অমিত-আশ্বাসে চিঁড়ে ভিজছে না পর্যটনেও
মিতাভ বচ্চনের সঙ্গে পাল্লা দিতে এ বার নামলেন অমিত মিত্র।
গুজরাতের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর অমিতাভ বিজ্ঞাপনে বলেন, ‘কুছ দিন তো গুজারিয়ে গুজরাত মে’। অনেকটা সেই ঢঙেই অমিতবাবু আজ বললেন, “সুন্দরী পশ্চিমবঙ্গে আসুন। সেখানে বিনিয়োগ করুন এবং তাকে আরও সুন্দরী করে তুলুন আপনারা।”
কিন্তু ফিকি আয়োজিত পর্যটন সম্মেলনে থিম রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের অর্থমন্ত্রী এ দিন যে ডাক দিলেন, তা কি আদৌ অমিতাভের সমান অভিঘাত তৈরি করতে পারবে?
সম্মেলনে হাজির বিনিয়োগকারীদের অধিকাংশই কিন্তু নেতিবাচক উত্তর দিচ্ছেন। এবং সেটা অমিতবাবু জমি নিয়ে সংশয় কাটিয়ে দেওয়ার পরেও (বস্তুত, এই সম্মেলনে পশ্চিমবঙ্গের স্লোগানই হল: পর্যটনে লগ্নির ক্ষেত্রে সমস্যা নয় জমি)। এমনকী, যে রাজ্য খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নির বিরোধিতা করেছিল, তারা এ দিন জানিয়ে দিল, কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত মেনে পর্যটনে ১০০ শতাংশ বিদেশি লগ্নির অনুমতি দিচ্ছে তারা। তাতেও সংশয় কাটেনি লগ্নিকারীদের।
কেন? আলোচনায় হাজির পর্যটন সংস্থার প্রতিনিধিরা জমি ছাড়াও প্রশ্ন তুলেছেন পরিকাঠামো এবং লাল ফিতের ফাঁস নিয়ে। গুজরাত তো বটেই, মধ্যপ্রদেশ বা মহারাষ্ট্রেও যা নিয়ে বিশেষ ভাবতে হয় না লগ্নিকারীকে। অথচ এই সব প্রশ্নের স্পষ্ট জবাব নেই অমিতবাবু বা পর্যটন সচিব বিক্রম সেনের কাছে।
পর্যটন সংস্থার কর্তারা জানতে চান, পর্যটন ক্ষেত্রের আশেপাশে সড়ক, জল-বিদ্যুৎ-নিকাশির মতো নাগরিক পরিকাঠামো কে তৈরি করবে? রাজ্য সরকার পর্যটনের লগ্নির প্রস্তাবে ছাড়পত্রের জন্য এক-জানলা ব্যবস্থার কথা ঘোষণা করেছে। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, পুরসভা, দমকল থেকে শুরু করে পরিবেশ সংক্রান্ত হাজারো ছাড়পত্র জোগাড় করে দেওয়ার ব্যবস্থা কে করবে? সরকার জমির ব্যবস্থা করে দেবে বলছে। কিন্তু সেই লিজ নেওয়া জমির ভাড়া মেটানোর পরে ব্যবসা লাভজনক থাকবে তো? নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে ছাড়পত্র না মিললে প্রকল্পের খরচ বেড়ে যায়। তার দায়িত্ব কে নেবে? পর্যটন কেন্দ্রগুলির প্রচারের জন্য রাজ্য কী করছে?
জবাবে আশ্বাস দিয়েছেন অমিতবাবুরা, এক-জানলা ব্যবস্থায় সব ছাড়পত্রই যাতে পাওয়া যায়, সে জন্য পর্যটন দফতর রাজ্য সরকারের অন্যান্য দফতরের সঙ্গে আলোচনা করছে। ডুয়ার্সের গজলডোবা থেকে সুন্দরবনের ঝড়খালির মতো যে সব বড় প্রকল্পে লগ্নির প্রস্তাব চাওয়া হচ্ছে, সেখানে পূর্ত দফতর ও অন্যরা পরিকাঠামো গড়ার কাজ শুরু করেছে। পর্যটন সচিবের বক্তব্য, জমি ৩০ বছরের জন্য লিজে দেওয়া হবে। কম সুদে ঋণের ব্যবস্থাও করবে রাজ্যের আর্থিক নিগম। তবে এক-জানলা ব্যবস্থায় ছাড়পত্র দেওয়ার সময়সীমা বেঁধে দেওয়া সম্ভব নয় বলেই সরকারি সূত্রের বক্তব্য। কারণ, এক একটি প্রকল্পের জন্য এক এক রকম ছাড়পত্র প্রয়োজন।
এই অস্পষ্ট আশ্বাসে যে চিঁড়ে ভিজবে না, সেটা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে লগ্নিকারীদের কথাতেই। পরিকাঠামো নিয়ে তাঁদের সাফ কথা, রাজ্যের বহু জায়গার যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল নয়। গ্লোবাল ট্রাভেল সংস্থার অলিন্দ্র চট্টোপাধ্যায় যেমন বললেন, “বর্তমান পর্যটন কেন্দ্রগুলির পরিকাঠামো উন্নত করলেও অনেক লাভ। কিন্তু উত্তরবঙ্গেই তো অধিকাংশ জায়গায় রাস্তার হাল শোচনীয়।” ডাইউইক হোটেলসের কর্ণধার দেবাশিস ঘোষালের প্রশ্ন, “তারাপীঠে যাওয়ার রাস্তাটা এত খারাপ কেন?”
উপস্থাপনা কিন্তু যথাসম্ভব ঝকঝকে করতে চেয়েছেন অমিতবাবুরা। প্রাইসওয়াটারহাউস কুপার্সকে দিয়ে ‘স্লাইড-শো প্রেজেন্টেশন’ তৈরি করা হয়েছিল। প্রতিটি প্রকল্প ধরে ধরে কোথায় কত জমি রয়েছে, কোথায় কত টাকার বিনিয়োগের সম্ভাবনা, কবে দরপত্র ডাকা হবে, কবে বরাত দেওয়া হবে, তা জানিয়ে দেন অমিতবাবু। মোট ৪৮০ একর জমিতে ৩ হাজার ৫৬০ কোটি টাকার বিনিয়োগের প্রস্তাব রাখা হয়েছে। অমিতবাবুর বক্তব্য, “সব জমিই সরকারের জমি। অধিগ্রহণ বা উচ্ছেদ সংক্রান্ত কোনও সমস্যাই হওয়ার কথা নয়।” লগ্নিকারীদের জন্য কী কী কর ছাড় বা অন্য সুবিধা দেওয়া হচ্ছে, তা-ও জানানো হয়েছে।
কিন্তু বিনিয়োগকারীদের সংশয় যাচ্ছে না। ওয়ার্ল্ড হোটেলস-এর আঞ্চলিক ডিরেক্টর নরেশ চান্দনানির বক্তব্য, “রাজ্যের এ দিনের উপস্থাপনা ভাল। কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি তো আলাদা। আমি পশ্চিমবঙ্গের থেকে সিকিমে যেতে বেশি আগ্রহী হব।”
কেন এমন ভাবছেন তাঁরা?
নরেশ চান্দনানির জবাব, “আসলে পশ্চিমবঙ্গ সম্পর্কে ব্যবসায়ীদের মনোভাব তলানিতে ঠেকেছে। তাই রাজ্য সরকার যে এক-জানলা ব্যবস্থার কথা বলছে, তা-ও কতটা কাজ করবে, তা নিয়ে সন্দেহ আছে।”
এই অবস্থায় সেই গুজরাতেরই শরণ নিতে চেয়েছেন অমিতবাবু। ফিকি-র মহাসচিব থাকাকালীন তাঁর চেষ্টাতেই আমেরিকা থেকে গুজরাতি পটেলরা ভারতে বিনিয়োগ করতে এসেছিলেন। পশ্চিমবঙ্গের অর্থমন্ত্রী অমিতবাবুর আহ্বান, “গুজরাতের পটেলরা এ বার পশ্চিমবঙ্গে বিনিয়োগ করুন।” পর্যটন দফতরের উপদেষ্টা দীনেশ ত্রিবেদীও
বললেন, “খালি কনের ছবি দেখে কি বিয়ে হয়? আপনাদের যাতে কয়েক দিনের জন্য পর্যটন কেন্দ্রগুলি ঘুরিয়ে দেখানো হয়, সেই প্রস্তাব রাখছি পর্যটন সচিবের কাছে।”
এত কিছুর পরেও কি অমিত পারবেন অমিতাভের সঙ্গে পাল্লা দিতে? এ দিনের সম্মেলনে অন্তত তেমন কোনও উজ্জ্বল ইঙ্গিত নেই।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.