কোনও রকম আলোচনা বা নথি তৈরি না করেই বাম জমানায় মেয়াদ উত্তীর্ণ প্রায় দেড় কোটি টাকার ওষুধ চুপিসাড়ে কেন ফেলা হচ্ছিল তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে পুরসভার অন্দরেই। কংগ্রেস, তৃণমূলের একাংশের অভিযোগ, বামেদের বাঁচাতেই এই কাজ হচ্ছিল কি না তা খতিয়ে দেখা হোক। বাম জমানায় ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডে হেলথ পোস্টে ৫০ হাজার টাকার মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ মাটিতে পুঁতে ফেলার খবর পেয়ে হইচই ফেলে দেন তখনকার বিরোধী কাউন্সিলর রঞ্জন শীলশর্মা। অথচ এখন কাউকে কিছু না জানিয়ে প্রায় দেড় কোটি টাকার ওষুধ ডাম্পিং গ্রাউন্ডে ফেলে বামেদের বাঁচাতে চেষ্টা হচ্ছিল কি না সে প্রশ্ন উঠেছে। এ ব্যাপারে পুর কর্তৃপক্ষকে নিয়ে বৈঠক ডাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব। থাকবেন স্বাস্থ্য দফতরের প্রতিনিধিরাও।
বাম জমানায় পুরসভায় কোথায় কী অনিয়ম, দুর্নীতি হয়েছে মেয়রকে বারবার শ্বেতপত্র আকারে প্রকাশ করার দাবি জানিয়েছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী এবং তাঁর দল। অথচ মেয়র শ্বেতপত্র প্রকাশের কোনও সদিচ্ছা এখন পর্যন্ত দেখাননি। তা নিয়ে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীও নানা সময়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। বছরের পর বছর পড়ে থাকার পর আচমকা নথিপত্র তৈরি না করেই বাম জমানায় মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ ফেলার বিষয়টি নজরে আসায় উদ্বিগ্ন গৌতমবাবু। রবিবার উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী বলেন, “বাম জমানায় মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে এত টাকার ওষুধ নষ্ট হয়েছে বলে শুনেছি। পুরো বিষয়টি নিয়ে শীঘ্রই বৈঠক ডাকব।” মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত অবশ্য জানিয়েছেন, বামেদের আড়াল করার চেষ্টার কোনও ব্যাপার নেই। তিনি বলেন, “বাম জমানায় ওই ওষুধ পড়ে থেকে নষ্ট হয়েছে। এর দায় যে বামেদের তা প্রকাশ্যেই আমরা বলছি।” মেয়র জানান, পুরসভায় স্বাস্থ্য বিভাগের মেয়র পারিষদ তৃণমূলের কাউন্সিলর মৈত্রেয়ী চক্রবর্তী। তিনি এবং অপর তৃণমূল কাউন্সিলর কৃষ্ণ পাল-ই ওষুধ ফেলার বিষয়টি দেখছেন। তবে নথিপত্র কতদূর রয়েছে তা তিনি এখনই বলতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন।
এর আগে পুরসভার স্বাস্থ্য আধিকারিক সুনীল দাস, মেয়র, স্বাস্থ্য বিভাগের মেয়র পারিষদ সকলেই জানিয়েছিলেন বাম জমানায় মেয়াদ উত্তীর্ণ ওই সমস্ত ওষুধের কোনও নথি নেই। মৈত্রেয়ী দেবী বলেন, নথি করে, নিয়ম মেনে ওষুধ নষ্ট করারই বিধেয়। তা হলে কোন ওষুধ কতটা নষ্ট হয়েছে তার সঠিক তালিকা না করেই সেগুলি এ ভাবে ফেলে দেওয়া হল কেন? মৈত্রেয়ী দেবীর কথায়, মেয়র পারিষদের বৈঠকে ঠিক হয়েছিল পুর ভবন থেকে তিন নম্বর বরো কমিটি অফিস মাতৃসদন লাগোয়া হলঘরে স্থানান্তরিত করা হবে। সেখানেই ওষুধগুলি স্তূপীকৃত করে রাখা ছিল। ঘর পরিষ্কার করতেই সেগুলি তড়িঘড়ি ফেলা হয়েছে। মেয়র পারিষদ কৃষ্ণ পাল এ দিন অবশ্য দাবি করেন, কোন ওষুধ কতটা নষ্ট হয়েছে তা বিস্তারিত না থাকলেও, কত পেটি ওষুধ ফেলা হচ্ছে তার নথি করা হচ্ছে। আরও কিছু মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ রয়েছে। বামেরা আগেই স্বীকার করেছেন ওষুধ নষ্ট হওয়ার কিছুটা দায় তাদের উপরেও বর্তায়। তবে বিষয়টি তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। বিরোধী দলনেতা মুন্সি নুরুল ইসলাম এ দিন বলেন, “ওষুধ কেন নষ্ট হল তা আড়াল করা হচ্ছে। কেন সে সময় বিশ্বব্যাঙ্কের আর্থিক সাহায্যে সুডার তরফে প্রচুর ওষুধ পাঠানো হয়েছে তা দেখা দরকার।” |