|
|
|
|
ত্রিপুরায় ভোটের ময়দান ছাড়ছে তৃণমূল
আশিস বসু • আগরতলা |
যেখানে প্রধান প্রতিপক্ষ সিপিএম, সেই ত্রিপুরায় বিধানসভা ভোটে সরে দাঁড়াচ্ছে তৃণমূল!
তারা এ বার রাজ্য বিধানসভা ভোটে প্রার্থী দিচ্ছে না। ভোটের ঠিক চার সপ্তাহ আগে ত্রিপুরায় দলের নেতৃত্বকে এই সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন মুকুল রায়। যদিও কয়েক মাস আগেই জানানো হয়েছিল ত্রিপুরায় ২০১৩-র বিধানসভা ভোটে ৬০টি আসনেই তৃণমূল প্রার্থী দেবে। এখন ত্রিপুরার দলের অ্যাডহক কমিটির চেয়ারম্যান অরুণচন্দ্র ভৌমিক জানান, কোনও আসনেই তাঁরা প্রার্থী দিচ্ছেন না।
ভোটে সরে দাঁড়ানো নিয়ে মুকুলবাবুর যুক্তি, “ত্রিপুরায় তৃণমূল স্বীকৃত রাজনৈতিক দল নয়। ওখানে আমাদের শক্তপোক্ত সংগঠন ও নেতৃত্ব তৈরি হয়নি।” কিন্তু ত্রিপুরায় তৃণমূলের ভোটে সরে দাঁড়ানোয় রাজনৈতিক শিবিরে বিস্ময় তৈরি হয়েছে। উঠেছে নানা প্রশ্নও। বিস্ময়ের কারণ- যে তৃণমূল উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যে সংগঠন বিস্তার শুরু করেছে। মেঘালয়, অরুণাচল প্রদেশ, অসম ও মণিপুরে বিধানসভার ভোটে অংশ নিয়েছে। এমনকী, হিমাচল ও উত্তরপ্রদেশের বিধানসভা ভোটেও প্রার্থী দিয়েছে। দলের নেতৃত্বের বড় অংশই মনে করেন, অরুণাচল ও মণিপুরের দলের নেতা-নেত্রীরা প্রকাশ্যে বলা শুরু করেছিলেন, “এ বার দিদি (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) সারা ভারতের দিদি হবেন। সারা ভারতকে নেতৃত্ব দেবেন।” সেখানে ত্রিপুরার ভোটে আগেই কেন রণে ভঙ্গ দিল তৃণমূল?
রাজনীতির কারবারির অনেকের মতে, উত্তর পূর্ব ভারতে কংগ্রেসের বিক্ষুব্ধরা যেমন তৃণমূলের ভরসা ছিল, তেমনই উত্তরপ্রদেশ বা হিমাচলপ্রদেশে বিজেপির বিক্ষুব্ধদের নিয়ে ভোটের ময়দানে নেমেছিল। কিন্তু দু’টি রাজ্যেই ভোটে দলের শোচনীয় ফলাফল হয়। আবার অরুণাচলে দলের বিজয়ী বিধায়কদের একাংশ তাঁদের পুরনো দল কংগ্রেস ফিরে গিয়েছে। সব দিক বিবেচনা করেই শেষ মুহূর্তে সরে দাঁড়ানোই শ্রেয় মনে করেছেন মুকুলবাবুরা। অন্য একাংশের মতে, পশ্চিমবঙ্গের আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটের দিকে লক্ষ রেখেই তৃণমূলের এই সিদ্ধান্ত। কারণ তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব ভাল করেই সচেতন যে, ত্রিপুরায় দলের কোনও প্রভাব নেই। আসন্ন বিধানসভা ভোটে দলের ফলাফল আশাপ্রদ হবে না। ত্রিপুরা ভোটের এই ‘ভীতিপ্রদ’ ফলাফল পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত ভোটে ‘ক্ষতিকারক’ প্রভাব ফেলতে পারে। পশ্চিমবঙ্গে বিরোধী সিপিএম ত্রিপুরায় দলের শোচনীয় ভোট ফলাফলকে প্রচারে ব্যবহার করে রাজনৈতিক ফায়দা লুঠতে পারে। শাসক তৃণমূল পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত ভোটে বিরোধী দলকে সে সুযোগ দিতে রাজি নয়। তাই ত্রিপুরার ভোটে এ বার প্রার্থী না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে তৃণমূলকে। এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি মুকুলবাবু। তিনি বলেন, “দলে বিশদে আলোচনা করছি। পরে যা বলার বলব।”
প্রশ্ন উঠেছে, তবে কি ত্রিপুরায় সিপিএমের সঙ্গে লড়াইয়ে কংগ্রেসকে গোপনে সহযোগিতা করতেই সরে দাঁড়ালো তৃণমূল? রাজ্যের রাজনৈতিক শিবিরের একাংশের অভিমত, তৃণমূলের এই সিদ্ধান্ত ত্রিপুরা কংগ্রেসের কাছে স্বস্তিদায়ক হয়ে উঠবে, তা বলাই বাহুল্য। অরুণবাবু বলেন, ‘‘ভোটে প্রার্থী না দেওয়ার কথা দলীয় নেতৃত্ব জানালেও কংগ্রেসকে সমর্থন করার বিষয়ে কোনও কথা জানায়নি।’’ কিন্তু ত্রিপুরায় রাজ্য তৃণমূল নেতৃত্ব আসন্ন ভোটে কংগ্রেসকে সমর্থন করার কথাও জানান। এক ধাপ এগিয়ে অরুণবাবু বলেন, ‘‘প্রার্থী না দিলেও শাসক দল সিপিএমকে পরাস্ত করতে কংগ্রেসকে সমর্থন করবে তৃণমূল। মহাজোট না হলেও এবং শীর্ষ নেতৃত্বের আপত্তি থাকলেও কংগ্রেস প্রার্থীদের সমর্থন করব।’’ কিন্তু তৃণমূল অ্যাডহক কমিটির সভাপতি মানিক দেব বলেন, ‘‘আমরা এখনও চেষ্টা চালাচ্ছি যাতে বিধানসভা ভোটে প্রার্থী দেওয়া যায়।’’ |
|
|
|
|
|