|
|
|
|
কৃষিমেলা হচ্ছে, জানা ছিল না বহু কৃষকেরই |
নিজস্ব সংবাদদাতা • আসানসোল |
ঘটা করে মেলার আয়োজন হয়েছে। নানা রকম স্টল, প্রশ্নোত্তরের জন্য মঞ্চ, অভিজ্ঞতা আদানপ্রদান করতে বিশেষজ্ঞ, সবই রয়েছে। কিন্তু যাঁদের জন্য এই আয়োজন, তাঁদেরই বিশেষ দেখা নেই। আসানসোল মহকুমা কৃষিমেলা করে তাই শুধু সরকারি অর্থের অপচয় ছাড়া আর কিছু হল না, অভিযোগ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির। তাদের দাবি, মহকুমার অধিকাংশ চাষিই এই মেলার কথা জানতেন না। রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী মলয় ঘটকের অবশ্য দাবি, এ সবই বিরোধীদের অপপ্রচার।
মঙ্গলবার থেকে আসানসোলের রবীন্দ্রভবনের মাঠে দু’দিনের কৃষিমেলার আয়োজন করে কৃষি দফতর। মহকুমার আটটি ব্লকের চাষিদের সেখানে হাজির করানোর কথা। মেলার উদ্বোধন করে কৃষিমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, ফসলের মানোন্নয়ন, মাছ ও পশু পালনের গুণগত উৎকর্ষতা বাড়ানোর জন্যই এই আয়োজন। মেলার মাঠে থাকবেন কৃষিকাজ, মাছ ও পশুপালন দফতরের বিশেষজ্ঞেরা। তাঁরা কৃষকদের প্রশ্নের উত্তর দেবেন ও তাঁদের নানা উপদেশ দেবেন। একই সঙ্গে নানা এলাকা থেকে চাষিরা তাঁদের উৎপাদিত ফসল প্রদর্শন করবেন ও অভিজ্ঞতা আদানপ্রদান করবেন।
|
|
হাজির হরেক সব্জি। নিজস্ব চিত্র। |
কিন্তু বেশির ভাগ কৃষকই এই মেলার খবর পাননি বলে অভিযোগ। যাঁরা নিজেদের গরজে এসেছেন, তাঁদের অভিজ্ঞতাও খুব ভাল নয়। সারা ভারত কৃষকসভার রাজ্য কমিটির সদস্য মনোজ মুখোপাধ্যায় অভিযোগ করেন, ব্লকের অধিকাংশ চাষিই এই মেলার কথা জানতে পারেননি। কৃষকদের বদলে অন্য লোকজন এনে মাঠ ভরানোর ব্যবস্থা হয়েছে। দূরদূরান্তের প্রত্যন্ত গ্রামগুলির চাষিরা অর্থের অভাবে শহরে পৌঁছতে পারেননি। যারা নিজেদের উদ্যোগে শেষ পর্যন্ত মাঠে পৌঁছতে পেরেছেন, তাঁদের বেশির ভাগই বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বিশেষ কথাবার্তা বলার সুযোগ পাননি। মনোজবাবুর বক্তব্য, “সরকারি অর্থের অপচয়ে লোক দেখানো মেলা হয়েছে। এর চেয়ে পঞ্চায়েত স্তরে ছোট আকারের কর্মসূচি নিলে অনেক ভাল ফল হত।”
মহকুমা স্তরে এ ধরনের কৃষিমেলার আয়োজন যুক্তিযুক্ত নয় বলে মন্তব্য করেছেন প্রদেশ কংগ্রেসের সদস্য তথা সালানপুর পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি শ্যামল মজুমদার। তাঁর দাবি, “যাঁদের জন্য মেলার আয়োজন সেই কৃষকদেরই তো বেশি সংখ্যায় মাঠে আনা যায়নি। তা হলে কী লাভ হল?”
বিরোধীদের অভিযোগ যে মিথ্যা নয়, বুধবার মেলার মাঠে গিয়ে তা বোঝা গিয়েছে। কুলটির রানিতলা থেকে এসেছিলেন কৃষিজীবী দীপক চৌধুরী। তিনি জানান, মেলার খবর তিনি জানতেনই না। শেষ মুহুর্তে খবর পেয়ে মাঠে এলেও কোনও লাভ হয়নি তাঁর। সালানপুরের চলবলপুর এলাকার তারাপদ বাউরি বলেন, “আমি মাছ চাষ করি। ভেবেছিলাম এসে নতুন কিছু শিখব। কিন্তু আমার আসার আগেই বিশেষজ্ঞেরা চলে গিয়েছেন।” খুদিকার বাসিন্দা নারু গড়াইয়ের অভিযোগ, “মেলার খবর আগে জানতাম না।” |
ধান দেব মেপে
দুর্গাপুর মহকুমা |
পাঁচটি সরকারি এজেন্সিকে মাঠে নামিয়ে ধান কিনছে রাজ্য সরকার। কিন্তু চাষিরা কি আদৌ সরকারি
শিবিরে ন্যয্য মূল্যে বিক্রি করতে পারছেন ধান? না কি খোলাবাজারে অভাবী বিক্রিই ভবিতব্য? |
এ বছরের উৎপন্ন ধান সাড়ে চারশো বস্তা। গ্রামের সমবায় কেন্দ্র এখন বন্ধ। নিকটতম চালকল
রয়েছে এক কিমি দূরে। এ বার সরাসরি
চালকলে ধান বিক্রি করছি। টাকা পেতে সমস্যা হচ্ছে না।
শ্রীরূপ মণ্ডল, বড় চাষি
গ্রাম ত্রিলোকচন্দ্রপুর,
থানা কাঁকসা
|
এ বছরের উৎপন্ন ধান প্রায় ৭০ বস্তা। গ্রামের
সমবায় কেন্দ্র এখন বন্ধ। নিকটতম চালকলের
দূরত্ব এক কিমি। আমার কোনও কাগজপত্র না
থাকায় সরকারি দরেধান বিক্রি করতে পারিনি।
কান্তি গড়াই, প্রান্তিক চাষি
গ্রাম ত্রিলোকচন্দ্রপুর,থানা কাঁকসা |
|
ধান মজুত করার ক্ষমতা নির্দিষ্ট কিছু নয়। চাষিরা ধান
নিয়ে
এলেই কিনে নেওয়া হবে।
এ বছর ধান কেনা
শুরু হয়েছে।
দু-তিন দিনের মধ্যে চাষিদের চেক
দিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
গত বছর লেভি ছিল না।
বিপ্লব মুখোপাধ্যায়,
চালকল কর্মী
ত্রিলোকচন্দ্রপুর
থানা কাঁকসা |
কাঁকসার বিদবিহারে ৮-১২ জানুয়ারি শিবির হয়েছে।
প্রায় ৫১৬ কুইন্টাল ধান কেনা হয়েছে। আপাতত
জয়দেব
মেলার জন্য ওই শিবির বন্ধ আছে। অন্ডাল-
পাণ্ডবেশ্বরে ২১ জানুয়ারি থেকে শিবির হতে পারে। খোকনচন্দ্র বাউরি,
খাদ্য নিয়ামক
দুর্গাপুর মহকুমা |
|
|
|
সদস্য সংখ্যা ২৪৯৫। ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা ১০০০০ মেট্রিক টন। তবে এখনও কেনা শুরু হয়নি।
আগের বছর চেক পেতে সমস্যা হয়েছিল। এ বার সব দেখে নিয়েই ধান কিনতে নামব।
শেখ সুফিয়ার রহমান,সমবায় কর্তা
কৌচা সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতি লিমিটেড |
|
মেলার মাঠে কৃষকদের উপস্থিতি আশানুরূপ নয়, তা স্বীকার করেছেন আসানসোলের পশুপালন দফতরের চিকিৎসক শুভাশিস পাল। তাঁর দাবি, মহকুমায় কমবেশি দু’লক্ষ মানুষের পশুপালন করে জীবিকা নির্বাহ হয়। কিন্তু এই দু’দিনের মেলায় বড়জোর দু’শো জন তাঁর কাছে পরামর্শ নিতে এসেছেন। তাঁর মতে, “এ বছর প্রথম হল। আরও একটু প্রচার দরকার ছিল।” বারাবনি ব্লকের প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন আধিকারিক দেবব্রত রায়ও মনে করেন, মেলায় কৃষিজীবীদের উপস্থিতি কম ছিল। তিনি বলেন, “গ্রামস্তরে এ ধরনের কর্মসূচি করলে ভাল ফল মেলে।” মৎস্য দফতরের জেলা আধিকারিক সজল সাহাও জানান, ব্লকস্তর থেকেই মাছচাষিদের উদ্বুদ্ধ করা দরকার।
কৃষিমন্ত্রী মলয়বাবুর অবশ্য দাবি, সব ব্যাপারেই বিরোধীরা নেতিবাচক হয়ে উঠছেন। তাঁর কথায়, “ওদের জানা উচিত, ব্লকে স্তরেও এ ধরনের কৃষিমেলা হচ্ছে। কৃষকদের জন্য রাজ্যে এ রকম মেলা আমরাই প্রথম করলাম।” এমন মেলার ফল সুদূরপ্রসারী বলেও দাবি কৃষিমন্ত্রীর। |
|
|
|
|
|