কমিশনের সুপারিশে রাজ্যের না
এক দিনে পঞ্চায়েত ভোটের ইঙ্গিত
রাজ্য নির্বাচন কমিশনের প্রস্তাব খারিজ করে এক দফাতেই পঞ্চায়েতের ভোট নেওয়ার পথে চলতে চাইছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এবং সেখানে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তাবাহিনীরও কোনও ভূমিকা থাকবে না বলে মহাকরণ-সূত্রের ইঙ্গিত।
রাজ্য নির্বাচন কমিশন ও রাজ্য সরকার দু’পক্ষের দুই পরস্পর-বিরোধী মতের মাঝে জটিলতার আবর্তে পড়ে গিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচন। কমিশন চায়, মোট তিন দফায় পঞ্চায়েত নির্বাচনের ভোটগ্রহণ পর্ব সারা হোক। এবং পুরো প্রক্রিয়াটি হোক কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিরাপত্তার ছত্রচ্ছায়ায়। অন্য দিকে রাজ্য সরকার এক দিনে, এক দফাতেই ভোটপর্ব চুকিয়ে ফেলার পক্ষপাতী। উপরন্তু তাদের মতে, পঞ্চায়েত ভোট করতে রাজ্য পুলিশই যথেষ্ট, কেন্দ্রীয় বাহিনীর কোনও প্রয়োজন নেই।
কমিশন-মহাকরণে এ হেন মতানৈক্যের জেরে এখনও ভোটের দিনক্ষণ ঠিক করা যায়নি। তবে প্রশাসনিক সূত্রে ইঙ্গিত মিলেছে, সরকার এখন একটা এসপার-ওসপার করতে মরিয়া। তাই চলতি সপ্তাহেই মহাকরণ থেকে কমিশনকে এক দফায় ভোটগ্রহণের কথা জানিয়ে দেওয়া হবে। উল্লেখ্য, রাজ্য পঞ্চায়েত আইন মোতাবেক সরকারের সুপারিশ মানতে কমিশন বাধ্য।
বিতর্কের সূত্রপাত কী ভাবে?
মহাকরণের খবর: পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পর্কে মাস দুই আগে রাজ্য নির্বাচন কমিশনার মীরা পাণ্ডের সঙ্গে রাজ্য সরকারের প্রতিনিধিদের আলোচনা হয়েছিল। কমিশন জানিয়েছিল, ভোটারসংখ্যা বৃদ্ধি ও পঞ্চায়েত আসন পুনর্বিন্যাসের সুবাদে এ বার বুথের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। এবং রাজ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতি যা, তাতে সেই প্রায় ৬০ হাজার বুথে সুষ্ঠু ও অবাধ ভোটগ্রহণের স্বার্থে গ্রামে-গ্রামে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তাবাহিনী মোতায়েন একান্ত জরুরি। বস্তুত অন্তত ৮০০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী ছাড়া শান্তিপূর্ণ ভোট সম্ভব নয় বলে তারা মনে করে।

কে কী চায়
কমিশন সরকার
ভোট হোক তিন দফায় এক দিনে, এক দফায়
আসুক কেন্দ্রীয় বাহিনী রাজ্যের পুলিশই পারবে
৮০০ কোম্পানি দরকার ৪৪০ কোম্পানি যথেষ্ট
সেই মতো দিল্লির সঙ্গে কথা বলে কেন্দ্রীয় বাহিনীর ব্যবস্থা করতে কমিশনের তরফে রাজ্য প্রশাসনকে অনুরোধ করা হয়। একই সঙ্গে পেশ করা হয় এপ্রিলের শেষ থেকে মে-এর প্রথম সপ্তাহের মধ্যে তিন দফায় ভোট নেওয়ার পরিকল্পনা।
কমিশনের প্রস্তাব ছিল: প্রথম দফায় উত্তরবঙ্গ, দ্বিতীয় দফায় জঙ্গলমহল-সহ বর্ধমান, বীরভূম এবং শেষ দফায় মালদহ, মুর্শিদাবাদ-সহ কলকাতার আশপাশের জেলাগুলোয় ভোট করা হোক। কমিশন-কর্তাদের দাবি, পশ্চিমবঙ্গে ২০১১-র বিধানসভা নির্বাচনে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন যে ‘মডেল’ মেনে চলেছিল, সেই অনুসারেই পঞ্চায়েত ভোট আয়োজনের এই পরিকল্পনা।
কিন্তু তাঁদের প্রস্তাব শুনে রাজ্য সরকার নির্দিষ্ট করে কমিশনকে কিছু জানায়নি। মীরাদেবী ৮০০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনীর বন্দোবস্ত করতে মহাকরণে যে চিঠি পাঠিয়েছেন, সে ব্যাপারে দিল্লির সঙ্গে যোগাযোগও করেনি মহাকরণ।
সরকারি সূত্রের খবর: পঞ্চায়েত ভোটের দিনক্ষণ এবং পুলিশি ব্যবস্থা প্রসঙ্গে রাজ্য পুলিশের ডিজি’র মতামত চেয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ডিজি নপরাজিত মুখোপাধ্যায় সরকারকে নোট দিয়ে
জানান, এক দফায় পঞ্চায়েত ভোট করাটাই সুবিধাজনক হবে। কেন?
এখানে শেষ দু’টি পঞ্চায়েত নির্বাচনের দৃষ্টান্ত টেনেছেন ডিজি।
তাঁর ব্যাখ্যা: ২০০৩-এ পঞ্চায়েত নির্বাচন হয়েছিল এক দফায়, ২০০৮-এ তিন দফায়। ২০০৮-এ হিংসাত্মক ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছিল অনেক বেশি, যার কারণ হিসেবে তিনি তিন দফায় ভোটগ্রহণকে দায়ী করেছেন। ডিজি’র মতে, এক দফার ভোটে যা গণ্ডগোল হওয়ার, ওই এক দিনেই হয়ে যাবে। একাধিক দফায় ভোট নিলে সরকারকে বেশি ঝামেলা পোহাতে হবে। কারণ, সে ক্ষেত্রে একই দুষ্কৃতীরা বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে গোলমাল পাকানোর সুযোগ পাবে, মদতদাতা রাজনৈতিক দলগুলোও তাদের যত বেশি সম্ভব কাজে লাগাতে চাইবে। তাই এক দিনে ভোট নেওয়া বাঞ্ছনীয়।
এবং এরই প্রেক্ষিতে রাজ্য পুলিশবাহিনী দিয়ে ভোট গ্রহণের পক্ষপাতী রাজ্যের পুলিশ-প্রধান। নোটে তাঁর যুক্তি: কেন্দ্রীয় সরকারের ঘোষিত নীতি-ই হল, স্থানীয় নির্বাচনে কেন্দ্রীয় বাহিনী না-পাঠানো। দিল্লি তা মেনে চললে রাজ্য পুলিশ দিয়ে ভোট করাতে হবে, তিন দিনের নির্বাচনে যা প্রায় অসম্ভব। কেন?
রাজ্য পুলিশ-কর্তাদের একাংশের বক্তব্য: তিন দিনের ভোটে বাহিনীকে এক জায়গা থেকে অন্যত্র নিয়ে যাওয়াটাই সবচেয়ে বড় সমস্যা। তাতে খরচও বাড়বে অন্তত একশো কোটি টাকা, যার সংস্থান করা সরকারের পক্ষে দস্তুরমতো কঠিন। আর যদি দিল্লির সঙ্গে আলোচনা করে কেন্দ্রীয় বাহিনী পাওয়াও যায়, তা হলে ওই ৮০০ কোম্পানির পিছনে রাজ্যের বাড়তি প্রায় আড়াইশো কোটি টাকা বেরিয়ে যাবে।
অর্থাৎ এক দফায়, এবং রাজ্য পুলিশবাহিনীকে দিয়ে ভোট করানোই প্রশাসনের সামনে একমাত্র পথ বলে পুলিশ-কর্তাদের দাবি। ডিজি’র নোট তা-ই বলছে।
তাঁর সুপারিশ: রাজ্যের ৪৪ হাজার (৪৪০ কোম্পানি) সশস্ত্র পুলিশ দিয়ে এক দিনে ভোট নেওয়া হোক। তা হলে প্রতি বুথে না-হলেও প্রতি ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে অন্তত সশস্ত্র রক্ষী মোতায়েন করা যাবে।
ডিজি’র নোটে আপত্তি করেননি মুখ্যমন্ত্রীও। মুখ্যমন্ত্রীর অফিস থেকে পঞ্চায়েত দফতরকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, তারা যেন সরকারের এই মনোভাবের কথা কমিশনকে জানিয়ে দেয়।
মহাকরণ-সূত্রের খবর: সেই অনুযায়ী দু’পক্ষে আলোচনা শুরু হয়েছে। তবে ঘটনা হল, আলোচনা যা-ই হোক, কিংবা সুপারিশ যা-ই থাক, শেষ পর্যন্ত রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্ত মানতে রাজ্য নির্বাচন কমিশন বাধ্য। অন্তত রাজ্যের পঞ্চায়েত আইন তেমনই বলছে। অর্থাৎ, রাজ্য পুলিশ দিয়ে এক দিনে পঞ্চায়েত ভোট আয়োজনের সিদ্ধান্ত ঘোষণা শুধু সময়ের অপেক্ষা বলে মহাকরণ-সূত্রের ইঙ্গিত। কমিশনের এক কর্তার কথায়, “কমিশন চেয়েছিল অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করাতে। তা নিয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনাও হয়েছে। কিন্তু আইন অনুযায়ী সরকারই ভোটের দিনক্ষণ স্থির করার চূড়ান্ত অধিকারী। আশা করা যায়, সরকার কমিশনের উদ্বেগের বিষয়গুলো গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.