নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
চেন্নাই পেরেছে, গুড়গাঁও পেরেছে। গুজরাত পারছে। কিন্তু শিল্প ও উন্নয়নের বদলে পশ্চিমবঙ্গ মেতে রয়েছে উৎসবে! জলের মতো টাকা খরচ হচ্ছে বিজ্ঞাপনে! মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজ্যপাট সম্পর্কে এ ভাবেই ক্ষোভ উগরে দিলেন তাঁর পূর্বসূরি বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। ‘বেঙ্গল লিড্স’ শীর্ষক শিল্প সম্মেলন শুরুর ৪৮ ঘণ্টা আগে।
দমদমের কালিন্দীতে দলীয় জনসভার মঞ্চে দাঁড়িয়ে রবিবার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী দাবি করলেন, সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম সত্ত্বেও তাঁর জমানায় শিল্পের জন্য এগোনোর চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু তৃণমূলের সরকারের শিল্প ও জমি-নীতির দৌলতে রাজ্য ডুবছে অন্ধকারে। বুদ্ধবাবুর কথায়, “কৃষকদের আত্মহত্যা করতে হচ্ছে। কৃষি, শিল্প কিচ্ছু হচ্ছে না পশ্চিমবঙ্গে! হচ্ছে শুধু বিজ্ঞাপন আর উৎসব! শিল্প নেই তবু এ সবের পিছনে কোটি কোটি টাকা! বিজ্ঞাপনের একেবারে বান বয়ে যাচ্ছে! এত বিজ্ঞাপন আমি দিইনি কখনও। মানুষের টাকায় আমার ছবি ছাপাব কাগজে, এটা হতে পারে কখনও!”
ক্ষমতায় আসার দিন থেকেই নানা উৎসব, অনুষ্ঠান, পুরস্কার এবং সেই বাবদ বিজ্ঞাপনে মমতার সরকার বিশেষ মনোযোগী বলে অভিযোগ বিরোধীদের। ক্লাবকে আর্থিক অনুদান বা যুব উৎসবকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি সেই অভিযোগ আরও প্রবল হয়েছে। রাজনীতির কারবারিদের অনেকেই বলছেন, রাজ্যের উন্নয়ন নয়, হাততালি কুড়োনোর দিকেই নজর এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর। শিল্প মহলের তুলনায় চলচ্চিত্র মহলের সান্নিধ্যেই তিনি বেশি স্বচ্ছন্দ।
সেই দিকেই ইঙ্গিত করে এ দিন বুদ্ধবাবুর মন্তব্য, “এক-একটা মিটিং হচ্ছে, হাজার হাজার লোক নিয়ে আসছে আর খরচ হচ্ছে! পঞ্চায়েত নির্বাচন জিততে হবে, এমনও বলা হচ্ছে সরকারি মঞ্চ থেকে!” শিল্পে অনীহা নিয়ে মমতার সরকারকে ধারাবাহিক ভাবেই আক্রমণ করছেন বুদ্ধবাবু-নিরুপম সেনেরা। এতটা আক্রমণাত্মক বুদ্ধবাবুকে সাম্প্রতিক কালে দেখা যায়নি। সিপিএম সূত্রের ব্যাখ্যায়, একের পর এক ঘটনায় রাজ্য সরকার সম্পর্কে সমাজের বিভিন্ন অংশের অসন্তোষ স্পষ্ট হতেই কণ্ঠ আরও ধারালো হয়েছে বুদ্ধবাবুর।
বস্তুত, পঞ্চায়েত ভোটের আগে উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় এক মাসের মধ্যে ৪০টি সভা করার পরিকল্পনা নিয়েছেন গৌতম দেবেরা। তারই অঙ্গ হিসাবে এ দিন দমদমে গিয়েছিলেন বুদ্ধবাবু। আজ, সোমবার তাঁর যাওয়ার কথা রাজারহাটে। গৌতমবাবু, অমিতাভ নন্দীদের মঞ্চে বসিয়েই বুদ্ধবাবু এ দিন সওয়াল করেছেন তাঁর আমলের শিল্প নীতির পক্ষে। বলেছেন, “রাজ্যের মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা হয়েছিল, বামফ্রন্ট মানেই সিঙ্গুর! বামফ্রন্ট মানেই নন্দীগ্রাম! আমরা পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, খড়গপুর, নৈহাটিতে জমি নিয়েছি। কোনও গোলমাল হয়েছে?”
সিঙ্গুরে তৃণমূল নেত্রীর দাবি মেনে ৪০০ একর জমি ছেড়ে দিলে টাটার কারখানা যে হত না, সে কথাও ফের বলেছেন বুদ্ধবাবু। বলেছেন, টাটার কারখানা হলে রাজ্যে অটো-মোবাইল শিল্পের খরা কাটত, যন্ত্রাংশের অনুসারী শিল্পের পথ ধরে আরও প্রকল্প আসত। তাঁর কথায়, “বলেছিলাম, ৪০০ একর দিলে কারখানা হয় না। নইলে আমার কী আপত্তি ছিল? আমরা কি জেদ করেছিলাম! গুজরাতে এখন টাটার পরে ফোর্ড গিয়েছে। চেন্নাইয়ে হবে, গুড়গাওঁয়ে হবে, গুজরাতেও হবে। বাংলা সেই অন্ধকারেই থেকে যাবে!” |