|
|
|
|
আমন্ত্রিতের তালিকা দিতে নারাজ পার্থ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা ও হলদিয়া |
মুখ্যমন্ত্রী শিল্প-বাণিজ্য ও কলাশিল্পের ভেদরেখা মুছে দেন। তাঁর শিল্পমন্ত্রীও তেমনই মনে করেন, শিল্প সম্মেলনে বড় শিল্পপতিদের উপস্থিতিটা জরুরি নয়!
সম্প্রতি ‘ভাইব্র্যান্ট গুজরাতে’ চাঁদের হাট বসিয়েছিলেন সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। দুই অম্বানী ভাই মুকেশ ও অনিল, টাটা গোষ্ঠীর সদ্য প্রাক্তন কর্ণধার রতন টাটা, নতুন কর্ণধার সাইরাস মিস্ত্রি কে ছিলেন না সেই দলে! তার পরপরই পশ্চিমবঙ্গের শিল্প সম্মেলন ‘বেঙ্গল লিডস’। স্বাভাবিক ভাবেই কৌতূহল, দেশের প্রথম সারির কোন কোন শিল্পপতি আসবেন এই সম্মেলনে? গুজরাতের সঙ্গে কতটা টক্কর দিতে পারবে পশ্চিমবঙ্গ?
এই কৌতূহল কিন্তু সম্মেলনের দু’দিন আগেও মেটাতে পারছে না রাজ্য সরকার। আগামিকাল, মঙ্গলবার থেকে হলদিয়ায় শুরু হচ্ছে দ্বিতীয় বেঙ্গল লিডস। তার ৪৮ ঘণ্টা আগে শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলছেন, লগ্নি টানতে শুধুমাত্র তাবড় শিল্পপতিদের চাঁদের হাট বসানো জরুরি নয়। বরং সম্মেলনে শিল্পমহলের সার্বিক উপস্থিতিই রাজ্যের কাছে
বেশি গুরুত্বপূর্ণ! রবিবার শিল্পমন্ত্রী আরও বললেন, “যাঁরা বড় নাম খুঁজছেন, খুঁজুন। আমাদের কাছে শুধু মালিক নন, যাঁরা ব্যবসা চালান, সকলেই গুরুত্বপূর্ণ।”
এ যেন চাঁদ ছাড়াই চাঁদের হাট বসানোর পরিকল্পনা।
তবে একই সঙ্গে শিল্পমন্ত্রীর ইঙ্গিত, চমকও আছে। প্রথম সারির শিল্প-কর্তাদের উপস্থিতির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এ সব প্রশ্নের জবাব ১৫ তারিখ দেব। কোন সংস্থা কাকে পাঠাচ্ছে, তাঁদের কিছু নাম জানি। কিন্তু যত ক্ষণ না ওঁরা সেখানে পৌঁছচ্ছেন, এখনই তা নিয়ে বলব না। আর তা ছাড়া, কোন সংস্থা কাকে পাঠাবে, সেটা তাদের ব্যাপার।” তা হলে কি কলকাতা থেকে হলদিয়ার দূরত্বের জন্য বিষয়টি অনিশ্চিত? এ কথা অবশ্য মানতে নারাজ শিল্পমন্ত্রী। প্রশ্ন ওঠে, টাটা বা রিলায়্যান্স গোষ্ঠীর কে আসছেন? শিল্পমন্ত্রী বলেন, “আমাদের কাছে খবর আছে, ওঁদের লোক আসবেন।” তা হলে কি সাইরাস মিস্ত্রি বা অম্বানী ভাইয়েরাও আসবেন? এ বার স্পষ্ট কোনও জবাব মেলেনি। উল্টে তিনি বলেন, “ও ভাবে বলা যাবে না। টাটাদের সবাইকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। ওঁদের পিএ-দের জিজ্ঞাসা করুন।” আর সজ্জন জিন্দল? এ প্রশ্নের জবাবে অবশ্য পার্থবাবু বলেন, “হ্যাঁ।”যদিও জিন্দলেরই সংস্থা জেএসডব্লিউ বেঙ্গল-এর সূত্রে তেমন ইঙ্গিত এ দিন পর্যন্ত মেলেনি। |
যাঁরা বড় নাম খুঁজছেন খুঁজুন।
আমাদের কাছে শুধু মালিক
নন,
যাঁরা ব্যবসা চালান সকলেই গুরুত্বপূর্ণ।
পার্থ চট্টোপাধ্যায়, শিল্পমন্ত্রী |
|
বড় শিল্পপতিদের নাম নিয়ে ধোঁয়াশা রাখলেও হলদিয়ায় আলোচনাচক্রে কারা বক্তব্য পেশ করবেন, সেই তালিকাটি (‘বেঙ্গল লিড্স’-এর ওয়েবসাইটেও তা রয়েছে) এ দিন পুরো পড়ে শুনিয়েছেন শিল্পমন্ত্রী। সেই তালিকায় মূলত বিভিন্ন সংস্থার পদস্থ কর্তা এবং রাজ্যের আমলারাই রয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, এ রকম শিল্প সম্মেলন আয়োজনের মূল কারণ, ঘরে-বাইরে লগ্নিকারীদের রাজ্য সম্পর্কে একটা ইতিবাচক বার্তা দেওয়া। সম্মেলনে প্রথম সারির শিল্প-কর্তারা থাকলে লগ্নিকারীদের আস্থা বাড়ে। তখন অন্য লগ্নিকারীরা মনে করেন, প্রথম সারির শিল্প-কর্তারা যখন বারবার আসছেন, তখন নিশ্চয়ই রাজ্যে লগ্নি-সহায়ক পরিবেশ রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের ভাবমূর্তি নিয়ে এখনও সংশয়ে রয়েছে শিল্পমহল। তাই এই রাজ্যে এমন বার্তা দেওয়াটা আরও বেশি জরুরি।
শিল্পমহলের মতে, শিল্প-সহায়ক পরিবেশের দিক থেকে এ রাজ্যের চেয়ে হাজার মাইল এগিয়ে গুজরাত। সেখানে সহজেই লগ্নি যাবে, এটাই স্বাভাবিক। তবু মোদী আত্মতুষ্ট হননি। আর তাই তাঁর পাশে বসে সম্মেলন সফল করতে দেখা গিয়েছে মুকেশ-অনিল অম্বানী বা রতন টাটাকে। এই সম্মেলন সফল করতে একই রকম চনমনে থাকেন দেশ-বিদেশের অন্য বড় শিল্পকর্তারাও। কেউ কেউ গুজরাতের দাঙ্গা নিয়ে সরব হয়েও সে রাজ্যে বিনিয়োগের গুরুত্ব মেনে নেন। আর প্রথম সারির শিল্প-কর্তা বা কূটনীতিক যখন এ সব কথা বলেন, তখনই সে রাজ্যের সম্পর্কে একটা বার্তা যায় সর্বত্র।
অথচ ‘বেঙ্গল লিড্স’ সম্মেলনের দু’দিন আগেও এই নিয়ে স্পষ্ট কিছু বলতে পারছে না পশ্চিমবঙ্গ। ফলে প্রশ্ন উঠেছে, সম্মেলন হলেও শিল্প হবে তো? প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যও এ দিন এই নিয়ে বিঁধেছেন রাজ্য সরকারকে। তাঁর বক্তব্য, চেন্নাই পেরেছে, গুড়গাঁও পেরেছে, গুজরাত পেরেছে। কিন্তু তৃণমূল সরকারের শিল্প ও জমি-নীতির ফলে অন্ধকারে ডুবে যাচ্ছে বাংলা।
বস্তুত, মমতার সরকারও যে কখনও বড় শিল্প-কর্তাদের উপস্থিতিকে গুরুত্ব দেয়নি, এমন নয়। সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে শিল্পমহলের সঙ্গে প্রথম যে বৈঠকটি করেন, সেখানে এসেছিলেন আদি গোদরেজ।
গত বার কলকাতার মিলন মেলায় আয়োজিত ‘বেঙ্গল লিড্স’-এ এসেছিলেন সজ্জন জিন্দল, রাজীব তলোয়ার, বেণু শ্রীনিবাসন, অতুল পুঞ্জ। শিল্প মহলের খোঁজখবর যাঁরা রাখেন, তাঁদের বক্তব্য, এই সব শিল্পপতিদের আনার ব্যাপারে অনুঘটকের কাজ করেছিলেন এক অনাবাসী বাঙালি শিল্পপতি। |
|
রাত পোহালেই উদ্বোধন। এখনও অনেকটাই বাকি স্টল তৈরির কাজ। —নিজস্ব চিত্র |
গত বারের ‘বেঙ্গল লিডস’-এর আসরে উপস্থিত শিল্পপতি ও বিভিন্ন দূতাবাসের প্রতিনিধিদের নাম করে করে মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্টই জানতে চেয়েছিলেন, তাঁরা এ রাজ্যে লগ্নি করবেন কি না।
তবু রাজ্য এখন বড় শিল্প-কর্তাদের উপস্থিতিকে শিল্প সম্মেলন সফল করার মাপকাঠি হিসেবে মানতে নারাজ। তেমনই নারাজ ছোটখাটো ভুল নিয়ে প্রশ্ন শুনতেও। শিল্পমন্ত্রী এ দিন বলেন, “অনেকেই বানান থেকে শুরু করে ছোটখাটো ভুল ধরছেন। কাজ করলে ভুল হতেই পারে। তবে বাদবাকি যে ভাল কাজটা হচ্ছে, সেটাকে তুলে ধরুন।”
তাঁর দাবি, গত বারের চেয়ে এ বার স্টলের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। তাঁর আশা, বাড়বে শিল্পমহলের প্রতিনিধির সংখ্যাও। হলদিয়ায় রোজ যাওয়ার জন্য রাজ্য শিল্পোন্নয়নের নিগমের দফতর থেকে বিশেষ ভলভো বাসের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। ব্যবস্থা থাকছে বিমানবন্দরেও, যাতে বিমান থেকে নামার পরে হলদিয়া যেতে সমস্যা না হয়। পাশাপাশি, বেঙ্গল লিডস-এর ওয়েবসাইটে টিআইএল সংস্থা ট্র্যাক্টর তৈরি করে বলে যে তথ্য দেওয়া হয়েছিল, তা এ দিন সরিয়ে ফেলা হয়েছে।
এ সব সত্ত্বেও প্রস্তুতিপর্ব নিয়ে সংশয় এখনও পুরোপুরি কাটেনি। যেমন, হলদিয়ার হেলিপ্যাড ময়দানে এ দিন সন্ধ্যায়ও অধিকাংশ স্টল তৈরির কাজ অনেক বাকি। ২১০টি স্টলের মধ্যে মাত্র দু’টি স্টলের কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে। বাকিগুলিতে প্লাই দিয়ে কাঠামো তৈরি হচ্ছে মাত্র। মেলা প্রাঙ্গণের পূর্ব ও পশ্চিমে তিনটি করে মোট ছ’টি ‘হ্যাঙ্গারে’র প্রাথমিক কাঠামো তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে চারটিতে স্টল হবে। বাকি দু’টি আলোচনাসভা এবং অতিথিদের বসার জন্য ব্যবহার করা হবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানও হবে সেখানেই। অথচ ওই দু’টি হ্যাঙ্গারের পরিকাঠামোই এখনও সম্পূর্ণ হয়নি। যদিও ‘বেঙ্গল লিডস’-এ অন্যতম আয়োজক হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদের (এইচডিএ) মুখ্য নির্বাহী আধিকারিক পি উলগানাথন বলেন, “যাঁরা কাজ করছেন, তাঁরা খুবই পারদর্শী। এখনও এক দিন হাতে আছে। নির্দিষ্ট সময়েই সব কাজ শেষ হয়ে যাবে।”
|
|
|
|
|
|
|