|
|
|
|
নানা ঢেউয়ের ওঠাপড়া, তাল কাটল বোঁচকা |
রোহন ইসলাম • গঙ্গাসাগর |
“আর আমরা যদি যৌথ ভাবে বাঁচি? তা হলে?”
বহু বছর আগে এক ষোড়শীকে প্রশ্নটা ছুড়ে দিয়েছিলেন পাথরু। রায়গঞ্জের বাউল পাথরু দাসের ওই এক ডাকেই কাটোয়ার বাড়ি ছেড়ে যিনি বেরিয়ে এসেছিলেন, তিনি রিনা। তার পর দু’জনের বেঁচে থাকার গল্পটাই কেমন যেন বদলে যায়। কখনও হাজারিবাগ, কখনও ইলাহাবাদ, কখনও হিন্দি বলয়ের গ্রামে গ্রামে গান গেয়ে বেড়াতে বেড়াতে এ বারই বহু বছর পরে সাগরমেলায়।
রবিবার ভোরে সাগরতটে গান গাইছিলেন দু’জনে “ও সখী রে, কোথাও চলে যাও, বৃন্দাবনের পথে পথে...।” মেলার সূত্রে বহু বছর পরে দেশের মাটিতে ফেরা। কী বদল দেখছেন? পাথরু-র আক্ষেপ, “মানুষ বড় বদলে গিয়েছে দাদা! কেউ নিজের স্বার্থ ছাড়া কিছু বোঝে না।” মেলা শেষ হলেই অন্যত্র পাড়ি দেবেন স্বামী-স্ত্রী। কোথায়? জানেন না তাঁরা। |
|
সাগরে আনন্দে। ছবি: সুমন বল্লভ |
মাহেন্দ্রক্ষণ যত এগিয়ে আসছে সাগরমেলায় ভিড় তত বাড়ছে। দুপুর গড়াতেই স্নান সেরে রাজস্থানি বাহারি পাগড়ি মাথায় তুলে এলিয়ে আসা রোদে আরাম নিতে ব্যস্ত দু’জনে মধ্যপ্রদেশের সাগর থেকে আসা রামরতন দাস ও রাজারতন দাস। আদতে প্রান্তিক চাষি। দুই বন্ধু সাগরমেলায় আসছেন বহু বছর ধরে। প্রথম বার বাড়ি থেকে পালিয়ে। রামরতনের কথায়, “একবার রাজাকে বাড়িতে ভীষণ মেরেছিল। দুই বন্ধু মনের দুঃখে বাড়ি থেকে পালিয়ে চলে আসি গঙ্গাসাগর। মেলায় স্নান করার পরই দু’জনের বাড়ির জন্য খুব মন খারাপ হয়। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার মাধ্যমে বাড়ি ফিরি। তার পর থেকে সাগরমেলা আসা চাই-ই।” রাজারতন হাসছেন।
সাগরমেলা জুড়েছে দুই অসমবয়সীকেও। স্থানীয় ফুলডালির বছর বারোর কাকলি বাগের সঙ্গে গোবরডাঙার বিধূভূষণের আড্ডা দেখলে কে বলবে আলাপ মাত্র দু’দিনের! কাকলি মায়ের সঙ্গে বিক্রি করছে পুজোর উপচার। বিধুভূষণ চা। আর সুযোগ পেলেই দু’জনের গল্প জমে উঠছে। তবে, বিক্রিবাটা এ দিনও তেমন না জমায় বেশ বিরক্ত ছিলেন বিধুভূষণ। কাকলি কাছে আসতেই এক মুখ হাসি। বিধুভূষণের কথায়, “ওর মতোই দেখতে আমার একটা মেয়ে রয়েছে। অনেক দিন দেখিনি। বিয়ে হয়ে গিয়েছে তো! কাকলিকে দেখলেই ওর কথা মনে পড়ে যাচ্ছে।” কাকলিও ‘দাদু’ বলতে অজ্ঞান।
সন্ধ্যা হয়ে আসছে। ভিড় তখন লক্ষাধিক। অজস্র মানুষ চর্তুদিকে। আলো-আঁধারি সাগরে অন্ধ অর্জুন শ্যামলকে নিয়ে হেঁটে চলেছেন তাঁর স্ত্রী কাজলাদেবী। গলায় গান
“অন্যের আছয়ে অনেকজনা
আমার কেবল তুমি
পরাণ হইতে শতশত গুণে
প্রিয়তম করি মানি...।”
বিস্তীর্ণ বালুকাতটে নানা গল্প। স্বামী-স্ত্রীর, বন্ধুর, ভাইবোনের, পড়শির, দাদু-নাতির! তাল কাটল পুলিশের খবরে।
সকালে সাগরতটে নদিয়ার নাকাশিপাড়ার বাসিন্দা অমর বিশ্বাসের স্ত্রী হারিয়ে যান। মাইকে ঘোষণাও হচ্ছিল। কিন্তু কিছু ক্ষণের মধ্যে জানা গেল কেপমারির অভিযোগে মহিলা পুলিশের হাতে ধরা পড়েছেন। তাঁর কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে একটি বোঁচকা। অমরবাবু মেনে নিয়েছেন, “ওর একটু চুরি করা স্বভাব রয়েছে।”
মেলা জুড়ে কত যে রঙ্গ! |
|
|
|
|
|