পাকিস্তানে মাধ্যমিক স্তরে ইতিহাসের পাঠ্যবইয়ে স্বাধীনতা আন্দোলন নিয়ে অধ্যায়টি মাত্র চার লাইনের। সেখানে বলা আছে, ইংরেজদের হাত থেকে দেশ মুক্ত করেছে মুসলিম লিগ। বাধা সৃষ্টি করা ছাড়া স্বাধীনতা আন্দোলনে কংগ্রেসের কোনও ভূমিকা ছিল না।
এ কথা জানালেন পাকিস্তানের একটি মানবাধিকার সংগঠনের ডিরেক্টর এবং ‘পাকিস্তান-ইন্ডিয়া পিপলস ফোরাম ফর পিস অ্যান্ড ডেমোক্র্যাসি’র চেয়ারম্যান আই এ রেহমান। ‘দেশভাগ এবং সীমান্ত: দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলির বন্ধুত্বে তার প্রভাব’ নিয়ে একটি আলোচনাচক্রে যোগ দিতে তিনি কলকাতা এসেছেন। রেহমান বলেন, “হিন্দু শিক্ষকদের প্ররোচনায় পূর্ব পাকিস্তানের তরুণরা স্বাধীন বাংলাদেশ গড়ার আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল বলে পাকিস্তানের পাঠ্যবইয়ে লেখা আছে।”
ভারত, বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানের সাধারণ মানুষের মধ্যে ভুল ধারণাগুলি সংশোধন করে সম্পর্কের গ্লানি অপনোদনে পাঠ্যপুস্তক কোনও ভূমিকা পালন করছে কি? এই প্রশ্নের জবাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর এমেরিটাস আনিসুজ্জামান বলেন, “বাংলাদেশে শাসক পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পাঠ্যবইও বদলে যায়। আওয়ামি লিগ ক্ষমতায় থাকলে ইতিহাসের পাঠ্যসূচি এক রকমের, আবার বিএনপি-জামাত জোট ক্ষমতায় এলে ইতিহাস হয়ে যায় আর এক রকমের। এই সব বিষয় পাঠ্যসূচিতে ঢোকানোর সুযোগ কোথায়?” ভারত বা বাংলাদেশে ইতিহাস বইয়ের অবস্থা অবশ্যই পাকিস্তানের মতো নয়। তবে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ায় পাঠ্যসূচির ভূমিকা নিয়ে বাংলাদেশে বেসরকারি স্তরে আলোচনা হলেও সরকারি স্তরে বা বিশ্ববিদ্যলয়ে তা নিয়ে কোনও আলোচনা নেই বলে আনিসুজ্জামান জানান।
এই আলোচনাচক্রের উদ্যোক্তা ‘ক্যালকাটা রিসার্চ গ্রুপ’ মূলত উদ্বাস্তু মানুষদের উপরে গবেষণা করে। সংস্থার প্রধান রণবীর সমাদ্দার ইতিহাসের পাঠ্যবইয়ের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘‘আমাদের বইয়ে ইতিহাস প্রধানত যুদ্ধকেন্দ্রিক। ইতিহাসে আলাপ-আলোচনাও যথেষ্ট রয়েছে, সেখানে সাধারণ মানুষের মেলামেশা, পরম্পরা বোঝার চেষ্টা থাকে। জনসাধারণের দিক থেকে দেখতে গেলে শান্তির ইতিহাসই লিখতে হবে।’’ সে কাজ কিন্তু অমনি হয় না। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এবং ইউরোপিয়ান কমিশন প্রচুর অনুদান দেয়, যাতে ‘পিস হিস্ট্রি’ লেখা হয়। গ্রিস এবং তুরস্কের মতো দেশ, যাদের মধ্যে সংঘাতের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে, তাদের ইতিহাসও অন্য প্রেক্ষিতে লেখার জন্য অনেক টাকা এবং পরিশ্রম খরচ হয়। কারণ শান্তির জন্য আন্দোলনের একটি বড় অংশ হল শান্তির ইতিহাস রচনা, বললেন রণবীরবাবু। ‘‘দক্ষিণ এশিয়ায় তিক্ততার উপরে উঠে শান্তির ইতিহাস রচনা করতে এখনও হয়তো অনেক সময় লাগবে,” বলেন তিনি। |