|
|
|
|
মানুষের দ্বি-মানসিকতার খোঁজ আইআইটিতে |
কিংশুক আইচ • খড়্গপুর |
মানুষ নিজেকে যে ভাবে চেনে সেটাই কি তার আসল পরিচয়? না কি তার পরতে পরতে জড়িয়ে থাকে এক অন্য সত্তা। সেই সত্তা বেরিয়ে এসে ভেঙে দেয় পুরনো আবরণ। তখন মুখ-মুখোশের ফারাকটাও সামনে এসে দাঁড়ায়। তৈরি হয় সঙ্কটের। রবীন্দ্র গল্প বা উপন্যাসে বার বার উঠে এসেছে সম্পর্কের টানা পোড়েন, নানা মনস্তাত্ত্বিক জটিলতা। তাঁর লেখাতে চরিত্রগুলির আত্মপরিচয় অনেক ক্ষেত্রেই কেবলমাত্র জন্মপরিচয় বহন করে নি, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তা হয়ে উঠেছে সামাজিক বা জাতির পরিচয়বাহকও। বুধবার খড়্গপুর আইআইটির এস এন বসু হলে “টেগোর মেমোরিয়াল লেকচার-২০১৩” বক্তৃতায় এই মতই প্রকাশ করলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপিকা সুপ্রিয়া চৌধুরী। অনুষ্ঠানে ছিলেন খড়্গপুর আইআইটি র কার্যনির্বাহী ডিরেক্টর শঙ্কর কুমার সোম। “টেগোর মেমোরিয়াল লেকচার” খড়্গপুর আইআইটির অন্যতম পুরনো বক্তৃতামালা। ১৯৬১ সালে কবিগুরুর শততম জন্মজয়ন্তীতে এটি শুরু হয়েছিল। সেই অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দিয়েছিলেন সৌমেন্দ্রনাথ ঠাকুর। এ বছর অধ্যাপিকা সুপ্রিয়া চৌধুরীর বক্তৃতার বিষয় ছিল “রবীন্দ্রনাথের উপন্যাসে ব্যক্তিসত্তা ও জাতিসত্তার আত্মপরিচয় ও বিভিন্নতা”। এই প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে অধ্যাপিকা চৌধুরী মূলত রবীন্দ্রনাথের দুটি উপন্যাসকে বেছে নেন। উপন্যাস দু’টি হল ‘গোরা’ এবং ‘ঘরে বাইরে’। উপন্যাস দু’টির মুখ্য চরিত্রগুলির পরিচয়ের নানা আঙ্গিক ও বিভিন্নতা নিয়ে আলোচনা করেন তিনি। |
|
বক্তৃতায় অধ্যাপিকা। —নিজস্ব চিত্র |
গোরা উপন্যাস প্রসঙ্গে সুপ্রিয়াদেবীর বিশ্লেষণ, উপন্যাসের নায়ক, নিজের আসল পরিচয় না জানলেও তা প্রথম থেকেই জানতেন পাঠকরা। ধর্ম গোঁড়া গোরা প্রথমে হিন্দু ধর্মের ধ্বজাধারী হলেও তার শেষ আশ্রয় হয় দেশ মাতা, তার না আছে ধর্ম, না আছে বৈষম্যের জাল। তাই উপন্যাসের শেষে গোরার জন্ম পরিচয়ের চেয়েও অনেক বড় হয়ে দাঁড়ায় জগতের কাছে তার পরিচয়। আবার ‘ঘরে বাইরে’ উপন্যাসে বিমলার ঘরের অন্দরমহল থেকে বাইরের বৈঠকখানায় পৌঁছানো, স্বদেশী সন্দীপের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়া-সব কিছুই বিমলার আত্মপরিচয়ের বিভিন্নতাকেই নির্দেশ করে। কখনও কখনও যেখানে ব্যক্তিসত্তার থেকেও বড় হয়ে ওঠে জাতিসত্তা। সেখানে স্থির ধ্রুবক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে নিখিলেশ। বিমলা যা মনে ভেবেছিল তার প্রকাশ হওয়ায় ভীত, লজ্জিত হয়ে হয়ে সে নিজেই। শেষে আসে অনুশোচনা। তা ঠিক-ভুল, ন্যায়-অন্যায়-এসব প্রশ্নের সামনে দাঁড় করানোর আগে সম্মুখীন করে মানুষের দ্বি-মানসিকতার।
এটি রবীন্দ্রনাথের সচেতন সিদ্ধান্ত বলে অভিমত সুপ্রিয়াদেবীর। অধ্যাপিকা সুপ্রিয়া চৌধুরীর মতে, এসব আমাদের সেই ধারণার দিকেই ঠেলে দেয় যে, আমরা নিজেকেও অনেক সময়ই পুরোপুরি জানি না। হয়তো কিছু থাকে চাপা, কেউ তা প্রকাশ করে , কেউ হয়তো করে না। কিন্তু তা মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। রাতের তারারা দিনের আলোয় না থাকলেও তারা তো থাকেই। আর তাই সত্যি। |
|
|
|
|
|