পার্ক স্ট্রিটের ঘটনায় যেমন, কাটোয়া গণধর্ষণের পরে বছর ঘুরতে চললেও চার্জ গঠন হয়নি। নির্যাতিতা মহিলা ও তাঁর পরিবারের লোকজন চাইছেন, ফাস্ট ট্র্যাক আদালতে দ্রুত অভিযুক্তদের বিচার হোক।
গত বছর ২৫ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় কাটোয়া-আমোদপুর ন্যারোগেজ ট্রেনে ১১ বছরের মেয়েকে নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন ওই বিধবা মহিলা। বীরভূমের কীর্ণাহার থেকে তিনি ট্রেনে চাপেন। বর্ধমানের কেতুগ্রামে পাঁচুন্দি ও অম্বলগ্রাম স্টেশনের মাঝে ট্রেন আটকে লুঠপাট চালায় কিছু দুষ্কৃতী। তখনই মহিলাকে নামিয়ে নিয়ে গিয়ে গণধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ।
২৮ ফেব্রুয়ারি রেলপুলিশই মহিলার জামাকাপড় ও দেহরসের নমুনা ফরেন্সিক পরীক্ষায় পাঠিয়েছিল। ফরেন্সিক বিভাগ সূত্রের খবর, কয়েক দিন আগে কাটোয়া রেলপুলিশের ওসি মারফত সিল করা খামে কাটোয়ার এসিজেএম-এর কাছে রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে। বর্ধমানের এসপি সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জা বলেন, “আমরা ফরেন্সিক রিপোর্ট হাতে পাইনি। পেলেই ফের সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট দেব।” মহিলার বক্তব্য, “আইনের মারপ্যাঁচ বুঝি না। শুধু চাই, দ্রুত বিচার করে দোষীদের শাস্তি দেওয়া হোক।”
কাটোয়া রেলপুলিশ ডাকাতির ঘটনার তদন্ত করলেও ধর্ষণের মামলা রয়েছে কেতুগ্রাম থানার হাতে।
গত বছর ৩০ মে তদন্তকারী অফিসার কাটোয়া আদালতে চার্জশিট পেশ করেন। পরে দু ’টি ‘সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট’ও জমা দেওয়া হয়। ১৮৬ পাতার চার্জশিটে আট জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছিল। এর মধ্যে সাত জন ধরা পড়েছে। তিন জন ইতিমধ্যে হাইকোর্ট থেকে জামিনও পেয়ে গিয়েছে।
আগেই কাটোয়া উপ-সংশোধনাগারে গিয়ে মূল অভিযুক্ত রেজাউল মির্জা-সহ তিন জনকে শনাক্ত করেছেন মহিলা ও তাঁর মেয়ে। মুর্শিদাবাদের বড়ঞার বাসিন্দা মির্জা ছাড়াও কেতুগ্রামের স্বপন শেখ, বীরভূমের লাভপুর থানার চৌহাট্টার নয়ন শেখ ও কাটোয়ার সেন্টু শেখ আপাতত জেল হাজতে। চার্জশিটে নাম থাকা সত্ত্বেও কেতুগ্রামের কায়েশ শেখকে পুলিশ ধরতে পারেনি। চৌহাট্টার ফটিক শেখ, কাটোয়ার নুর মহম্মদ এবং নানুরের পোষলা গ্রামের কালাম শেখ জামিন পেয়েছে।
পুলিশের একাংশের দাবি, বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে চার্জশিটের প্রতিলিপি নিচ্ছিল না অভিযুক্তেরা। হাইকোর্টে নুর মহম্মদের জামিনের শুনানির সময়ে বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীকে তা জানানো হয়। সাত দিনের মধ্যে চার্জশিটের প্রতিলিপি অভিযুক্তদের হাতে পৌঁছে দেওয়ার জন্য কাটোয়া আদালতকে নির্দেশ দেন তিনি।
দেরি হয়েছে আইনজীবী নিয়োগে জটিলতার ফলেও। বর্ধমানের সরকারি আইনজীবী (পিপি) সুব্রত হাটি এই মামলায় অতিরিক্ত সরকারি আইনজীবী (এপিপি) হিসেবে নিয়োগ করেছিলেন প্রসেনজিৎ সাহাকে। কিন্তু আগেই এক অভিযুক্তের সহযোগী আইনজীবীর দায়িত্ব নিয়ে ফেলায় তিনি এই নিয়োগ নিতে চাননি। গত ৫ জানুয়ারি তাঁর বদলে নিয়োগ করা হয় কাঞ্চন মুখোপাধ্যায়কে। পুলিশ সুপার বলেন, “কাটোয়ার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক সমস্ত অভিযুক্তকে ৩০ জানুয়ারি আদালতে হাজিরা হতে নির্দেশ দিয়েছেন। আশা করি, তার মধ্যেই চার্জ গঠন হবে।” |