কালনা সুপার সকার ক্লাবে চ্যাম্পিয়ন হল ইস্টবেঙ্গল। রবিবার শহরের অঘোরনাথ পার্ক স্টেডিয়ামে লাল-হলুদ বাহিনী ১-০ গোলে হারায় ইউনাইটেড সিকিমকে। খেলা দেখতে মাঠে উপচে পড়া ভিড় ছিল।
দেশের বাছাই করা বারোটি অনূর্ধ্ব ১৯ দলকে নিয়ে ৬ জানুয়ারি এই টুর্নামেন্ট শুরু হয়। ফাইনাল খেলাটিতে প্রতিপক্ষ ছিল বাংলা ও সিকিম। এ দিন বিকেল তিনটে নাগাদ খেলা শুরু হয়। ইস্টবেঙ্গল খেলা সাজায় চার-দুই-চার ছকে। অন্যদিকে, সিকিম খেলা শুরু করে চার-তিন-তিন ছকে। প্রথম ১০ মিনিটে আক্রমণ-প্রতি আক্রমণে খেলা জমে ওঠে।
প্রথমার্ধে ১২ মিনিটের মাথায় মাঝমাঠ অতিক্রম করে সহ-খেলোয়াড়দের কাছে একটি পাস পেয়ে ইস্টবেঙ্গল স্ট্রাইকার জিতেন মুর্মু দেখে বিপক্ষ গোলরক্ষক নিম তেনজিং লেপচা গোল ছেড়ে এগিয়ে এসেছে। ঝটিতে তার ডান পা কেঁপে ওঠে। প্রায় ৪০ গজ লম্বা শট সিকিম গোলরক্ষককে বোকা বানিয়ে জালে জড়িয়ে যায়। গোটা মাঠ উঠে দাঁড়িয়ে এই গোলের তারিফ করে।
গোল খাওয়ার পর পাহাড়ি ছেলেদের উদ্যম অনেকটাই নষ্ট হয়ে যায়। এই অর্থে জিতেন ছিলেন বেশ বিপজ্জনক। ব্যক্তিগত নৈপুণ্যে বেশ কয়েকবার সে গোলের কাছে পৌঁছে যায়। গোল করার মিনিট পাঁচেক পর জিতেন তার সহ-খেলোয়াড় সৌমেন সরকারের উদ্দেশ্যে ‘ডিফেন্স চেরা থ্রু’ বাড়ায়। সৌমেন গোল মিস করেন। প্রথমার্ধে জিতেনকে আটকাতে সিকিমের খেলোয়াড়দের মাথা গরম করতে দেখা যায়। দলের ১৮ নম্বর জার্সিধারি স্টপার কুসেন মাঙ্গার জিতেনের কানে চড় মেরে হলুদ কার্ড দেখে। রেফারি লাল কার্ড দেখালেও গ্যালারি বিস্মিত হত না। |
চলছে লড়াই। অঘোরনাথ স্টেডিয়াম পার্কে নিজস্ব চিত্র। |
প্রথমার্ধে খেলা শেষের আগে সিকিম দলের কাছে গোল করার সুযোগ আসে। দলের স্ট্রাইকার তেসরিং জাংপো লেপচার হেড অল্পের জন্য লক্ষভ্রষ্ট হয়। এই অর্ধ শেষ হওয়ার আগে ৩০ সেকেন্ড আগে ফের জিতেনের ডান পা সক্রিয় হয়ে ওঠে। তবে বিপক্ষের কক্ষে তাঁর আড়াআড়ি পাসে পা ছোঁয়াতে ব্যর্থ হন সহ-খেলোয়াড়েরা। দ্বিতীয়ার্ধে ইস্টবেঙ্গলকে খুব বেশি আক্রমণাত্মক হতে দেখা যায়নি। বক্সের মধ্যে ফেলা উঁচু বলের বেশিরভাগই ইস্টবেঙ্গলের স্টপারদের দখলে চলে যায়। খেলায় সিকিম দলটির ছন্দ নষ্ট হয় টুর্নামেন্টের অন্য খেলাগুলিতে সাফল্য পাওয়া মাঝমাঠের খেলোয়াড় যুগল লেপচার বিশেষ কিছু করতে না পারায়। ইস্টবেঙ্গলের শক্তিশালী ডিফেন্স ভেদ করে তাঁর পা থেকে দর্শকরা ভাল থ্রু দেখতে পায়নি। দ্বিতীয়ার্ধে সিকিমের প্রশিক্ষক বিবেক ভুটিয়া স্ট্রাইকার অনচু লেপচাকে মাঠ থেকে তুলে নেয়। তাঁর জায়গায় মাঠে নামে আর এক স্ট্রাইকার সুখরাজ শুক্লা। তাতেও গোল না আসায় শেষ দশ মিনিটে দলের দুই মাঝমাঠের খেলোয়াড় বিবেক ভুটিয়া এবং দিলীপ মাঙ্গারকে তুলে আনেন বিপক্ষের বক্সে। ইস্টবেঙ্গল রক্ষণাত্মক নীতি নেয়। শুধু ফাইনাল খেলায় নয়, গোটা টুর্নামেন্ট জুড়ে ইস্টবেঙ্গলের ডিফেন্স ছিল দুর্ভেদ্য। ফাইনাল খেলায় নজরকাড়া সাফল্যের জন্য ম্যান-অফ-দ্য ম্যাচের পুরস্কার পায় লাল-হলুদের রক্ষণ বিভাগের খেলোয়াড় ওয়াসিম আক্রম মালিক। ফাইনাল অবশ্য খুব উচ্চমানের হয়নি। খেলায় দূর পাল্লার ভাল শট, বাঁক খতিয়ানে ফ্রি কিক, কর্নার দেখা যায়নি। খেলা শেষে ইস্টবেঙ্গল কোচ তরুণ দে’র মুখে হাসি দেখা গেল। তিনি বলেন, “জিতেন অসাধারণ প্রতিভা। আজকে ওর গোলটা দুর্দান্ত। ও বড় দলে খেলার ক্ষমতা রাখে। গোটা খেলায় বাকিরাও দারুণ পরিশ্রম করেছে।” প্রাক্তণ তারকা খেলোয়াড় তরুণবাবুর দাবি, বড় দলের খেলোয়াড় তৈরির উদ্দেশ্যেই করা হচ্ছে এই দলটি। তবে ঘষা-মাজা করার জন্য মাঠ পাওয়া যাচ্ছে না। কলকাতার ক্লাবের মাঠে সকালে এরিয়ান। দুপুরে বড় দল খেলে। টুর্নামেন্টে প্রতি খেলায় ইস্টবেঙ্গল জয় পেলেও গোল পার্থক্য কেন একের বেশি হল না? তাঁর জবাব, “অঘোরনাথ পার্কের হাল অত্যন্ত খারাপ। এই মাঠে ভাল ফুটবল খেলা যায় না।” টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ চারটি গোল করেন সিকিম দলের টি জে তামাং। এই দলের থেকে যুগল লেপচা টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়। সেরা গোলরক্ষকের পুরস্কার পায় ইস্টবেঙ্গলের শান্তদীপ কাঞ্জিলাল। দুই দলকে পুরস্কার এবং ট্রফি তুলে দিতে এদিন মাঠে ছিলেন রাজ্যসভার প্রাক্তন সাংসদ অবনী রায়, শিল্পপতি সুশীল মিশ্র-সহ বেশ কিছু বিশিষ্ট মানুষ। |