গ্রামোন্নয়নের ব্যাপারে সিপিএম পরিচালিত শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের সভাধিপতি পাসকেল মিন্জ-এর আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। সোমবার দুপুরে ফাঁসিদেওয়া পঞ্চায়েত সমিতির একটি অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকেই সভাধিপতির সমালোচনা করেন। গৌতমবাবু বলেন, “উন্নয়নের ক্ষেত্রে আমরা রং, দল দেখি না। কিন্তু মহকুমা পরিষদের সভাধিপতির উন্নয়ন নিয়ে আন্তরিকতা কতটা জানি না। দুটি বৈঠকে যোগ দেওয়া ছাড়া আজ অবধি উনি আমার সঙ্গে দেখাও করেননি। পরিষদের সামগ্রিক স্ট্যাটাস রিপোর্ট পাঠানো তো দূরের কথা, গ্রামীণ এলাকার উন্নয়নের প্রস্তাব, পরিকল্পনা নিয়ে কোনও আলোচনাও আজ অবধি করেননি।”
এর পরেই মন্ত্রী’র সংযোজন, “মানুষের কাছে আমরা সবাই দায়বদ্ধ। কাজের ক্ষেত্রে সিপিএম, কংগ্রেস দেখি না। গ্রামীণ এলাকায় এক প্রচুর কাজ শুরু করেছি। আমরাও পরিকল্পনা তৈরি হচ্ছে। ফাঁসিদেওয়ার বিধায়ককে এক দিন দফতরে আসতে বলেছি। এই পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি অনুষ্ঠানের কথা বলায় এসেছি। এ বার ঠিক করেছি, মহকুমা পরিষদে গিয়ে বৈঠক করব।” উল্লেখ্য, ফাঁসিদেওয়ার বিধায়ক কংগ্রেসের। পঞ্চায়েত সমিতিও কংগ্রেসের দখলে।
সম্প্রতি মহকুমা গ্রামীণ এলাকায় সজলধারা প্রকল্পের টাকা নিয়ে অন্তত ১০ কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ সামনে আসে। তা নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়। ওই তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসেনি। উপরন্তু, সজলধারায় নয়ছয়ের ঘটনায় অভিযুক্তদের আড়াল করতে প্রভাবশালী নেতা-কর্তাদের একাংশ সক্রিয় বলে পরিষদের অন্দরেই অভিযোগ উঠেছে। মহকুমা পরিষদের ওই দুর্নীতি নিয়ে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী অবশ্য কোনও প্রতিক্রিয়া জানাননি। এমনকী, তাঁর বক্তব্যে পরিষদের আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হলেও সজলধারার প্রসঙ্গ না-থাকায় পরিষদের নেতা-কর্তাদের অনেকেই কিছুটা হলেও স্বস্তিতে। তবে মন্ত্রীর অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন সিপিএম নেতা তথা সভাধিপতি পাসকেল মিনজ। সভাধিপতি বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠক-সহ বহু বৈঠকে আমাদের ডাকাই হয়নি। তাও আমি কয়েকটি বৈঠকে গিয়েছি। বেশির ভাগ সময় একটা কার্ড বা চিঠি পাঠানো হয়। আর কিছু জানানো হয় না। পঞ্চায়েত ভোট আসছে। তাই গৌতমবাবুরা গ্রামে গিয়ে রাজনীতি শুরু করেছেন।” পরিষদের স্ট্যাটাস রিপোর্ট কলকাতায় সঠিক সময়েই পাঠিয়ে দেওয়া হয় বলে সভাধিপতি দাবি করেছেন। এদিন ফাঁসিদেওয়া পঞ্চায়েত সমিতির হলঘরে ব্লকের সাতটি পঞ্চায়েত এলাকার ২৯০ জনকে ইন্দিরা আবাস যোজনার দ্বিতীয় কিস্তির ২২ হাজার ৫০০ টাকা চেক দেওয়া হয়। একই সঙ্গে ৭৩ জনকে জমির পাট্টা দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে কংগ্রেস বিধায়ক প্রাক্তন মন্ত্রী সুনীল তিরকে ইন্দিরা আবাস যোজনার প্রকল্পকে কেন্দ্রীয় প্রকল্প বলে উপভোক্তাদের জানান। পরে বক্তব্য রাখতে উঠে মন্ত্রী বলেন, “কেন্দ্র বলে আসলে কিছুই হয় না। সব রাজ্যকে নিয়েই কেন্দ্র। দিল্লিও একটি রাজ্যই। মানুষের টাকাই নানা প্রকল্পের মাধ্যমে মানুষের হাতে তুলে দেওয়া হয়।” মন্ত্রী অনুষ্ঠানে জানান, ফাঁসিদেওয়ায় একটি কলেজ, স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর উন্নতি, কয়েকটি স্কুলকে হাইস্কুলকে উন্নীত করা হবে। দ্রুত ১০ একর জায়গায় রবীন্দ্রভারতীর দ্বিতীয় ক্যাম্পাস তৈরি হবে। পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি প্রণবেশ মণ্ডল, বিধায়কের সঙ্গে আলোচনা করে সব ঠিক হবে। এদিন ইন্দিরা আবাসের উপভোক্তাদের বিডিও বীরুপাক্ষ মিত্র ঘর তৈরির পাশাপাশি শৌচালয়, রান্নার চুল্লি তৈরি করার কথা জানিয়ে দেন। |