দুপুর থেকেই আরিয়ানের পাড়ায় ভিড়। আরিয়ান নয়, গাবলু। এগারো বছরের যে গাবলুকে শান্তশিষ্ট, লাজুক ছেলে বলেই চিনতেন সবাই। ভাল ব্যাডমিন্টন খেলত। সোমবার বিকেলেও তাকে ব্যাডমিন্টন খেলতে দেখেছেন এক প্রতিবেশী। পুরো ঘটনাটা এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না তাঁর। ডাফ স্ট্রিটের বাড়ির ঘরে ব্যাডমিন্টন র্যাকেটটা এখনও রাখা। তিনতলার সিঁড়িতে সাইকেলটা দাঁড় করানো।
মঙ্গলবার সকালে মায়ের হাত ধরে স্কুলবাসে উঠেছিল আরিয়ান দত্ত ওরফে গাবলু। ডিপিএস নিউ টাউনের ষষ্ঠ শ্রেণির ওই ছাত্রের সেই শেষ স্কুলে যাওয়া। টিফিনটাইমে গলায় খাবার আটকে প্রবল শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। রাতেই সল্টলেকের এক বেসরকারি হাসপাতালে মারা যায় আরিয়ান। |
আরিয়ানের দেহ এল বাড়িতে। বুধবার।—নিজস্ব চিত্র |
বুধবার দুপুর থেকেই বাড়ির সামনে অপেক্ষায় ছিলেন প্রতিবেশীরা। শেষ বারের মতো তখন বাড়ি ফিরবে গাবলু। যৌথ পরিবারের অন্য আত্মীয়েরা সবাই মিলে সামলাচ্ছিলেন আরিয়ানের মা শাশ্বতী দত্ত ও দিদা শুভ্রা দত্তকে। গাবলুর ভাই টুবলুর বয়স পাঁচ। বাড়িতে কান্নাকাটির পরিবেশে সে-ও চুপ করে বসে।
শাশ্বতীদেবী জানালেন, আরিয়ানকে মঙ্গলবার টিফিনে ডিম টোস্ট দিয়েছিলেন। একটু দ্রুতই খাওয়ার অভ্যাস ছিল ছেলের। স্কুলে অসুস্থ হওয়ার পরে প্রাথমিক চিকিৎসায় আরিয়ানের গলা থেকে বিস্কুটের টুকরো পান বলে দাবি স্কুল কর্তৃপক্ষের। আরিয়ানের জেঠু অরিজিৎ দত্ত বলেন, “ঠিক কী হয়েছিল, তা নিয়ে আমরা এখনও অন্ধকারে। ময়না-তদন্তের রিপোর্ট আসুক।”
আরিয়ানের স্কুল ডিপিএস-এর পরিবেশও এ দিন ছিল বিষন্ন ও থমথমে। স্কুলের মাঠ থেকে ক্লাসঘর সর্বত্রই একই কথা। কী ভাবে ঘটনাটা ঘটে গেল, এখনও বিশ্বাসই করতে চাইছে না কেউ। প্রধান শিক্ষিকা সোনালি সেন বলেন, “আজ স্কুল হয়েছে ঠিকই, কিন্তু ক্লাস না হওয়ারই মতো। বৃহস্পতিবার স্কুল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”
এ দিকে, ময়না-তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে জানা গিয়েছে, শ্বাসনালীতে খাবার আটকেই মৃত্যু হয়েছে আরিয়ানের। সল্টলেকের যে হাসপাতালে সে ভর্তি ছিল, সেখানকার জেনারেল ম্যানেজার অরিন্দম বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এমন ঘটনা বিরল। খাবার গলায় আটকে গেলে কী ভাবে মোকাবিলা করতে হয়, তা নিয়েও বিভিন্ন স্কুলে আমরা সচেতনতার প্রচারে কাজ করব।” হাসপাতাল সূত্রে খবর, সঙ্কটজনক অবস্থায় আরিয়ানকে আনার আগে ঠিক কী হয়েছিল, জানা যায়নি। তার চোখের মণি ছিল ঘোলাটে, নাড়িস্পন্দন ছিল না, ফুসফুস পুরোপুরি তরলে ভরা। কার্ডিয়াক ম্যাসাজ দিয়ে কিছুটা সাড়া পেলেও অবস্থার উন্নতি হয়নি। |