|
|
|
|
দেড়শো বছর পার ‘পূবের অক্সফোর্ড’ পটনা কলেজের
স্বপন সরকার • পটনা |
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই ‘ছায়া’ এখন আর নেই। অনেক স্মৃতিও এখন ধূসর। শুধু বেঁচে আছে পুরনো দুই হস্টেল। জ্যাকসন এবং মিন্টো হস্টেল। যেখানে থাকলে ছাত্রদের মনোবল বেড়ে যেত। সেই সব স্মৃতিকে ঝালিয়ে নিতে পটনা কলেজের অন্দরে প্রবেশ করলে একটি ফলক উস্কে দেবে পুরনো অতীতকে। ফলকে একটি লেখা দেখে বোঝা যাবে এই কলেজ ছিল এক সময়ে ‘পুবের অক্সফোর্ড’। কেমব্রিজ না থাকলে হয়তো অক্সফোর্ড হতো না---সেই মিথকে মনে করে তাই এই কলেজের সেই স্মৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে, আগামী প্রজন্মকে সতর্ক করতে ফলকে লেখা হয়েছে ‘পটনা কলেজ পূবের অক্সফোর্ড, এর কোনও কেমব্রিজ নেই যার সঙ্গে প্রতিযোগিতা হতে পারে।’ অর্থাৎ পটনা কলেজের কোনও প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। কেবল একাই সে গড়ে উঠেছিল, ‘পুবের অক্সফোর্ড’।
রাজ্যপাল দেবানন্দ কোঁয়ার সেই কথাটি মনে রেখেই বলেছেন, “কলেজ ভবনের গায়ে খোদিত এই আপ্ত বাক্যটি কলেজের বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ পড়ুয়াদের অনুপ্রাণিত করবে। এই কলেজের সুনাম পুনরুদ্ধারে সকলে এগিয়ে আসবেন।” এই বছর ১৫০ বছর পূর্ণ করল এই কলেজ। ১৮৬৩ সালে গড়ে ওঠা এই কলেজ তৈরি করেছে বিজ্ঞানী থেকে চিকিৎসক, আইএএস, আইপিএস, ইঞ্জিনিয়ার, সমাজসেবী, রাজনীতিক এবং ইতিহাসবিদ। এই কলেজের ছাত্র যেমন বিচারপতি হয়েছেন তেমনই বহু কবিরও জন্ম এই কলেজে। এই ভবনটি ১৮৩৫ সালে ছিল স্রেফ ‘পটনা হাই স্কুল’। পরবর্তীকালে, ১৮৫৪ সালে তা হয় পটনা ব্রাঞ্চ স্কুল। ক্রমে তা কলেজিয়েট স্কুল হিসেবে তৈরি হয়। শেষে ১৮৬৩ সালে গড়ে ওঠে পটনা কলেজ। গঙ্গার ধার বরাবর এই কলেজ ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য্যও যে কোনও কলেজের কাছে ঈর্ষণীয়। কলেজের প্রথম অধ্যক্ষ ছিলেন জে কে রজার্স। ‘কনস্টিটুয়েন্ট অ্যাসেম্বলি’-র প্রথম সভাপতি ছিলেন পটনা কলেজের ছাত্র সচ্চিদানন্দ সিন্হা। এ ছাড়াও বিহারের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী শ্রী কৃষ্ণ সিংহ, সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন মুখ্য বিচারপতি বি পি সিংহ এবং জয়প্রকাশ নারায়ণের মতো ব্যক্তিত্বরা ছিলেন এই কলেজের ছাত্র। এ ছাড়াও এই কলেজের অসংখ্য ছাত্র দেশের বিভিন্ন জায়গায় প্রতিষ্ঠিত। পটনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য শম্ভুনাথ সিংহ বলেন, “পুরনো গৌরব ফেরাতে শুধু স্থানীয় স্তরে নয়, বিশ্বের লেখাপড়ার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করা উচিত কলেজের।” কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ রাসবিহারি প্রসাদের কথায়, “শিক্ষা ক্ষেত্রে এই কলেজের অবদানের জন্য এক সময়ে একে রাজ্যের মস্তিস্ক বলা হতো।”
এই কলেজের প্রাক্তন ছাত্রদের কাছে নানা স্মৃতি এখনও টাটকা। প্রাক্তন ছাত্র, আইএএস অঞ্জনি কুমার সিংহ এখন মুখ্যমন্ত্রীর সচিব। তাঁর কথায়, “আমরা ভাগ্যবান। তখন যে সব শিক্ষকদের পেয়েছি তাতে আমরা ধন্য। আর সেই সময়ে কলেজে শৃঙ্খলা ছিল খুব কড়া।” অবসরপ্রাপ্ত আইপিএস রাজ্যবর্ধন শর্মা ১৯৬৭ সালের ব্যাচ। তিনি এখন বিহার পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সদস্য। তাঁর অভিজ্ঞতায় “ওই কলেজের জ্যাকসন ও মিন্টো হস্টেল ছিল আমাদের কাছে মন্দির। ওই হস্টেলে থাকলে মনোবল আপনা থেকেই বেড়ে যেত। আমরা মনে করতাম, এই হস্টেলে সব দিকপাল ছাত্ররা থেকে লেখাপড়া করেছেন। সেখানে এখন আমরা আছি। শুধু এই ভেবেই মনে শক্তি পেতাম।” কলেজের আর এক প্রাক্তনী, শ্রম দফতরের যুগ্ম অধিকর্তা অনুকান্ত সিংহের অনুযোগ, “এই কলেজের সেই আকর্ষণ আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। এর পিছনে দু’টি কারণ সব থেকে বড় বলে মনে হয়। প্রথমত, যাঁরা ভাল ছাত্র এবং যাঁদের ক্ষমতা আছে, বেশিরভাগই চলে যাচ্ছেন বাইরে লেখাপড়া করতে। অন্য সমস্যা হল, শিক্ষকের ঘাটতি। প্রয়োজনীয় শিক্ষক কলেজে অনেক কম। ফলে লেখাপড়ায় সমস্যা বাড়ছে। এই অবস্থায় ছাত্রদের কাছে পটনা কলেজ ক্রমেই তার আকর্ষণ হারাচ্ছে।” |
|
|
|
|
|