|
|
|
|
খড়্গপুর শিল্পতালুকেই হচ্ছে হস্তশিল্প কেন্দ্র |
বরুণ দে • মেদিনীপুর |
মাস খানেক আগে হস্তশিল্প মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, “শুধু কি কাঠ, সিমেন্ট, লোহার শিল্পই শিল্প?” বেঙ্গল লিডসের উদ্বোধনী মঞ্চেও মুখ্যমন্ত্রী মুছে দিয়েছেন ভারী শিল্প আর ক্ষুদ্রশিল্পের ভেদাভেদ। পশ্চিম মেদিনীপুরে আক্ষরিক অর্থে সেই পার্থক্য দূর হতে চলেছে। খড়্গপুরে বিদ্যাসাগর ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক, যেখানে ইতিমধ্যেই ছোট-বড় বেশ কিছু কলকারখানা রয়েছে, এ বার সেখানেই গড়ে উঠতে চলেছে হস্তশিল্পীদের কেন্দ্র ‘কমন ন্যাচরাল ফাইবার সেন্টার’।
অন্যত্র হলে জমি অধিগ্রহণ করতে হতে পারে। শেষমেশ তাই খড়্গপুরে গড়ে ওঠা বিদ্যাসাগর ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক চত্বরেই গড়ে তোলা হচ্ছে ‘কমন ন্যাচরাল ফাইবার সেন্টার’। বুধবার বেলদার প্রশাসনিক সভায় এর শিলান্যাস করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ জন্য রাজ্যের শিল্পোন্নয়ন নিগম ২৫ একর জায়গা দিচ্ছে। প্রকল্পে ব্যয় হবে ২৩ কোটি ৬৮ লক্ষ টাকা। এক বছরের মধ্যে কাজ শেষ হবে বলে আশ্বাস দিয়েছে জেলা শিল্প কেন্দ্র। পশ্চিম মেদিনীপুরের হস্তশিল্পীরা যাতে আরও উন্নত মানের সামগ্রী তৈরি করতে পারেন, সে জন্যই এই উদ্যোগ। জেলা শিল্প কেন্দ্রের জেনারেল ম্যানেজার প্রহ্লাদ হাজরার বক্তব্য, “প্রকল্প রূপায়িত হলে জেলায় কুটির শিল্প প্রসারিত হবে। ক্ষুদ্রশিল্পের বাজার বাড়বে। শিল্পীরা আরও উৎসাহিত হবেন।” |
|
মুখ্যমন্ত্রী ঘোষিত বিভিন্ন প্রকল্পের ফলক। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল। |
প্রকল্পের ব্যয়ভার বহন করবে কেন্দ্র সরকার। প্রয়োজনীয় অর্থ আসবে ‘স্পেশাল ব্যাকওয়ার্ড রিজিয়ন গ্রান্ট ফান্ড’ থেকে। শুধু পশ্চিম মেদিনীপুরই নয়, রাজ্যের আরও ১০টি জেলায় এমন প্রকল্পের কাজ হবে বলে প্রশাসন সূত্রে খবর। মুখ্যমন্ত্রী ইতিমধ্যে ঘোষণা করেছেন, ক্ষুদ্রশিল্পের উন্নয়নে সরকার জোর দেবে। সেই মতো বিভিন্ন এলাকায় গ্রামীণ হাট তৈরির কাজ চলছে। রাজ্য সরকারের বক্তব্য, এর ফলে ক্ষুদ্র শিল্পের বাজার বাড়বে। ক্ষুদ্র-কুটির শিল্পের উন্নয়নে পদক্ষেপ করছে কেন্দ্রও। প্রশাসন সূত্রে খবর, কেন্দ্রের বরাদ্দ অর্থে গ্রাম পঞ্চায়েত, ব্লক ও জেলা স্তরে আরও কিছু প্রকল্পের পরিকল্পনা করা হয়েছে। যেমন, গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে কমিউনিটি প্রোডাকশন সেন্টার, ব্লক স্তরে কমিউনিটি ফেসিলিটি সেন্টার তৈরির পরিকল্পনা করা হয়েছে। এই সব সেন্টারে হস্তশিল্পীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। আধুনিক যন্ত্রপাতি থাকবে। আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ করা হবে। ‘ন্যাশনাল ফাইবার মিশন’ প্রকল্পের আওতায় গ্রাম পঞ্চায়েত, ব্লক ও জেলা স্তরে এই সব সেন্টার তৈরির কাজ হবে। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, “পশ্চিম মেদিনীপুরে হস্তশিল্পের বাজার রয়েছে। কুটির শিল্প নিয়ে জেলাবাসীর একটা আলাদা আগ্রহ রয়েছে। সব দিক খতিয়ে দেখেই খড়্গপুরে ‘ন্যাচরাল ফাইবার সেন্টার’ তৈরির সিদ্ধান্ত হয়েছে। এখানে আধুনিক যন্ত্রপাতি থাকবে। তার ফলে শিল্পীরা এখানে এসে কম সময় বেশি সামগ্রী তৈরি করতে পারবেন। তাঁদের প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা করা হবে।”
পশ্চিম মেদিনীপুরে প্রায় এক লক্ষ মানুষ কুটির শিল্পের সঙ্গে জড়িত। সবং, পিংলা, দাসপুর, চন্দ্রকোনা থেকে বেলপাহাড়ি, সর্বত্র শিল্পীরা ছড়িয়ে রয়েছেন। এ জেলায় পাথর খোদাই, পট, ডোকরা, বাঁশ, বেত, কাঁসা, পিতল থেকে শুরু করে জরি, সফট টয়েস, মাদুর, বাবুই ঘাসের সামগ্রী প্রভৃতি তৈরির শিল্প রয়েছে। তবে স্থায়ী বাজার না থাকায় শিল্পীদের সমস্যায় পড়তে হয়। আবার সরকারি উদ্যোগে প্রশিক্ষণেরও অভাব রয়েছে। ফলে সর্বত্র উন্নত মানের সামগ্রী তৈরি করা সম্ভব হয় না, যা রাজ্যের বাইরে কদর পেতে পারে। এই পরিস্থিতিতে ক্ষুদ্র-কুটির শিল্পের বাজার বাড়াতে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য সরকার।
প্রশাসন সূত্রে খবর, ন্যাশনাল ফাইবার মিশন প্রকল্পে জেলার জন্য বরাদ্দ হয়েছে ২৫৭ কোটি টাকা। ইতিমধ্যে কেন্দ্রের প্ল্যানিং কমিশন এই সংক্রান্ত প্রস্তাব অনুমোদন করেছে। বরাদ্দ অর্থে ‘কমিউনিটি প্রোডাকশন সেন্টার’, ‘কমিউনিটি ফেসিলিটি সেন্টার’ তৈরির কাজ হবে। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিকের বক্তব্য, “এখন অনেকেই ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করতে উৎসাহ দেখাচ্ছেন। রাজ্য সরকারও চাইছে, প্রতিটি জেলায় ক্ষুদ্র শিল্পের সংখ্যা বাড়ুক। এর ফলে বেকার যুবক-যুবতীদের কাজের সুযোগ বাড়বে। আগামী পাঁচ বছরের মধ্যেই সব প্রকল্পের কাজ শেষ করা হবে।” |
|
|
|
|
|