চন্দননগর-ভাটপাড়া
ঘাটের টিকিট বিক্রির লভ্যাংশ নিয়ে টানাপোড়েন দুই পুরসভার
কটি ফেরিঘাটের টিকিট বিক্রির লভ্যাংশ নিয়ে তৃণমূল পরিচালিত হুগলির চন্দননগর এবং উত্তর ২৪ পরগনার ভাটপাড়া দুই পুরসভার মধ্যে জোর টানাপোড়েন শুরু হয়েছে। পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে গত সেপ্টেম্বরে চন্দননগরের রানিঘাট নামে ওই ফেরিঘাটের ‘লিজ’ নিয়ে দরপত্র ডাকার কথা থাকলেও এখনও তা হয়ে ওঠেনি। ভাটপাড়া পুর কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের দ্বারস্থ হয়েছেন।
প্রশাসন ও পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতিদিন শ’য়ে শ’য়ে মানুষ রানিঘাট ও উল্টো দিকের জগদ্দল ফেরিঘাট দিয়ে যাতায়াত করেন। এই পারাপার নিয়ন্ত্রিত হয় রানিঘাট থেকেই। দীর্ঘদিন ধরে রানিঘাটের ‘লিজ’-এর দরপত্রের যাবতীয় প্রক্রিয়া একক ভাবেই নিয়ন্ত্রণ করে চন্দননগর পুরসভা। নিয়ম অনুযায়ী, প্রতি তিন বছর অন্তর রানিঘাটের ‘লিজ’ দেওয়া হয় অভিজ্ঞতা সম্পন্ন কোনও ঠিকাদার সংস্থাকে। সেই সংস্থাই দু’দিকে যাত্রী পারাপারের সমস্ত টাকা, ঘাটে কর্মী নিয়োগ সবটাই নিয়ন্ত্রণ করে।
কিন্তু এ বার সেপ্টেম্বরে ‘লিজ’ নিয়ে দরপত্র ডাকার প্রক্রিয়া শুরুর আগেই এই পারাপারে টিকিট বিক্রির লভ্যাংশ দাবি করে ভাটপাড়া পুরসভা। তা দিতে রাজি নয় চন্দননগর পুরসভা। প্রেসিডেন্সি ডিভিশনের কমিশনার রিনা ভেঙ্কটরামন ইতিমধ্যেই বিষয়টি নিয়ে দু’পক্ষের সঙ্গে একাধিক বার বৈঠক করেছেন। কিন্তু সমঝোতা না হওয়ায় প্রশাসনিক মহলে এ পর্যন্ত বিষয়টির জট কাটেনি।
চন্দননগর পুর-কর্তৃপক্ষের দাবি, ফরাসি আমল থেকে রানিঘাটের যাবতীয় স্বত্ব তাদের উপরই ন্যস্ত। বাম আমলেও ভাটপাড়া পুরসভা এমন দাবি তোলেনি। বিচ্ছিন্ন ভাবে কোনও কোনও সময় ওই ঘাটের টিকিট বিক্রির লভ্যাংশ ভাটপাড়া পুরসভাকে দেওয়ার প্রসঙ্গ সামনে এলেও প্রশাসনের সর্বোচ্চ মহলে তা ধোপে টেঁকেনি।
আগামী মার্চ মাসে রানিঘাটের বর্তমান ঠিকাদার সংস্থার ‘লিজ’-এর মেয়াদ শেষ হচ্ছে। তার আগে সমস্যার সমাধান না হলে জটিলতা বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। প্রশাসন সূত্রের খবর, মন্ত্রী থেকে আমলা যুযুধান দু’পক্ষকে বসিয়ে বারে বারেই সমাধানের রাস্তা খুঁজেছেন। কিন্তু দু’পক্ষই তাদের অবস্থানে অনড়।
ভাটপাড়া পুর কর্তৃপক্ষের ক্ষোভ, এক সময়ে ফরাসি-ব্রিটিশরা দেশ শাসন করেছে। এখনও কি সেই নিয়মই চলবে? জেলা পরিষদের কোনও ভূমিকাই নেই। অথচ, ওরা টেন্ডার ডাকবে, টাকা নেবে। আর ভাটপাড়া পুরসভা ঘাট সংস্কার, সেখানে আসার রাস্তা তৈরি সবই করবে। এমনটা হয় নাকি! পুরসভার চেয়ারম্যান তথা ওই এলাকার বিধায়ক অর্জুন সিংহ বলেন, “বাম আমলে বিধানসভায় এ সংক্রান্ত আইন পাশ হয়ে গেলেও প্রয়োগ হয়নি। আমরা চাই সেই আইন কার্যকর করা হোক। লাভের টাকা ভাগাভাগি করে নিলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যায়।”
এ কথা উড়িয়ে দিয়েছেন চন্দননগর পুরসভার মেয়র রাম চক্রবর্তী। তিনি বলেন, “যাঁরা চন্দননগরের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, কৃষ্টি উড়িয়ে দিতে চান, তাঁরা ঠিক করছেন না। রানিঘাটের সঙ্গে চন্দননগরের শুধু ইতিহাস নয়, মানুষের আবেগও জড়িয়ে রয়েছে। বাম আমলেও স্বাভাবিক কারণেই বিষয়টিকে মান্যতা দেওয়া হয়েছিল।” ভাটপাড়া পুরসভার দায়িত্বে যে হেতু তৃণমূলই রয়েছে, তাই রামবাবু মনে করছেন, “বিষয়টি নিয়ে অহেতুক জটিলতা হবে না, এমন বিশ্বাস আমার আছে। আশা করছি, মার্চের মধ্যেই লিজ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা যাবে।”
এই জটিলতার মধ্যেই সম্প্রতি রানিঘাটে যাত্রী পারাপারের ভাড়া বৃদ্ধির (চার টাকার পরিবর্তে পাঁচ টাকা) ফলে চন্দননগরের বিধায়ক এবং মেয়রের মধ্যে চাপান-উতোরও হয়। সিপিএম কাউন্সিলরদের পাশাপাশি চন্দননগরের বিধায়ক অশোক সাউও ভাড়াবৃদ্ধির বিরোধিতা করেন। কিন্তু গত মাসে পুরবোর্ডের মাসিক সভায় ভোটাভুটিতে ভাড়াবৃদ্ধির পক্ষেই বেশি ভোট পড়ে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.