|
|
|
|
অনুমতি নেই, মন্ত্রী বললেন ‘ট্রায়াল’ |
দিঘার সৈকতে উড়লই না প্যারাগ্লাইডার |
সুব্রত গুহ • দিঘা |
সমদ্র সৈকতে পর্যটকদের চমক দিতে দিঘায় মোটরচালিত ‘প্যারাগ্লাইডিং’-এর উদ্বোধন করেছিল রাজ্য পর্যটন দফতর। কিন্তু প্রয়োজনীয় অনুমতি না-নেওয়ায় তা উদ্বোধনের পরেই বন্ধ করে দিতে হল।
গত বছর দিঘায় চালু হওয়া ‘প্যারাসেলিং’ও ইতিমধ্যে বন্ধ হয়ে গিয়েছে। প্যারাস্যুট টানার জিপে চড়ে সৈকতে শুধু পাক খান পর্যটকেরা (তা-ও অনুমতি ছাড়াই)। আর আছে কয়েক রকমের ‘বোট’। যা অবস্থা, তাতে ‘গোয়া’ হতে সত্যিই এখনও ঢের বাকি দিঘার।
উড়ানের শুরুতেই পতন কেন?
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ‘অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস’ চালু করতে হলে যুব কল্যাণ দফতরের অনুমতি লাগে। আসমানে উড়তে গেলে ‘ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ সিভিল অ্যাভিয়েশনে’র অনুমতি নেওয়া জরুরি। উপকূলে খেলাধুলো করতে হলেও ‘কোস্টাল রেগুলেটিং অথরিটি’ ও স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতি লাগে।
এ ক্ষেত্রে কোনও অনুমতিরই বালাই ছিল না। গত ২৬ ডিসেম্বর তড়িঘড়ি উদ্বোধনের সওয়ার হয়েছিলেন প্যারাগ্লাইডারে চেপে পড়েন পর্যটন মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী। একমুখ হাসি নিয়ে বলেন, “নিন্দুকেরা বলে, দিঘা গোয়া হবে না। আমরা তা করে দেখিয়ে দেব। দায়িত্ব পেয়েই প্যারাগ্লাইডিং-এর উদ্বোধন করেছি।” বিতর্ক শুরু হতেই অবশ্য ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে তাঁর মন্তব্য, “ওই দিন একটা ট্রায়াল হয়েছিল মাত্র। আইনানুগ অনুমতি নিয়েই পরে পুরোদমে প্যারাগ্লাইডিং চালু হবে।” |
|
এক দিনের প্যারাগ্লাইডিং। দিঘায় ছবি তুলেছেন সুব্রত গুহ। |
যে বেসরকারি সংস্থা প্যারাগ্লাইডিংয়ের দায়িত্ব পেয়েছে, সেটির অধিকর্তা রাজেন্দর সিংহ সিধু অবশ্য জানিয়েছেন, আইনি সমস্যা মেটানোর চেষ্টা চলছে। বৈধ অনুমতি-সহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র থাকলে দিঘার সৈকতে প্যারাগ্লাইডিং চালানো নিয়ে তাঁদেরও আপত্তি নেই বলে জানিয়েছেন জেলাশাসক পারভেজ আহমেদ সিদ্দিকি। কিন্তু অনুমতি নিয়ে প্যারাগ্লাইডিং কবে শুরু হবেনিশ্চিত করে বলতে পারেননি কেউই।
এই ভাবে আগু-পিছু না ভেবে তড়িঘড়ি উদ্বোধন করায় বস্তুত আগেও মুখ থুবড়ে পড়েছে প্রকল্প। গত বছর ১৩ জানুয়ারি ‘সমুদ্র উৎসবে’ এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিঘাকে আন্তর্জাতিক পর্যটন মানচিত্রে তুলে ধরার স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। সেই সময়ে এই বেসরকারি সংস্থাকে দিয়েই প্যারাসেলিং, জেট-স্কি, স্পিড-বোট, বিচ-বাইক চালু করেছিল যুব কল্যাণ দফতর। কিন্তু সমুদ্র উৎসবের পরেই এই প্রকল্প থেকে নিজেদের সরিয়ে নেয় তারা। বিপাকে পড়া বিনোদন সংস্থাটিকে তখন জায়গা খুঁজে ব্যবসা করার অনুমোদন দেয় রামনগর পঞ্চায়েত সমিতি। এখন তাদের কার্যালয় নিউ দিঘা থেকে কিছু দূরে। প্যারাসেলিং বন্ধ হয়ে গিয়েছে। আছে শুধু জিপে করে সৈকতে আর বোটে চাপিয়ে সমুদ্রে ঘোরানো।
ফলে, দিঘা সৈকতে ‘অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস’ নিয়ে প্রচারের ঢক্কানিনাদ শুনে যাঁরা নানা কল্পনা নিয়ে আসছেন, হতাশ হচ্ছেন সেই পর্যটকেরাও। যেমন, নৈহাটি থেকে সপরিবার এসেছিলেন চিন্ময় মোদক। এক রাশ ক্ষোভ নিয়ে তিনি বলেন, “ছেলেমেয়েরা ধরেছিল, প্যারাসেলিং করবে। কোথাও খুঁজে পাই না! শেষে সৈকতে একটা টেবিল নিয়ে এক জনকে বসে থাকতে দেখলাম। বলল, শুধু স্পিড বোট আর ব্যানানা বোট আছে। তার দামও এত বেশি যে সকলকে চড়ানো মুশকিল।”
হাওয়ায় উড়ে গিয়েছে উড়ানের স্বপ্ন। ভিজে বালুকাবেলায় আছড়ে পড়া সমুদ্রই শুধু এক ভাবে গুমরে চলেছে। |
|
|
|
|
|