রবিবারের রোদ-ঝলসানো কোচিতে গোটা দিন ধরে একটাই জল্পনা তিনি কি মঙ্গলবার মাঠে আসবেন? তাঁর হাতেই ম্যাচের টিকিট বিক্রির উদ্বোধন হয়েছে। ইন্ডিয়া নেটে বল করবেন বলে গিয়েছেন এই সে দিন। কিন্তু তার পরেই তো ফিসফাস শুরু হয়ে গিয়েছে, টিম ইন্ডিয়ার ধারেকাছে থাকতে চান না। মাঠে আসবেন না, মঙ্গলবার ম্যাচের দিন বাড়িতে বসেই দিন কাটাবেন। জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়াম জুড়ে তখন গুঞ্জনতা হলে কি অভিমান করে নিজেকে এ ভাবে গুটিয়ে নিচ্ছেন?
সারা দিনের জল্পনার অবসান ঘটালেন তিনি নিজেই। রবিবার রাতে আনন্দবাজারকে বলে দিলেন, ম্যাচ তো দেখবেনই। সোমবার ধোনিদের নেটে বল করতেও আসবেন।
তিনি মানে শান্তাকুমারন শ্রীসন্থ। “খবরটা দেখলাম। কারা এ সব ছেপে দিয়েছে কে জানে! তারা আর যা-ই হোক, আমার বন্ধু না!” বলছিলেন শ্রীসন্থ। গলায় অভিমানের ছিটেফোঁটাও নেই। “আরে, আমার শহরে এত দিন পরে ভারতের ম্যাচ হচ্ছে। মালয়ালি হিসেবে আমি গর্বিত। সবার আগে আমি ক্রিকেটের একজন অন্ধ ভক্ত। আমি মাঠে আসব না, হয়?” তা হলে যে দীর্ঘদেহী ইংরেজ পেসারদের সামলানো আয়ত্ত করতে শোনা যাচ্ছে কেরলের আর এক পেসার সন্দীপ ওয়ারিয়রকে নেটে বিশেষ তলব করেছে ভারতীয় বোর্ড? মহারাষ্ট্রে ক্লাব ম্যাচ ফেলে কোনওমতে কোচি পৌঁছেছেন ছ’ফুট একের তরুণ। আপনার নামটা তো শোনা গেল না? “সন্দীপ তো থাকবেই। দারুণ পেসার। তবে চোখ রাখবেন মণিকুষণ নামের ছেলেটার দিকে। কেরলের সারপ্রাইজ প্যাকেজ। আরও অনেককে দেখবেন কাল। কেরলের পেস ব্যাটারি নিয়ে ধোনিদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ব!” হাসতে হাসতে বলেন শ্রীসন্থ। |
ভারতীয় ক্রিকেটের এক সময়কার ‘ব্যাড বয়’ আজ অনেক পরিণত, শান্ত। এক সময় যাঁর নামের সঙ্গে ‘বিতর্ক’ শব্দটা পাকাপাকি ভাবে জুড়ে গিয়েছিল, আজ তাঁর টুইটার প্রোফাইলে গিয়ে দেখুন। একের পর এক মোটিভেশনাল টুইট। কী হল শ্রীসন্থের? তাঁর নিজের ব্যাখ্যা, “বয়স আর অভিজ্ঞতার সঙ্গে সঙ্গে মানুষ তো এ ভাবেই পাল্টে যায়। যখন জাতীয় দলে ডাক পাই, তখন নিজের রাজ্য থেকে আমার ‘আইডল’ বলতে কেউ ছিল না। আমাকে ঠিক রাস্তা বাতলে দেওয়ার কেউ ছিল না। নিজের যেটা মনে হত, সেটাই করতাম।” তখনকার শ্রীসন্থের মনে হত, আগ্রাসনই ক্রিকেটের শেষ কথা। “পরে কাউন্টি খেলার রগড়ানি থেকে বুঝতে পারলাম, ভাল ক্রিকেটার হতে গেলে আগ্রাসন ছাড়া আরও অনেক কিছু দরকার। তখন থেকেই নিজেকে পাল্টানো শুরু।”
হুইলচেয়ারে কাটানো দুটো মাস খুঁটিয়ে দেখেছেন ভারতের খেলা। টিম ইন্ডিয়ার বিপর্যয় নিয়ে মুখ খুলতে চান না, কিন্তু জাতীয় দলে বাংলার দুই পেসার নিয়ে বলতে গিয়ে উচ্ছ্বসিত তিনি। “দিন্দা আমার ভাল বন্ধু। জানি ও কত খাটে। সামির সঙ্গে দু’এক বার দেখা হয়েছে। আমার মনে হয় ওরা দু’জনে টিম হিসেবে বল করলে বেশি সাফল্য পাবে।” একই সঙ্গে চান, কেরলের তরুণ পেসারদের কাউকে সুযোগ দেওয়া হোক জাতীয় দলে। “মালয়ালি কেউ টিমে থাকলে দেখবেন, দলের পরিবেশটাই বদলে যাবে!” হালকা রসিকতা তাঁর।
ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম তিন ওয়ান ডে-তে নেই বলে মোটেও ভেঙে পড়েননি শ্রীসন্থ। জাতীয় দলে প্রত্যাবর্তনের আশা এখনও বুকে নিয়ে ঘুরছেন আসছে মাসে তিরিশে পা দিতে চলা পেসার। জানাচ্ছেন, এখন তিনি পুরো ফিট। আর এখনও বলটা মুভ করাতে পারেন। চোদ্দো মাসে ছ’টা অস্ত্রোপচারের স্মারক হিসেবে দু’পায়ের বুড়ো আঙুলে প্ল্যাটিনামের দুটো পেরেক নিয়ে ঘুরতে হয়। এই অবস্থায় হাল ছাড়াই হয়তো সবচেয়ে সহজ রাস্তা। যে রাস্তায় মোটেই হাঁটতে চান না শ্রীসন্থ। তাঁর স্বপ্নে যে এখনও নীল জার্সি! |