছিল নীরব দর্শক। ঝাড়গ্রামের এসপি ভারতী ঘোষের অবশ্য দাবি, “কলেজের ভিতরে ও বাইরে প্রচুর পুলিশ মোতায়েন ছিল। কোথাও কোনও গোলমাল হয়নি। সব মিথ্যে কথা।” আর ঝাড়গ্রামের মহকুমাশাসক বাসব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “সুষ্ঠু ভাবে সব ছাত্র সংগঠনকে মনোনয়নপত্র বিলি করা হয়েছে। আমার যা দায়িত্ব ছিল আমি তা পালন করেছি। কলেজের বাইরে কী হয়েছে তা নিয়ে আমি মন্তব্য করব না।” |
|
পুলিশ প্রহরা। ছবি: দেবরাজ ঘোষ। |
জঙ্গলমহলের অশান্তির কারণে ২০০৭ সালের পর তিন বছর রাজ কলেজে ছাত্র সংসদের নির্বাচন করা যায়নি। ২০০৮ সাল পর্যন্ত রাজ কলেজের ছাত্র সংসদের ক্ষমতায় ছিল এসএফআইয়ের নেতৃত্বাধীন ‘বাম ছাত্র ঐক্য’। রাজ্যে ক্ষমতার পালা বদলের পর ২০১১ সালের ২০ ডিসেম্বর রাজ কলেজে ছাত্র সংসদের নির্বাচনের দিন স্থির হয়। কেবলমাত্র টিএমসিপি মনোনয়নপত্র দাখিল করে। মনোনয়নপত্র দাখিল করতে না-পেরে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় এসএফআইয়ের নেতৃত্বাধীন ‘বাম ছাত্র ঐক্য’। ২০১২ সালের নভেম্বর পর্যন্ত নির্বাচন প্রক্রিয়া স্থগিত রাখার নির্দেশ দেয় আদালত। ইতিমধ্যে গত বছর কলেজে অধ্যক্ষ নিগ্রহের ঘটনা ঘটে। নভেম্বরে আদালত পরবর্তী এক নির্দেশে জানায়, মহকুমাশাসকের তত্ত্বাবধানে রাজ কলেজে নির্বাচন করতে হবে।
গত ১৮ ডিসেম্বর রাজ কলেজের সভাঘরে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অমলেন্দু রায় ও মহকুমাশাসক বাসব বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে ৮টি ছাত্র সংগঠনের প্রতিনিধিদের নিয়ে নির্বাচন-সংক্রান্ত এক বৈঠক হয়। তবে এসএফআই-সহ বাম ছাত্র সংগঠনের কোনও প্রতিনিধি ওই বৈঠকে হাজির হননি। ওই বৈঠকে সর্বসম্মত ভাবে ৩০ জানুয়ারি নির্বাচনের দিন নির্ধারণ করা হয়। এরপর কলেজ কর্তৃপক্ষ নোটিস দিয়ে জানান, ১৬ জানুয়ারি মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করার দিন, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া যাবে ১৭ ও ১৮ জানুয়ারি। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের দিন হল ১৯ জানুয়ারি।
বুধবার মনোনয়নপত্র সংগ্রহের দিনে কলেজ চত্বর জুড়ে ছিল পুলিশের ‘বজ্র আঁটুনি’। কলেজে ছিলেন মহকুমাশাসক বাসব বন্দ্যোপাধ্যায়, ঝাড়গ্রামের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট বিনয়রঞ্জন সাঁতরা, ঝাড়গ্রামের এসডিপিও সন্তোষকুমার মণ্ডল ও ঝাড়গ্রাম থানার আইসি মণিময় সিংহরায়। সকাল থেকেই কলেজের বাইরে ঘাঁটি গেড়েছিলেন টিমসিপি’র জেলা সভাপতি রমাপ্রসাদ গিরি, জেলা সহ-সভাপতি সৌমেন আচার্য ও মহকুমা সভাপতি রথীন্দ্রনাথ মণ্ডলেরা। ১৪৪ ধারা জারি ছিল কলেজ প্রাঙ্গণে।
দুপুর ১২টা ১০ মিনিট নাগাদ কলেজের বাংলা অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র এসএফআই সমর্থক মৃত্যুঞ্জয় মাহাতো সংগঠনের জন্য ৭০টি মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন। এআইএসএফের পক্ষ থেকেও এক পড়ুয়া আরও ৭০টি মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন। দুপুর সোয়া ১২টা থেকে কলেজের মেন গেটের বাইরে পুলিশের সাহায্যের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে ছিলেন মৃত্যুঞ্জয়-সহ বাম সংগঠনের তিন সদস্য। ওই সময় মহকুমাশাসক কলেজে ঢুকছিলেন। মহকুমাশাসককে দেখে টিএমসিপি-র জেলা সহ-সভাপতি সৌমেন আচার্য মৃত্যুঞ্জয়ের এক সঙ্গীকে দেখিয়ে বলতে থাকেন, “এই ছেলেটি মাওবাদী। আপনি সিপিএম ও মাওবাদীদের সুবিধা করে দিচ্ছেন। এক্ষুণি ওদের গ্রেফতার করার ব্যবস্থা করুন।” মহকুমাশাসক অবশ্য সৌমেনকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, “আপনি উচ্চ আদালতের নির্দেশকে অবজ্ঞা করছেন।” এরপর কলেজে ঢুকে পড়েন মহকুমাশাসক।
মৃত্যুঞ্জয়ের অভিযোগ, “বাইরে বেরোতেই টিএমসিপির নেতা-কর্মীরা আমাদের মারধর করার হুমকি দিতে থাকে। পুলিশের চোখের সামনেই অস্ত্র দেখিয়ে মনোনয়নপত্র কেড়ে নিয়ে চলে যায় ওরা।” ইতিমধ্যে মনোনয়নপত্র সংগ্রহের সময়সীমা শেষ হয়ে যাওয়ায় কলেজ ছেড়ে চলে যান মহকুমাশাসক ও পুলিশ আধিকারিকেরা। পরে এসএসআইয়ের পক্ষ থেকে মহকুমাশাসকের কাছে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়। পুলিশ অভিযোগ নিতে অস্বীকার করায় সংগঠনের জেলা সম্পাদক সৌগত পণ্ডার নেতৃত্বে ঝাড়গ্রাম থানার সামনে দুপুর দু’টো থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত অবস্থান করে এসএফআই। পরে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা নাগাদ অভিযোগ নেয় পুলিশ। সৌগতর অভিযোগ, “পুলিশ-প্রশাসন নগ্ন ভাবে শাসক-দলের তাঁবেদারি করল। গণতন্ত্র বলে কিছুই আর অবশিষ্ট নেই।” তৃণমূলের জেলা সভাপতি রমাপ্রসাদ গিরির দাবি, “পুরোটাই এসএফআইয়ের নাটক। মহকুমাশাসকও বামপন্থীদের সাহায্য করেছেন। দীর্ঘ দিন এসএফআই কলেজ-ভোট করতে দেয়নি। আমরা নির্বাচন চাই।”
কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অমলেন্দু রায় জানান, “৩৮টি আসনের জন্য মোট ৪৯৩টি মনোনয়নপত্র দেওয়া হয়েছে। ৭টি সংগঠন ৪৯০টি মনোনয়নপত্র তুলেছে। নির্দলদের পক্ষে তিনটি মনোনয়নপত্র তোলা হয়েছে। তবে টিমসিপি’র নামে কোনও মনোনয়নপত্র তোলা হয়নি।’’ টিএমসিপি’র মহকুমা সভাপতি রথীন্দ্রনাথ মণ্ডলের ব্যাখ্যা, “এ দিন আমাদের সমর্থিত বাম বিরোধী ৫টি ছাত্র সংগঠনের তরফে সাড়ে তিনশোটি মনোনয়নপত্র তোলা হয়। আলোচনার ভিত্তিতে ৩৮টি আসনে প্রার্থী ঠিক করা হবে।” |
|
|
|
|
|