|
|
|
|
ঝকঝকে স্টেডিয়াম, তবু ফিরছে দাঙ্গার স্মৃতি
প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায় • রাঁচি |
ভিভিআইপি গেটের সামনে দাঁড়িয়ে ঝাঁ চকচকে ক্রিকেট স্টেডিয়ামের দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে ছিলেন সত্তর বছরের শঙ্কর প্রসাদ। আগামী শনিবার ঝাড়খণ্ড স্টেট ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের (জেএসসিএ) ওই স্টেডিয়ামেই লড়াই হবে ভারত ও ইংল্যান্ডের। একদিনের আর্ন্তজাতিক ক্রিকেট কোনও দিন হয়নি রাঁচিতে। এই প্রথম। আদর্শনগরের যে বাড়িতে শঙ্কর থাকেন তার থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে স্টেডিয়াম। কিন্তু শঙ্করের চোখে ভাসছে আর এক লড়াইয়ের দৃশ্য। ‘অভিশপ্ত’ সে লড়াই একই সঙ্গে তাড়া করে বেড়াচ্ছে আদর্শনগরের বাসিন্দাদের।
কেন সে স্মৃতি অভিশপ্ত?
ইতিহাস বলছে ২০০০ সালে ঝাড়খণ্ড রাজ্য তৈরি হয়েছিল। আর ২০০২ সালের ২৪ জুলাই শ্লোগান উঠেছিল “আবুয়া দিশুম আবুয়া রাজ, আপরু ছাপরু গঙ্গা পার”। অর্থাৎ ঝাড়খণ্ডে থাকবে ঝাড়খণ্ডের বাসিন্দারা। অন্যরা নয়। আর ঝাড়খণ্ডীদের উগ্র আক্রমণ নেমে এসেছিল আদর্শ নগরের বাসিন্দাদের উপরে। আদর্শনগরের পুরনো বাসিন্দাদের কাছে সেই ঘটনা এখনও তরতাজা। |
রাঁচির নতুন স্টেডিয়াম। ছবি: প্রশান্ত মিত্র |
তাঁরা জানান, ঝাড়খণ্ডের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা বাবুলাল মরাণ্ডি ঘোষণা করেছিলেন, বিহারের যে অংশ কেটে ঝাড়খণ্ড হয়েছে সেখানে ঝাড়খণ্ডীরাই থাকতে পারবেন। ১৯৩২ সালের আগে থেকে যাঁরা যেখানে রয়েছেন তাঁরাও থাকবেন। অন্যান্যদের ফিরে যেতে হবে বিহারে। আর তার পরেই বিহারিদের তাড়াতে নেমে পড়ে ঝাড়খণ্ডের বাসিন্দারা। আদর্শনগর, শ্যামলী কলোনি, শ্যামলী চকের এলাকার বাসিন্দারা দীর্ঘদিন এক সঙ্গে থেকেও একে অন্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়েছিলেন।
একদিনের গোলমালে ছ’জন মারা যান। এঁদের মধ্যে তিন জনই ছিলেন আদর্শনগরের বাসিন্দা। ভারতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক মহেন্দ্র সিংহ ধোনীর ছেলেবেলা থেকে যৌবনের অনেকটা সময় যেখানে কেটেছিল সেই শ্যামলী কলোনি এলাকায় মারা যান তিন জন আদিবাসী।
কথা বলতে গিয়ে চোখে জল এসে যাচ্ছিল বৃদ্ধ শঙ্কর প্রসাদের। শঙ্করের কথায়, “এখনকার এক বিধায়ক, প্রাক্তন মন্ত্রী নিজে গোলমালের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। আমার মেয়েকে টিউশন পড়াতে আসত দীপক নামের এক যুবক। হামলকারীরা তাকে প্রাণে মেরে ফেলে। আমার বাড়িতে ঢুকে আমার গাড়ি জ্বালিয়ে দেয়। কিন্তু তবু রয়েছি। জন্মভিটে ছেড়ে কেন যাব?”
রঘুবর প্রসাদ নামে আদর্শনগরের আরও এক বাসিন্দার কথায়, “রাতারাতি দেখলাম প্রতিবেশীরা একে অন্যের শত্রু হয়ে গেছে।
কিন্তু কোনওমতে দাঁতে দাঁত কামড়ে, মাটি আঁকড়ে পড়েছিলাম।” তারপরে অবশ্য ধীরে ধীরে গোলমাল মিটে যায়। এখন অবশ্য শান্তিতেই রয়েছে আদর্শনগর কিংবা শ্যামলী কলোনির বাসিন্দারা।
কিন্তু শনিবারের খেলার আগে অনেক বাসিন্দাই স্মৃতির অতলে ডুব দিয়েছেন। আবার একইসঙ্গে জেএসসিএ এবং রাজ্য প্রশাসনকে ধন্যবাদ দিচ্ছেন, যে জমিতে সেই দাঙ্গা, সেখানেই ক্রিকেট স্টেডিয়াম গড়ে তোলার জন্য। শ্যামলী কলোনির বাসিন্দা, পেশায় ইঞ্জিনিয়ার রণবীর শর্মার কথায়, “একটা কালো ইতিহাসের একটা সুন্দর সমাপ্তি হচ্ছে ক্রিকেটের হাত ধরে। এটা সত্যিই আনন্দের।” |
|
|
|
|
|