নেদলি বর্মন, সোহাগি বর্মন, নির্মলা বর্মন হতদরিদ্র তিন বৃদ্ধা বালুরঘাটে নাজিরপুর অঞ্চলের কইগ্রামের বাসিন্দা। কুঁড়ে ঘরের আস্তানায় কোনও রকম মাথা গুঁজে থাকেন। যোগ্যতার মাপকাঠিতে উতরে গেলেও ইন্দিরা আবাসের ঘর চেয়ে পঞ্চায়েতে দরবার করে পাননি। বালুরঘাটের জলঘর গ্রাম পঞ্চায়েতের রাধানগরের উপেন বাস্কে বা চককাশির মঞ্জু সরকার, দানকিশ পাহানদের মতো বৃদ্ধবৃদ্ধারা গত চার বছর ধরে মাথা গোঁজার আস্তানা চেয়ে পঞ্চায়েতে ঘুরেছেন। তালিকায় নাম উঠলেও জোটেনি ঘর। অথচ গত চার বছর ধরে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায় ইন্দিরা আবাস যোজনা খাতেৃ ৮টি পঞ্চায়েত সমিতিতে ২১ কোটি টাকা পড়ে রয়েছে বলে প্রশাসনিক সূত্রের খবর। বালুরঘাট পঞ্চায়েত সমিতিতে পড়ে প্রায় ৯ কোটি টাকা। বরাদ্দ টাকার অন্তত অর্ধেক খরচ করতে না পারায় সামনের আর্থিক বছরে বরাদ্দ মিলবে না বলে স্বীকার করে নিয়েছেন জেলাশাসক দুর্গাদাস গোস্বামী। তিনি বলেন, “হাতে থাকা ২১ কোটি টাকার ১০ কোটি টাকা মার্চের মধ্যে খরচ করতে না পারলে সামনের বছরে টাকা নাও মিলতে পারে।”
গত চার বছর ধরে ধরে বরাদ্দের ৫০ শতাংশ খরচ করে নতুন অনুদান পেয়েছে জেলায়। কিন্তু টাকা খরচ না হওয়ায় তা জমতে জমতে ২১ কোটিতে এসে দাঁড়িয়েছে। এই অবস্থা সামাল দিতে বালুরঘাট মহকুমার ৪টি এবং গঙ্গারামপুরে ৪টি ব্লকে জরুরি বিশেষ শিবির করে উপভোক্তাদের ইন্দিরা আবাসের টাকা বিলি শুরু হয়েছে। বালুরঘাট পঞ্চায়েত সমিতি থেকে গত মাসে ৪৭০ জনের মধ্যে ১ কোটি ৫ লক্ষ, কুমারগঞ্জ ব্লকে ৫১১ জনকে ২ কোটি ৩০ লক্ষ এবং হিলি ব্লকে ৭৭ জনকে ৩৪ লক্ষ ৬৫ হাজার টাকা বিলি করা হয়। গঙ্গরামপুরেও ৪টি ব্লকে টাকা বিলি হচ্ছে। তবে ৮টি ব্লকেই কমবেশি ২-৩ কোটি টাকা পড়ে রয়েছে। কেন এমন পরিস্থিতি? জেলা পরিষদের সচিব পীযূষ গোস্বামী বলেন, “২০১০ সালে প্রকল্পটি পঞ্চায়েতের হাত থেকে পঞ্চায়েত সমিতির উপর ন্যস্ত হয়। এতে দেরি হয়।” জেলা প্রশাসনের দাবি, ভূমিহীন এবং গৃহহীন উপভোক্তাদের বাছাই প্রক্রিয়া নিয়ে পঞ্চায়েতের তরফে তৎপরতার অভাবে প্রকল্প ঝুলে যায়। বর্তমানে অধিকাংশ পঞ্চায়েত এবং পঞ্চায়েত সমিতি বামেদের দখলে। অভিযোগ, বাম পরিচালিত পঞ্চায়েত পঞ্চায়েত ভোটের কথা মাথায় রেখেই টাকা বিলি করতে দেরি করেছে। জলঘর পঞ্চায়েতে বিরোধী তৃণমূল সদস্য সুশীল মণ্ডল বলেন, “ অন্তত ৩০০ গরিব ইন্দিরা আবাসের ঘর পাননি।” নাজিরপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল নেতা বিভাস চট্টোপাধ্যায় বলেন, “৬০০ গরিব ঘর পাচ্ছেন না।” বালুরঘাট পঞ্চায়েত সমিতির আরএসপি সভাপতি ক্ষিতীশ সরকার বলেন, “নানা সমস্যার টাকা বিলিতে দেরি হয়। তবে শিবির করে তা বিলির বন্দোবস্ত করা হয়েছে।” |