|
|
|
|
প্রতিবাদই সার, সারেনি ক্ষত
নিজস্ব প্রতিবেদন |
এক মাস অতিক্রান্ত। লজ্জার এক মাস, কান্নার এক মাস, প্রতিবাদের এক মাস। সর্বোপরি, অপরিবর্তনের এক মাস। দিল্লি গণধর্ষণ কাণ্ডের পরের এই একটা মাসকে আর কী ভাবেই বা ব্যাখ্যা করা যায়?
যে দেশের হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে প্রতিবাদে মুখর হয়েছে, প্রবল শীতকে উপেক্ষা করে জলকামানের সামনে দাঁড়িয়েছে, সে দেশেরই নানা প্রান্তে আরও অনেক মহিলা ধর্ষিত হয়েছে। ধর্ষিত হয়েছে বৃদ্ধা, শিশু এমনকী প্রতিবন্ধী বালিকাও। কখনও বা ধর্ষকের ভূমিকায় দেখা গিয়েছে ধর্ষিতার বাবা বা দাদাকে। ধর্ষণের লজ্জায় আত্মঘাতী হয়েছে আরও কয়েক জন দামিনী। সামাজিক লজ্জাকে উপেক্ষা করার লড়াইও চালিয়ে যাচ্ছে বেশ কয়েক জন। ক’টা ঘটনাই বা থানা পর্যন্ত পৌঁছয়?
ধর্ষণ-শ্লীলতাহানি-নারী নিগ্রহের ঘটনা ঘটেই চলেছে। আর চলছে বড়, ছোট, মেজ বিভিন্ন স্তরের বোদ্ধাদের বিতর্কিত মন্তব্য করার প্রতিযোগিতা। সদ্য কিছু উদাহরণ আশারাম বাপু, শঙ্করাচার্য, মোহন ভাগবত প্রমুখ।
“এক হাতে তালি বাজে না। দিল্লির বাসের যুবকগুলিকে ভাই বলে ডাকলে তারা ধর্ষণ করত না। এমনকী সরস্বতী মন্ত্র জপ করলে কোনও বিপদ ঘটারই সম্ভাবনা ছিল না মেয়েটির,” কয়েক দিন আগে এই মন্তব্য করে প্রবল বিতর্কের মুখে পড়েন আশারাম বাপু। শুধু এ টুকুতেই থামেননি। কাল মহাকুম্ভের এক জমায়েতে আশারাম ঘোষণা করেছেন, “যদি কেউ প্রমাণ করতে পারে যে আমি ধর্ষণের ঘটনায় মেয়েটিকে দোষারোপ করেছি, তাকে ৫০ লক্ষ টাকা পুরস্কার দেব।” |
গণধর্ষিতা সাহসিনীর বেঁচে থাকার লড়াই থেমেছিল ১৩ দিনের মাথায়।
মানুষের প্রতিবাদের এক মাস পূর্ণ হল বুধবার। দিল্লিতে। ছবি: রয়টার্স |
ধর্ষণের উপলক্ষ হিসেবে আবার অন্য কারণ খুঁজে পেয়েছেন ধর্মগুরু শঙ্করাচার্য। পশ্চিমী প্রভাবেই নাকি ঘটছে এত ধর্ষণের ঘটনা। আজ কলকাতায় এক ধর্ম সম্মেলনে তিনি বলেন, “সিনেমা, ক্লাব, মাদক এ সবের কারণেই শেষ হয়ে যাচ্ছে সারা দেশের নীতিবোধ।” তিনি আরও বলেন, “স্বাধীনতার আগে আমাদের মধ্যে নীতিবোধ বজায় ছিল।”
আরএসএসের শীর্ষনেতা মোহন ভাগবতও ধর্ষণের জন্য মেয়েদের পশ্চিমী সাজপোশাককে দায়ী করেছেন। তাঁর মতে, ভারতে ধর্ষণের এই সব ঘটনা ‘ইন্ডিয়া’-র অবদান।
কিন্তু বাস্তব তো তুলছে অন্য কিছু প্রশ্ন। অসমের স্কুল ফেরতা কিশোরীটি কি সরস্বতী মন্ত্র জপ না করার দোষে দোষী ছিল? নাকি গত কাল গোয়ায় যে সাত বছরের শিশুটি ধর্ষিত হল, সে পশ্চিমী প্রভাবে বিগড়ে গিয়েছিল? পরিবারের অন্ন সংস্থানের জন্য সারা দিন কাজ করে সন্ধ্যার পর বাড়ি ফেরে, তাকে ধর্ষণ করাটা কি অধিকারের মধ্যেই পড়ে?
উত্তর মেলে না।
তবু থামেনি প্রতিবাদের ঢেউ। মাঝে মাঝেই মিছিলে ঢাকছে গলি ও রাজপথ। বার বার কাঠগড়ায় উঠছে পুলিশ থেকে প্রশাসন। দাবি উঠছে, ধর্ষণের মতো অপরাধের চরমতম শাস্তি চাই। দ্রুত বিচারপর্ব সেরে শাস্তি দেওয়ার কথা উঠেছে। কিন্তু বদলাচ্ছে না কিছুই। প্রতিদিনই নির্যাতনের শিকার হচ্ছে মেয়েরা। জায়গা বদলেছে, বদলেছে ধর্ষকদের চেহারা। কিন্তু মানবিকতা তো দূরের কথা, শাস্তির ভয়ও জন্মায়নি অপরাধী-মনে। এক মাস পরেও এতটুকু বেশি নিরাপদ নয় দেশের দামিনীরা। একটা বড় শূন্যের সামনেই দাঁড়িয়ে প্রশাসন থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ। |
|
|
|
|
|