|
|
|
|
এক লক্ষ টাকা করে বরাদ্দ |
সংশোধনাগারে গ্রন্থাগার করতে আর্থিক অনুদান |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
বন্দিদের পঠনপাঠনের ব্যবস্থা করতে প্রতিটি সংশোধনাগারে গ্রন্থাগার তৈরিতে উদ্যোগী হল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন। এ জন্য অর্থ বরাদ্দ করেছে জেলা পরিষদ। যে সংশোধনাগারে ইতিমধ্যেই গ্রন্থাগার রয়েছে তার উন্নয়ন এবং যেখানে গ্রন্থাগার নেই সেখানে নতুন করে তা তৈরির জন্য এক লক্ষ টাকা করে বরাদ্দ করা হয়েছে। জেলা গ্রন্থাগার আধিকারিক ইন্দ্রজিত্ পান বলেন, “সংশোধনাগারে গ্রন্থাগারের উন্নয়ন বা নতুন গ্রন্থাগার তৈরির জন্য এক লক্ষ টাকা করে দেওয়া হচ্ছে।” অর্থ দেওয়া হচ্ছে মহকুমাশাসকদের। তাঁরাই এ বিষয়ে উদ্যোগী হবেন। জেলা পরিষদের সভাধিপতি অন্তরা ভট্টাচার্যের বক্তব্য, “বন্দিরাও যাতে সংশোধনাগারে পড়াশোনার সুযোগ পান, সে জন্যই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”
পশ্চিম মেদিনীপুরে মোট তিনটি সংশোধনাগার রয়েছে। মেদিনীপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার ছাড়াও রয়েছে ঘাটাল ও ঝাড়গ্রাম উপ-সংশোধনাগার। মেদিনীপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে আগেই থেকেই গ্রন্থাগার ছিল। সম্প্রতি মহকুমা প্রশাসনের উদ্যোগে ঝাড়গ্রাম উপ-সংশোধনাগারে ছোট আকারে একটি গ্রন্থাগার তৈরি করা হয়েছে। ঝাড়গ্রামের মহকুমাশাসক বাসব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “নিজেদের উদ্যোগেই উপ-সংশোধনাগারে একটি গ্রন্থাগার করা হয়েছে। গ্রন্থাগারের জন্য জেলা পরিষদ এক লক্ষ টাকা করে বরাদ্দ করেছে বলে শুনেছি। ওই টাকা পেলে গ্রন্থাগারের আরও উন্নয়ন ঘটানো হবে।” তবে ঘাটাল উপ-সংশোধনাগারে এখনও কোনও গ্রন্থাগার নেই। ঘাটালের মহকুমাশাসক অংশুমান অধিকারীর বক্তব্য, “গ্রন্থাগার তৈরির জন্য অর্থ পেলে ভালই হবে।”
বন্দিদের জীবনের মূলস্রোতে ফেরাতেই জেলখানার নাম পাল্টে করা হয়েছে সংশোধনাগার। বন্দিদের স্বার্থে ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা, এমনকী জেল চত্বরে দুর্গাপুজোও হয়। সংশোধনাগারের বাইরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও প্রতিযোগিতায় যোগ দেওয়ার সুযোগ পান বন্দিরা। অনেক বন্দি আবার রামকৃষ্ণ মিশন বা সারদা মঠে গিয়ে দীক্ষাও নিয়েছেন। তাঁদের জন্য রামকৃষ্ণ মিশন বা সারদা মঠের পক্ষ থেকে নিয়মিত ম্যাগাজিনও পাঠানো হয়। একজন জোরে জোরে তা পাঠ করেন, বাকিরা পাশে বসে ধর্মকথা শোনেন। মানসিক পরিবর্তনের এমনই নানা উদ্যোগও গ্রহন করা হয়েছে নানা সময়ে। এতে যে ফল মেলেনি তা নয়। বন্দিদের মধ্যেও রুচি ও সংস্কৃতির পরিবর্তন ঘটেছে বহু ক্ষেত্রেও। এখনও যেমন জেল পালানোর ঘটনা ঘটে তেমনি নিরাপত্তা রক্ষী বিহীন প্যারোলে ছাড়ার পরেও নির্দিষ্ট সময়ে বন্দিরা সংশোধনাগারে ফিরেছেন এমন নজিরও রয়েছে। কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে গ্রন্থাগার থাকায় বন্দিরা পড়াশোনারও সুযোগ পেয়ে থাকে। যাতে আরও বেশি সূযোগ দেওয়া যায়, নানা ধরনের বই মেলে সেই লক্ষ্যেই মেদিনীপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারকে এক লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছে। উপ-সংশোধনাগারের বন্দিরা আগে এই সূযোগ থেকে বঞ্চিত হতেন। এ বার সেখানেও যাতে বন্দিরা গ্রন্থাগারের সুবিধে পান সে জন্য দুটি উপ-সংশোধনাগারকে দেওয়া হয়েছে এক লক্ষ করে ২ লক্ষ টাকা। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, সংশোধনাগারে নানা ধরনের আসবাবপত্র রয়েছেই। তাছাড়াও সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনে নিজেদের তহবিল থেকে আসবাবপত্র কিনতেও পারবেন। সেক্ষেত্রে এক লক্ষ টাকায় অনেক বই কেনা সম্ভব। যদি নিতান্তই আসবাব পত্রও কিনতে হয়, তাহলেও তার বাইরে যে টাকা থাকবে তা দিয়েও বেশ কিছু বই কেনা যাবে। একবার গ্রন্থাগার চালু হয়ে গেলে বিভিন্ন জায়গা থেকে সাহায্য সহযোগিতাও মিলবে। সে ক্ষেত্রে আপন তালেই গ্রন্থাগারের শ্রীবৃদ্ধি ঘটবে বলেই প্রশাসনিক কর্তাদের ধারনা। গ্রন্থাগারের প্রতি বন্দিদের আকর্ষণ বাড়ানো গেলে বন্দিদের মূলস্রোতে ফেরানোর কাজ আরও সহজ হবে বলেই প্রশাসনিক কর্তাদের অনুমান। |
|
|
|
|
|