গৌরাঙ্গ বিগ্রহকে ঘিরে প্রতি বছর মকর সংক্রান্তিতেই উদ্ধারণপুর মেতে ওঠে উৎসবে। সঙ্গে পালিত হয় মহাপ্রভুর ভক্ত উদ্ধারণ দত্তের তিরোভাব দিবসও। কীর্তন, ভজন থেকে শুরু করে নাগরদোলা, কাঠের হাতা মেলায় বিকিকিনি চলে সবেরই। প্রায় দুশো বছরের পুরনো এই মেলার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে ইতিহাসও।
জনশ্রুতি রয়েছে, মহাপ্রভুর অন্যতম ভক্ত নিত্যানন্দের পার্ষদ ছিলেন উদ্ধারণ দত্ত। তিনিই গৌর নিতাইয়ের এই বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করেন। তবে নিত্যানন্দের মৃত্যুর পরে উদ্ধারণ দত্ত বৃন্দাবনে চলে যান। তখন থেকেই উদ্ধারণ দত্তের প্রতিষ্ঠা করা ওই বিগ্রহেরই পুজো শুরু করে সোনারুন্দি রাজ পরিবার। উদ্ধারণপুর সেই সময় সালার থানার সোনারুন্দি রাজ পরিবারের অন্তর্গত ছিল। পরবর্তীতে উদ্ধারণপুরের ওই মন্দির নষ্ট হয়ে গেলে রাজ পরিবারের সদস্যেরা বিগ্রহগুলি সোনারুন্দিতে নিয়ে চলে যান। তারপর থেকেই ফি বছর মকর সংক্রান্তির দু’দিন আগে রাজপরিবার থেকে বিগ্রহগুলি উদ্ধারণপুরে নিয়ে আসার রেওয়াজ শুরু হয়। ১৮২৫ খ্রিস্টাব্দের পরে মেলার পুর্নপ্রতিষ্ঠা করেন সোনারুন্দির রাজা জগদীন্দ্র বনওয়ারিলাল বাহাদুর। |
ভিড় জমেছে মেলা ময়দানে। নিজস্ব চিত্র। |
কাটোয়ার লোক গবেষক তারকেশ্বর চট্টোরাজের দাবি, “রাজ পরিবারের নথিতে উদ্ধারণপুরকে বনওয়ারিগঞ্জ হলে চিহ্নিত করা আছে।” তবে জনশ্রুতি উদ্ধারণ দত্তের নামেই এই গ্রামের নাম।
উদ্ধারণপুরে ভাগীরথীর তীরের একটি মাঠে সোমবার থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছে মেলা। চলবে শুক্রবার পর্যন্ত। অন্যান্য মেলার মতো এখানেও নাগরদোলা থেকে কাঠের রকমারি জিনিস সবই হাজির। বিক্রিও হয় দেদার। এ বছর শতাধিক দোকান বসেছে মেলায়। আয়োজন রয়েছে ভজন, কীর্তনের আসরেরও। মেলা দেখতে আশেপাশের জেলাগুলি থেকেও লোক সমাগম হয়।
সোনারুন্দি রাজ পরিবারের সদস্যেরাই মেলা পরিচালনা করেন। তবে জমিদারি প্রথা উচ্ছেদ হয়ে যাওয়ার পরে মোলার কৌলিন্য হারিয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে রাজ পরিবারের হয়ে মেলা পরিচালনার দায়িত্ব নেয় স্থানীয় বাসিন্দারাই। স্থানীয় সমীরচন্দ্র দাস, অনুপ মাঝিরা বলেন, “দূর থেকে মেলা দেখতে আসা মানুষজন মেলার মাঠেই রান্না-খাওয়া সেরে নেন।” স্থানীয় এক আশ্রমের স্বামী গম্ভীরানন্দ জানান, উদ্ধারণ দত্তের তিরোভাব উপলক্ষে মকর সংক্রান্তির দিন শ্রাদ্ধ করা হয়। পরের দিন দূরদূরান্তের ভক্তেরা উদ্ধারণপুরে এসে খিচুড়ি রান্না করেন। মেলার মাঠে রান্না করা খাবারও নিয়ে আসেন অনেকে।
তবে এ বছর থেকে সুষ্ঠু ভাবে মেলা পরিচালনা করার জন্য স্থানীয় সীতাহাটি পঞ্চায়েত একটি প্রশাসনিক কমিটি গঠন করেছে। পঞ্চায়েত প্রধান বিকাশ বিশ্বাস বলেন, “অনেক সময় মেলা চলাকালীন গোলমাল হয়। তাই সুষ্ঠু ভাবে মেলা পরিচালনার জন্য এই কমিটি গঠন করা হয়েছে।” গত বছরই উদ্ধারণপুর থেকে সোনারুন্দিতে বিগ্রহ নিয়ে যাওয়ার সময়ে অশান্তি হয়েছিল। |