ফলাফলের মরসুমের শুরুতে ম্যাচের প্রথম বলে ছক্কা মারার ঢঙে ফল প্রকাশ করেছে সম্প্রতি খানিকটা ঝিমিয়ে পড়া অগ্রণী তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা ইনফোসিস।
ইনফোসিসকে নিয়ে আশঙ্কা ছিল অনেকেরই। সবাইকে তাক লাগিয়ে অর্থবর্ষের তৃতীয় ত্রৈমাসিকে ইনফোসিস শুধু আশার তুলনায় বেশি লাভের তথ্যই প্রকাশ করেনি। গোটা বছরের আয়ও যে আগের আগাম অনুমানের তুলনায় বাড়বে, তারও ইঙ্গিত দিয়েছে। বাজার বেজায় খুশি এই ফলাফলে। শুক্রবার ইনফোসিস এক লাফে বাড়ে প্রায় ১৭%। সঙ্গে বাড়ে টি সি এস-সহ অন্যান্য তথ্যপ্রযুক্তি শেয়ারের বাজার দরও। অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর, এই তিন মাসে কোম্পানির আয় বেড়ে পৌঁছেছে ১০,৪২৪ কোটি টাকায়। নিট মুনাফার পরিমাণ ছিল ২,৩৬৯ কোটি টাকা। শেয়ার পিছু আয় ৪১.৪৭ টাকা। কোম্পানির অনুমান, গোটা বছরে তাদের আয় হবে ৪০,৭৪৬ কোটি টাকা। এবং শেয়ার পিছু আয় দাঁড়াবে ১৬২.৮০ টাকা। মরসুমের গোড়াতেই এমন একটি ভাল ফলাফল অবশ্যই বাজারকে শক্তি জোগাবে।
একই দিনে খারাপ খবরও ছিল বাজারের কাছে। নভেম্বরে শিল্পোৎপাদন কমেছে ০.১%। এই খবর ইনফোসিসের ভাল ফলাফলজনিত উচ্ছ্বাসে জল ঢেলে দেয়। সকালের শক্তিশালী বাজার বিকেলে আবার গুটিয়ে যায়।
এর অবশ্য একটা ভাল দিকও আছে। শিল্পোৎপাদন এক রকম থমকে যাওয়াটা রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে সুদ কমাতে উদ্বুদ্ধ করবে বলে মনে করেছেন অনেকেই। নভেম্বরে সব থেকে খারাপ অবস্থা ছিল খনি এবং মূলধনী পণ্য শিল্পের। এই দুই শিল্পে উৎপাদন কমেছে যথাক্রমে ৫.৫% এবং ৭.৭% হারে। এর ফলে দেশের আর্থিক বৃদ্ধি যে বড় ধাক্কা খাবে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। সবাই এখন চাতক পাখির মতো বসে আছে ২৯ জানুয়ারি রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সুদ কমায় কি না, তা দেখার জন্য। সুদ কমানো হলে সূচক আবার শক্তি পাবে সন্দেহ নেই। ডিসেম্বরে রফতানি কমেছে ১.৯২%। এই নিয়ে পর পর আট মাস ধরে রফতানি হ্রাস পেল। অর্থনীতির কাছে খবরটি আদৌ শুভ নয়। পাশাপাশি, আমদানি বেড়েছে ৬.৩%। ফলে, বৈদেশিক বাণিজ্যে ঘাটতি বেড়ে হয়েছে ১৭০০ কোটি ডলার।
এই প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও বাজার কিন্তু আশা ছাড়েনি। আর্থিক সংস্কার শুরু হয়েছে। রেলের ভাড়া অবশেষে বাড়ানো হয়েছে। কিছু দিনের মধ্যেই সম্ভবত বাড়বে ডিজেলের দাম। পরিস্থিতি অনু -যায়ী সুদ কমানোর যথেষ্ট সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। সব মিলিয়ে অন্ধ- কারের মধ্যে বাজার যেন আশার আলো দেখতে পাচ্ছে। ইনফোসিসের ফলাফল অবশ্যই কিছুটা শক্তি জোগাবে বাজারকে। চলতি সপ্তাহ থেকে জোরকদমে শুরু হয়ে যাবে ফলাফল প্রকাশের পালা। আগের তিন মাসে উৎসবের মরসুম পড়ায় অনেক কোম্পানির ফলাফলে উন্নতি লক্ষ করা যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। সূচককে উপরে ধরে রাখার জন্য অবশ্য প্রয়োজন বিশ্ব বাজারের সহায়তা এবং ভারতে বিদেশি লগ্নি বৃদ্ধি পাওয়া। আর্থিক সংস্কার ত্বরান্বিত হলে বিদেশি লগ্নি বাড়তে পারে বলেও মনে করা হচ্ছে।
কোম্পানি ফলাফল প্রকাশের পালা শেষ হতে না-হতেই শুরু হয়ে যাবে বাজেট দৌড়। বাজেট নিয়ে জল্পনা-কল্পনা এরই মধ্যে শুরু হয়েছে। বাজেট অধিবেশনে বিমা বিল পেশ করা হবে বলে মনে করা হচ্ছে। অর্থাৎ বাজারে এখন উত্তেজনার কোনও অভাব থাকবে না। বিভিন্ন কারণে চলবে ওঠা পড়া। বাজারের সাম্প্রতিক উত্থানের সুযোগ নিয়ে বহু লগ্নিকারী ২০০৭-’০৮ সালে কেনা পুরনো ইউনিট বিক্রির পথে নেমেছেন। এর ফলে মোটা টাকা প্রদান করতে হচ্ছে মিউচুয়াল ফান্ডগুলিকে। ইক্যুইটির বাজার দীর্ঘ মেয়াদে চাঙ্গা থাকলে হয়তো আমরা বাজারে নতুন মিউচুয়াল প্রকল্প আসতে দেখব।
১০টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে ২০১২-’১৩ সালে সরকার মোট ১২,৫১৭ কোটি টাকা মূলধন বাবদ লগ্নি করতে রাজি হয়েছে। এর মধ্যে স্টেট ব্যাঙ্ক একাই পাবে ৩০০০ কোটি টাকা। অন্যদের মধ্যে পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক পাবে ১২৫০ কোটি, ইন্ডিয়ান ওভারসিজ ব্যাঙ্ক ১০০০ কোটি এবং ব্যাঙ্ক অব বরোদা ৮৫০ কোটি টাকা। আশা করা যায়, এই সিদ্ধান্তের সুফল বর্তাবে এই সব ব্যাঙ্কের শেয়ার দরের উপর। অন্য দিকে, ডিজেলের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবে চাঙ্গা হয়ে উঠেছে ওএনজিসি-সহ বিভিন্ন তেল উৎপাদন এবং বিপণন সংস্থার শেয়ার।
নিফ্টি বার কয়েক ৬০০০ অঙ্কের বাধা পার করলেও সেনসেক্স এই দফায় এখনও ২০,০০০ পার করতে পারেনি। চলতি সপ্তাহে প্রকাশিত কোম্পানি ফলাফলে ভর করে সেনসেক্স এই উচ্চতা পায় কি না, তাই এখন দেখার। এখন বাজারের গতিপ্রকৃতি নির্ণয় করবে ২৯ তারিখে সুদ সম্পর্কে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সিদ্ধান্ত এবং তার পর অবশ্যই বাজেট। লগ্নিকারীদের এখন সজাগ থাকতে হবে। পরিস্থিতি অনুযায়ী দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে এবং তা কার্যকর করতে হবে। |