|
|
|
|
শিল্প বাঁচানোর মঞ্চ ভাঙচুরে অভিযুক্ত তৃণমূল |
নিজস্ব সংবাদদাতা • হলদিয়া ও আসানসোল |
এক দিকে অব্যবস্থা। অন্য দিকে আইনশৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন।
রাত পোহালেই যে শিল্প-শহরে বসছে শিল্প সম্মেলন ‘বেঙ্গল লিড্স’, সেই হলদিয়ায় শিল্প বাঁচানোর স্লোগান নিয়ে সভা করতে আসা ডিওয়াইএফের মঞ্চ ভাঙচুর করা হল। ডেকরেটরের কর্মীদের ভোজালি দেখিয়ে বেঁধে মারধর করল দুষ্কৃতীবাহিনী। তছনছ করা হল মাইক। গুন্ডামির জেরে এবিজি বিদায়ের পরে আরও এক বার কাঠগড়ায় উঠল হলদিয়ার আইনশৃঙ্খলা। দেশের শিল্পমহলের সামনে যা মোটেই ভাল বিজ্ঞাপন নয়।
শনিবার রাতে হলদিয়ার সুতাহাটা এলাকার ওই ঘটনায় তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছে ডিওয়াইএফ এবং সিপিএম। রবিবার ভাঙা মঞ্চের পাশে নতুন করে মঞ্চ বেঁধে সভা করে তারা। সেখানে প্রাক্তন শিল্পমন্ত্রী নিরুপম সেন বললেন, “শাসক দল মানুষকে ভয় পাচ্ছে। সে জন্যই ভাঙড় থেকে হলদিয়া, বারবার হামলা চালানো হচ্ছে বিরোধী কর্মী-সমর্থকদের উপর।” আর তমলুকের প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ লক্ষ্মণ শেঠের বক্তব্য, “হলদিয়া বাঁচানোর দাবিতেই সভার আয়োজন হয়েছিল। তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা তা বিঘ্নিত করল। আতঙ্কের এই পরিবেশে বড় কোনও শিল্পসংস্থা এখানে আসবে না।”
শিল্পমহলের একাংশেরও অভিমত, এই ধরনের রাজনৈতিক অস্থিরতা শিল্পের পরিপন্থী। ‘বেঙ্গল লিড্স’-এর আগে এমন ঘটনা শুধু নতুন লগ্নি টানার ক্ষেত্রে নয়, যে সব সংস্থা ইতিমধ্যেই সেখানে রয়েছে, তাদের কাছেও বিরূপ বার্তা দেয়। তৃণমূলের বিরুদ্ধে ডিওয়াইএফের সম্মেলনে হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে আর এক শিল্পাঞ্চল আসানসোলের বারাবনিতেও। রবিবার সংগঠনের বারাবনি-১ লোকাল কমিটির সম্মেলন ছিল স্থানীয় নুনি গ্রামে। সকাল ১০টা নাগাদ সম্মেলন শুরু হয়। লোকাল কমিটির সম্পাদক কপিল ঘোষের অভিযোগ, “হঠাৎ কুড়ি-বাইশ জন দুষ্কৃতী মোটরবাইকে চড়ে হাজির হয়। তাদের হাতে ছিল রিভলভার, লাঠি ও রড। ওরা প্রথমেই শহিদ বেদী উল্টে দেয়। ম্যারাপ লন্ডভন্ড করে চেয়ার-টেবিল উল্টে দেয়।” |
|
ভাঙা মঞ্চের পাশে তৈরি হচ্ছে নতুন মঞ্চ।—নিজস্ব চিত্র |
ডিওয়াইএফের রাজ্য সভাপতি আভাস রায়চৌধুরী বলেন, “হলদিয়া ও বারাবনির ঘটনার প্রতিবাদে রাজ্য জুড়ে আন্দোলনে নামছি।”
যদিও দু’টি ঘটনার সঙ্গেই দলের কোনও যোগ আছে বলে মানতে নারাজ তৃণমূল নেতৃত্ব। সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীর মোবাইল দিনভরই বন্ধ ছিল। তবে সুতাহাটায় তৃণমূলের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রাক্তন বিধায়ক তুষার মণ্ডলের পাল্টা অভিযোগ, “বেঙ্গল লিড্সের আয়োজন সহ্য করতে না পেরেই গণ্ডগোল পাকানোর চেষ্টা হচ্ছে।” বারাবনির যুব তৃণমূল নেতা পাপ্পু উপাধ্যায়ের দাবি, “ডিওয়াইএফের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরেই ওই ঘটনা।”
গত ৭ জানুয়ারি কলকাতা থেকে শুরু হয়েছিল সিপিএমের যুব সংগঠনের পদযাত্রা ‘হলদিয়া বাঁচাও, রাজ্যের শিল্প বাঁচাও’। শনিবার পদযাত্রা হলদিয়ায় পৌঁছয়। রবিবার সুতাহাটার আমলাট আজাদ হিন্দ যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে সভা হওয়ার ছিল। শনিবার রাত ১২টা নাগাদ যখন মঞ্চ বাঁধার কাজ চলছে, তখন তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা হামলা চালায় বলে অভিযোগ। মাইকের দায়িত্বে থাকা শঙ্করপ্রসাদ কুইল্যার কথায়, “কিছু দুষ্কৃতী ভোজালি নিয়ে চড়াও হয়। আমাদের বেঁধে রেখে মঞ্চ ভেঙে দেয়। তার পর মাইক সেট তুলে নিয়ে চলে যায়।” এ দিনই দুপুরে সুতাহাটা থানায় তৃণমূলের বিরুদ্ধে হামলা ও মারধরের অভিযোগ দায়ের করেন ডিওয়াইএফ নেতা মিলন বেরা। তবে, রাত পর্যন্ত কাউকে ধরতে পারেনি পুলিশ। অভিযোগ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার।
এ দিন নিরুপমবাবু অভিযোগ করেন, “হাজার হাজার কোটি টাকা লগ্নির কথা বলা হলেও এখানে শিল্প-বান্ধব পরিবেশ নেই।” তাঁর আক্ষেপ, “যারা অনেক শিল্প গোষ্ঠীকে হলদিয়া ছাড়া করল, তারাই আজ করছে ‘বেঙ্গল লিড্স’!”
|
|
|
|
|
|
|