সম্পাদকীয় ২...
উত্তরাধিকার!
দ্রাবিড় রাজনীতির কুলপতি করুণানিধি সম্প্রতি কনিষ্ঠ পুত্র এম কে স্তালিনকে উত্তরসূরি মনোনীত করিয়াছেন। এই উত্তরাধিকার যদি করুণানিধির সংগৃহীত ব্যক্তিগত সম্পত্তির হইত, তবে তাহা লইয়া তাঁহার পরিবারের বাহিরের কাহারও বলার কিছু থাকিত না। নিজের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি করুণানিধি কাহাকে দিয়া যাইবেন, সেটা তো একান্তভাবে তাঁহারই এক্তিয়ার। কিন্তু করুণানিধি ডিএমকে দল পরিচালনার উত্তরাধিকার স্তালিনের হস্তে সমর্পণ করার কথা ঘোষণা করিয়াছেন। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠিয়াছে, একজন রাজনীতিক এ ভাবে একটি আস্ত রাজনৈতিক দলকে তাঁহার ব্যক্তিগত, বিতরণযোগ্য এবং পারিবারিক উত্তরাধিকার রূপে বর্তাইবার মতো সম্পত্তি গণ্য করিতে পারেন কি না। এবং প্রশ্নটি তুলিয়া দিয়াছেন করুণানিধিরই জ্যেষ্ঠ পুত্র আলাগিরি।
করুণানিধি যাহা করিয়াছেন, রাজারাজড়ারা অতীতে তাহাই করিতেন, তাহা লইয়া কেহ কোনও প্রশ্ন বা সংশয় জ্ঞাপনের সাহসও পাইত না। প্রজাতন্ত্রের আগমন আপাতদৃষ্টিতে রাজানুগ্রহের সেই ঐতিহ্য হইতে দেশকে মুক্ত করিয়াছে, কিন্তু কার্যত ভারতীয় সমাজ ও রাজনীতি যে এখনও বহু বিষয়েই এ ধরনের উত্তরাধিকার-নির্ভর বন্দোবস্তে স্বস্তি বোধ করে, তাহা নিশ্চিত। তাই করুণানিধি যখন ডিএমকে দলের প্রথাগত স্তরবিন্যাস সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করিয়া একতরফাভাবে এক ছেলেকে দলীয় নেতৃত্বের উত্তরাধিকার সম্প্রদান করেন, তখন অন্য ছেলে ছাড়া দলের আর কেহই ক্ষুব্ধ বা প্রতিবাদী হন না। গোটা দলই বিনা বাক্যব্যয়ে কুলপতির অভিপ্রায় শিরোধার্য করিয়া লয়। দ্রাবিড় রাজনীতির অন্য মেরু এডিএমকে’তেও একই ধরনের পারিবারিক উত্তরাধিকারের ঐতিহ্যই সুপ্রতিষ্ঠিত। সেখানেও এম জি রামচন্দ্রনের মৃত্যুর পর তাঁহার সঙ্গিনী জয়রাম জয়ললিতাই মসৃণভাবে নেতৃত্বের উত্তরাধিকারে অভিষিক্ত হইয়া যান। দলের মধ্যে কোনও নির্বাচন বা ভোটাভুটিরও দরকার হয় না। এ ভাবেই দেশের এক-একটি দল অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্ররহিত হইয়া ক্ষমতাসীন হইতে থাকে। একই মসৃণতায় মুলায়ম সিংহ যাদবের পুত্র অখিলেশ যাদব উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী হন, লালুপ্রসাদ যাদবের স্ত্রী রাবড়ি দেবী বিহারের, এন টি রাম রাওয়ের জামাতা চন্দ্রবাবু নায়ডু অন্ধ্রপ্রদেশের, বিজু পট্টনায়কের পুত্র নবীন পট্টনায়ক ওড়িশার। তবে এই সকল উত্তরাধিকারকে ছাপাইয়া দেশের মাথায় জ্বলজ্বল করে অবশ্যই নেহরু-গাঁধী পরিবারের উত্তরাধিকার, যে পরিবারের অভিভাবকত্ব ছাড়া দেশের দীর্ঘতম শাসক দল কংগ্রেস বরাবর আপনাকে অনাথ মনে করিয়াছে। এই অনাথত্ব হইতে মুক্তি পাইতে এখনও কংগ্রেস সনিয়া-তনয়ের মুখের দিকেই ব্যাকুল নয়নে চাহিয়া আছে। দিগ্বিজয় সিংহ হইতে মনমোহন সিংহ পর্যন্ত সকলেই দফায়-দফায় তাঁহার আগমনী বার্তাও পাঠাইতেছেন। অপেক্ষার তবু অন্ত হয় না। সেই ফরাসি প্রবচনটি অতি সত্য: যত বদলায়, ততই অপরিবর্তিত থাকে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.