জমি বিবাদে মহিলার শ্লীলতাহানি, মারধরের ঘটনায় অভিযুক্তকে গ্রেফতারে পুলিশ গড়িমসি করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগকারিণীর পরিবার ও বাসিন্দাদের একাংশের তরফেও বিষয়টি উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবকে জানানো হয়েছে। ক্ষুব্ধ বাসিন্দাদের প্রশ্ন, বাম আমলে পুলিশের একাংশের মদতে যারা তোলাবাজি চালিয়েছে বলে মামলা হয়েছে, তৃণমূলের জমানায় তারা কিভাবে শক্তিশালী হল? রবিবার উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী অভিযোগকারিণীকে দেখে নার্সিংহোম থেকে বেরিয়ে বলেন, “বাম জমানায় দাদাগিরি চলেছে বলে এখনও তা হবে সেটা হতে পারে না। জমি নিয়ে গোলমাল থাকলে কোর্টে মেটাতে হবে। রাতে হামলা, মহিলার উপর অত্যাচার বরদাস্ত হবে না। পুলিশকে বলে দিয়েছি। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে।”
শুক্রবার রাতে ভক্তিনগর থানার হায়দরপাড়ায় সাড়ে তিন কাঠার জমি দখলকে কেন্দ্র করে গণ্ডগোলের ঘটনা ঘটে। সে সময় রঘুনাথ করের বাড়িতে এলাকার ব্যবসায়ী অরূপ মজুমদার ও গোপাল সরকারের নেতৃত্বে হামলা চালানোর অভিযোগ ওঠে। রঘুনাথবাবুর স্ত্রী ও বোনের শ্লীলতাহানি, মারধর, বাড়িতে ভাঙচুরের অভিযোগও ওঠে। বিষয়টি নিয়ে ভক্তিনগর থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়। পক্ষান্তরে, গোপালবাবুও ভক্তিনগর থানায় একটি পাল্টা মামলা করেন। তাঁর অভিযোগ, তাঁর জমিতে হামলা চালিয়েছে রঘুনাথবাবুরা। সেখানকার পাঁচিল ও অস্থায়ী কাঠামো ভেঙে দেওয়া হয়। ওই ঘটনার পর ২৪ ঘন্টা পার হয়ে গেলেও পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করেনি বলে অভিযোগ। অরূপবাবু অবশ্য এ দিনও দাবি করেছেন, তাঁর বিরুদ্ধে চক্রান্ত করা হয়েছে। তিনি কোনও জমি সংক্রান্ত ব্যপার বা হামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন।
পুলিশ কমিশনার আনন্দ কুমার বলেন, “ওই ঘটনায় দুটি মামলার তদন্ত শুরু করা হয়েছে। যে জমি নিয়ে গণ্ডগোল হয়েছে তাতে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। ফের যাতে কোনওরকম গণ্ডগোল না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা হচ্ছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইন মেনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” পুলিশের তরফে যুক্তি দেওয়া হয়েছে, দুই পক্ষের তরফে মামলা হওয়ায় কাউকে গ্রেফতার করা হলে ফের উত্তেজনা ছড়াতে পারে। সে জন্য বিষয়টি খতিয়ে দেখেই ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। অরূপবাবুর বিরুদ্ধে বাম আমলেও তোলাবাজির অভিযোগ উঠেছে। সেই সময়ে তোলা আদায়ের অভিযোগে অরূপবাবু গ্রেফতারও হয়েছেন। সেই মামলা এখনও জলপাইগুড়ি আদালতে বিচারাধীন। তৃণমূল জমানায় অরূপবাবুর বিরুদ্ধে ফের একই ধরণের অভিযোগ উঠল। শুধু তাই নয়, তণমূল জেলা নেতাদের একটি অংশ অরূপবাবুকে মদত দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তৃণমূলের দার্জিলিং জেলার মহাসচিব কৃষ্ণ পাল বলেন, “অরূপ মজুদার বলে দলে কেউ নেই। নেতা-মন্ত্রীদের কাছে কেউ ঘুরঘুর করলেই দলের লোক হয়ে যান না। পুলিশ কড়া ব্যবস্থা নিচ্ছে না কেন?”
সিপিএমের দার্জিলিং জেলার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক জীবেশ সরকার মনে করেন, বাম আমলে তোলাবাজিকে প্রশ্রয় দেওয়া হয়নি বলেই ওই অভিযুক্ত গ্রেফতার হন। তিনি বলেন, “তৃণমূলের আমলে কি হচ্ছে সবাই দেখতে পাচ্ছে। শ্লীলতাহানি, নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটলেও অভিযুক্তরা পার পাচ্ছে। গোটা রাজ্যেই এমন ঘটছে। শিলিগুড়ি তার ব্যতিক্রম নয়।” পাশাপাশি জীবেশবাবুর দাবি, দ্রুত অভিযুক্তকে গ্রেফতার করতে হবে। |