১০০ দিনের প্রকল্পে কাজ পেতে হলে আগাম আবেদন করতে হয় জবকার্ডধারীদের। এটাই দস্তুর। কিন্তু বাগনান ১ ব্লকের খালোড় গ্রাম পঞ্চায়েতে দেখা গেল উলটপুরাণ। পঞ্চায়েত নিজেই জবকার্ডধারীদের কাজ করার জন্য ডাকছে।
কারণটাও অদ্ভূত।
এক সময়ে হাওড়ার এই পঞ্চায়েত এলাকায় যত লোক বিভিন্ন আশায় জবকার্ড করিয়েছিলেন, কার্যক্ষেত্রে দেখা গেল, তার সামান্যই ১০০ দিনের কাজে উৎসাহী। যাঁরা উৎসাহ দেখিয়েছিলেন, তাঁদের একটা বড় অংশকে ইতিমধ্যেই এই অর্থবর্ষে ১০০ দিন কাজ দেওয়া হয়ে গিয়েছে। অর্থাৎ এপ্রিলে নতুন অর্থবর্ষ শুরুর আগে তাঁদের আর কাজ দেওয়া যাবে না। অথচ আরও কাজের টাকা এসে গিয়েছে। ফলে, মরিয়া হয়ে কাজ করার লোক খুঁজছে পঞ্চায়েত। গ্রামের মানুষদের নিয়ে কর্মশালাও করছে।
আপাতত এই পঞ্চায়েতের আওতায় রয়েছেন মোট ১,৬৫০ জন জবকার্ডধারী। কিন্তু তাঁদের অধিকাংশই ১০০ দিনের কাজে উৎসাহ দেখাননি। মোটে ২৫৪টি পরিবার কাজ করেছে। গত শুক্রবার পঞ্চায়েতের তরফে কর্মশালার আয়োজন করে ইতিমধ্যে প্রকল্পে কাজ করে যাওয়া জবকার্ডধারীদেরই ডাকা হয়। পঞ্চায়েতের প্রধান ও সদস্যেরা ছাড়াও আধিকারিক ও কর্মীরা ছিলেন।
কর্মশালায় জবর্কাডধারীদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরে অনুরোধ করা হয়, তাঁরা যেন গ্রামে ফিরে ‘অনিচ্ছুক’ কার্ডধারীদের প্রকল্পের উপকারিতার কথা বোঝান, তাঁদের কাজে যোগ দিতে ডেকে আনেন। পঞ্চায়েতপ্রধান শ্রাবন্তী বসুর কথায়, “কর্মশালায় যে সব মানুষ এসেছেন, তাঁরা প্রত্যেকেই প্রকল্পটিতে কাজ করেছেন। তাঁরা কী ভাবে উপকৃত হয়েছেন, সেটাই তাঁরা বাকিদের কাছে প্রচার করবেন।”
পঞ্চায়েত সূত্রে জানা যায়, চলতি আর্থিক বছরে ডিসেম্বর পর্যন্ত তারা এই প্রকল্পে মোট ৩৭ লক্ষ টাকার কাজ করেছে। রূপায়িত হয়েছে ৪১টি প্রকল্প। এর মধ্যে রয়েছে ২৪টি রাস্তা, ৬টি বনসৃজন, ৫টি পুকুর সংস্কার, ৫টি খাল ও নালা সংস্কার। ২৫৪টি জবকার্ডধারী পরিবার নিয়মিত কাজ পেয়েছেন। এক-এক জন শ্রমিক গড়ে ৫০ দিন করে কাজ পেয়েছেন। চলতি বছরে ৫০ লক্ষ টাকার কাজের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। পরবর্তী কিস্তির টাকাও চলে এসেছে। অথচ কাজের লোক নেই।
পঞ্চায়েত প্রধানের ব্যাখ্যা, “এই ব্লকে আমাদের পঞ্চায়েতেই প্রথম জবকার্ড বিলি শুরু হয়। অতি উৎসাহে অনেকে জবকার্ড করিয়েছিলেন। পরে তাঁরা কাজে উৎসাহ হারিয়েছেন।” কেন হারালেন উৎসাহ? উত্তর মিলল কর্মশালায় হাজির কয়েক জন গ্রামবাসীর বক্তব্যে। তাঁদেরই এক জন হেনা মান্নার কথায়, “এই প্রকল্পে কাজ করে আমার উপকার হয়েছে। কিন্তু দৈনিক মজুরি বড় কম।” সমর্থন জানিয়ে মনোরঞ্জন সাউ যোগ করেন, “এই সব এলাকায় মানুষ সহজে বিকল্প কাজ পেয়ে যান। দিনে যিনি ১৭০-২০০ টাকা রোজগার করতে পারেন, তিনি কেন দৈনিক ১৩৬ টাকায় প্রকল্পে কাজ করবেন?”
পঞ্চায়েত প্রধানের মতেও, “মজুরি বাড়ানো খুবই প্রয়োজন। আমাদের মতো শহর এলাকায় মাটি পাওয়া যায় না। এখানে মজুরির খাতে বরাদ্দ কমিয়ে উপকরণ খাতে তা বাড়ানো উচিত।” দিনভরের কর্মশালায় দুপুরে ছিল জবকার্ডধারীদের জন্য খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন। পঞ্চায়েত কর্মী অশোককুমার মান্না, তরুণকুমার মাইতিরা বলেন, “এটা পঞ্চায়েতের নিজস্ব উদ্যোগ। কর্মশালার খরচও হয়েছে পঞ্চায়েতের নিজস্ব তহবিল থেকে।” খালোড় পঞ্চায়েতের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েও প্রকল্পের রাজ্য কমিশনার দিব্যেন্দু সরকার অবশ্য বলেন, “মজুরি খাতে বরাদ্দ কমিয়ে উপকরণ খাতে তা বাড়ানো সম্ভব নয়। কেন্দ্রীয় সরকার প্রস্তাবটিতে সায় দেয়নি। তবে দৈনিক মজুরি বাড়ানোর জন্য আমরাও ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় সরকারকে চিঠি দিয়েছি।” |