হেলায় নষ্ট বটেশ্বরের প্রত্নবস্তু
কেউ বলছেন বৌদ্ধ স্তূপ, কারও মতে শিব মন্দির আবার কেউ খুঁজে পাচ্ছেন লৌকিক দেবদেবীদের সন্ধান। জলপাইগুড়ির ময়নাগুড়ি ব্লকের বটেশ্বর মন্দির নামে খ্যাত এই ধ্বংসস্তূপ সংরক্ষণ নিয়ে কিন্তু কোনও উদ্যোগই সে ভাবে হয়নি। স্থানীয় ইতিহাসবিদদের দাবি, এই এলাকায় পুরাতাত্ত্বিক অনুসন্ধান আরও ব্যাপক ভাবে করা হলে উত্তরবঙ্গের ইতিহাসের অনেক নতুন দিক খুঁজে পাওয়া যেতে পারে।
বটেশ্বরের এই দেবস্থান ঠিক কত দিনের পুরনো তা নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে। কিন্তু দীর্ঘ দিন ধরে তা অবহেলায় পড়ে থাকায় চুরি হচ্ছে মূর্তি সহ নানা প্রত্নবস্তু। রাজ্যের অনগ্রসর কল্যাণ মন্ত্রী উপেন বিশ্বাস এই ধ্বংসস্তূপ নিয়ে কাজ করছেন টানা ২৫ বছর ধরে। তাঁর বিশ্বাস, এটি একটি বৌদ্ধ স্তূপ, ২৩০০ বছর আগে মাধবডাঙা গ্রামে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী কিছু স্থানীয় শিল্পী ওই স্তূপ নির্মাণ করেছিলেন। বৌদ্ধ ধর্মের স্তূপের গঠনশৈলীর সঙ্গে সাদৃশ্য রয়েছে। পাথরের স্তূপে মিলেছে খোদাই করা বৌদ্ধ সন্ন্যাসীর দু’টি চিত্র। বেলে পাথরে খোদাই করে পদ্ম, হাতির চিত্র আঁকা রয়েছে। এমনকী, বৌদ্ধ স্তূপে ব্যবহৃত মঙ্গল ঘটের সন্ধান মিলেছে সেখানে। সাঁচি ও সারনাথের ধাঁচের স্তূপ তৈরি হয়েছিল এখানে তার সাদৃশ্য থাকায় মন্ত্রীর দৃঢ় ধারণা সে সময় কালে এখানে স্তূপ তৈরি করা হয়। মন্ত্রীর সঙ্গে সহমত উত্তরবঙ্গের ইতিহাসবিদ আনন্দগোপাল ঘোষ। আনন্দবাবুর কথায়, “এখানকার বেলেপাথরে সে সব চিত্র রয়েছে, তাতে এখানে এক সময় বৌদ্ধ স্তূপ ছিল বলে আমি মন্ত্রীর সঙ্গে সহমত।” তিনি জানান, কেবল মাত্র বটেশ্বর ছাড়া উত্তরবঙ্গের এই অঞ্চলে বেলে পাথরের কারুকার্য কোথাও তেমন ভাবে মেলেনি।


বটেশ্বরের নানা এলাকা থেকে উদ্ধার হওয়া প্রত্নসামগ্রী। ছবি তুলেছেন রাজকুমার মোদক।


রাজ্য পুরাতত্ত্ব দফতরের উপ অধিকর্তা অমল রায় অবশ্য বলেন, “প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে এখানে লৌকিক দেবদেবীর পুজো করা হত। যোগাসনে উপবিষ্ট যে মূর্তিটি রয়েছে, তা দেখে মনে হচ্ছে তিনি কোনও লৌকিক ধর্মগুরু। অন্য প্রমাণও সে কথারই প্রাথমিক সাক্ষ্য দেয়। তবে ওই এলাকা থেকে যে দ্বারশাখাটি মিলেছে, তার মধ্যভাগে একটি মূর্তি অস্পষ্ট ভাবে খোদিত রয়েছে। সেটি কোন সময়ের তা বোঝা যাচ্ছে না।”
অমলবাবু বলেন, “তবে এমন হতে পারে যে, এই এলাকায় বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দেবদেবীর পুজো হয়েছে। তেমন ভাবেই মূর্তিগুলো তৈরি করা হয়েছিল ও দেবালয়টির সংস্কার করা হয়েছিল। ঠিক কোন সময় কোন দেবতার উপাসনা হত, তা জানতে গেলে আরও অনুসন্ধান দরকার। অনুসন্ধানের পরবর্তী পদক্ষেপ উৎখননও করা যেতে পারে। এ ব্যাপারে রাজ্য পুরাতত্ত্ব দফতর আগ্রহীও।” স্থানীয় ইতিহাসবিদদের বক্তব্য, কোন সময়ে কোন দেবতার পুজো হত, তা জানা গেলে এলাকার সামাজিক ইতিহাসেও নতুন করে আলোকপাত ঘটবে। কিন্তু সরকারি উদ্যোগ না থাকায় সেই প্রত্নবস্তুই হারিয়ে যাচ্ছে। উপেনবাবুর দাবি, আশির দশকে তিনি এই এলাকার যে ছবি তুলেছিলেন তাতে পাথরের চাঁই দিয়ে তৈরি প্রবেশ পথে একটি ঘটের ছবি ছিল। ঘটটি খোয়া গিয়েছে। অপর একটি ঘটের সন্ধান মিলেছে স্থানীয় এক বাসিন্দার বাড়িতে। স্থানীয় বাসিন্দা মায়া রায়ের কথায়, “এখানে অনেকের বাড়িতেই বটেশ্বরের পাথর রয়েছে।” স্থানীয় বাসিন্দা প্রদীপ শিকদার বলেন, “মন্দিরটির ইতিহাস আমাদের কারও জানা নেই। বাবা-ঠাকুরদার কাছ থেকেও কোন তথ্য পাইনি। তবে সকলেই শিব মন্দির বলে মেনে আসছি।”
১০ বছর আগে বটেশ্বর মন্দির ঘিরে প্রাচীর তুলেছে জলপাইগুড়ি জেলা পরিষদ তবে পাহারা দেওয়ার মতো কাউকে নিয়োগ করা হয়নি। রাতে জায়গাটি অরক্ষিত পরে থাকে। জলপাইগুড়ির জেলাশাসক স্মারকী মহাপাত্র বলেন, “ওই স্তূপে কী নিদর্শন মিলেছে তার ছবি তুলে এবং তার তথ্য সংগ্রহ করার জন্য ময়নাগুড়ির বিডিওকে নির্দেশ দিয়েছি। সব হাতে আসার পরে তা পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণকে পাঠানো হবে।”

জলপাইগুড়ির কয়েকটি পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন
বক্সা ফোর্ট সপ্তদশ শতকে ভুটান রাজারা দুর্গটি তৈরি করেন বলে অনুমান। ১৯৩২ সালে স্বাধীনতা আন্দোলনে ব্রিটিশ সরকার বিরোধী আইন অমান্য আন্দোলনের সময় যখন সমস্ত জেলখানা ভরে যায় সে সময় দুর্গটি সংস্কার করা হয়। আটক শিবির নাম করে স্বাধীনতা আন্দোলনকারীদের সেখানে বন্দি করে রাখা হত।

নলরাজার গড় চিলাপাতা জঙ্গলের ধ্বংসাবশেষটি গুপ্ত যুগের বলে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ চিহ্নিত করেছে। কাচ বংশীয় রাজারা ইংরেজদের সঙ্গে যুদ্ধে এই দুর্গে সৈন্য রাখতেন।

জটিলেশ্বর মন্দির মন্দিরে পাথরের গায়ে দেবদেবীর খোদাই চিত্র দেখে বিশেষজ্ঞরা গুপ্ত যুগে ওই শিব মন্দিরটি তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন। জল্পেশ মন্দির জেলার প্রাচীন শিব মন্দির এটি। কোচবিহারের মহারাজা প্রাণনারায়ণ ১৬৬৫ সালে মন্দির নির্মাণের কাজ শুরু করেন। পরে তাঁর ছেলে কাজটি শেষ করেন।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.