সম্পাদকীয় ১...
ভারসাম্য থাকুক
শ্রীলঙ্কার প্রধান বিচারপতি শিরানি বন্দরনায়েকেকে ‘ইম্পিচ’ করার প্রক্রিয়া বেশ কিছু দূর অগ্রসর হইয়াছে। সে দেশের পার্লামেন্ট দুর্নীতির অভিযোগে প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে তদন্তও বসায়। সংসদীয় সেই তদন্ত কমিটি হইতে অবশ্য পক্ষপাতের অভিযোগে বিরোধী সাংসদরা ইস্তফা দেন। তথাপি ‘তদন্ত’ অব্যাহত থাকে এবং তাহাতে শিরানি বন্দরনায়েকে দোষী সাব্যস্ত হন। অতঃপর আনুষ্ঠানিক ইম্পিচমেন্ট প্রস্তাব এবং তাহার উপর ভোটাভুটিতে অধিকাংশ সাংসদের অনুমোদন। অনুমোদিত প্রস্তাবটি এখন প্রেসিডেন্ট মহিন্দা রাজাপক্ষের বিবেচনার অপেক্ষায়। সমগ্র ঘটনাটি শ্রীলঙ্কায় নির্বাচিত আইনসভা বনাম বিচারবিভাগের দ্বন্দ্বকে প্রকট করিয়া দিয়াছে। প্রেসিডেন্ট রাজাপক্ষে কিংবা তাঁহার অনুগত আইনসভার সকলেই জনাদেশে নির্বাচিত। স্বভাবতই গণতান্ত্রিক বৈধতার নিরিখে তাঁহাদের বিশ্বাসযোগ্যতা বেশি। আবার সংবিধানের মর্যাদা রক্ষায় বিচারবিভাগের স্বাধীনতার প্রশ্নটিকেও এ ক্ষেত্রে উড়াইয়া দেওয়া যায় না। শ্রীলঙ্কার বিশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে রাজাপক্ষে পরিবারের নিরঙ্কুশ ক্ষমতা কুক্ষিগত করার স্বৈরাচারী প্রবণতাটির ক্ষেত্রে হয়তো বিচারবিভাগ একটি বড় বাধা হইয়া দাঁড়াইয়াছে। রাজাপক্ষের আইনসভায় পাশ হওয়া আইনকে ‘অসাংবিধানিক’ আখ্যা দিয়া প্রধান বিচারপতি ও সুপ্রিম কোর্ট তাঁহার বিরাগভাজনও হইয়াছেন।
এই ধরনের সমস্যা শ্রীলঙ্কার একার নহে। পাকিস্তানে সুপ্রিম কোর্ট, তাহার প্রধান বিচারপতি এবং সমগ্র বিচারবিভাগই নির্বাচিত পিপল্স পার্টি সরকারের সহিত মর্যাদা ও ক্ষমতার লড়াইয়ে লিপ্ত হইয়া পড়িয়াছে। নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট গিলানির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে তদন্ত না-চাওয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে পর্যন্ত পাক সুপ্রিম কোর্ট অপসারিত করিয়াছে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর উপরেও ক্রমাগত চাপ সৃষ্টি হইতেছে প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থাগ্রহণের জন্য। বিচারবিভাগের সাংবিধানিক এক্তিয়ারের সহিত নির্বাচিত পার্লামেন্ট তথা সরকারের ক্ষমতার দ্বন্দ্ব রচিত হইতেছে। সুষ্ঠু শাসনপ্রণালীর জন্য্য অথচ এই দুই বিভাগের মধ্যে অর্থাৎ আইনসভা ও শাসন বিভাগের সহিত বিচারবিভাগের এক্তিয়ার ও ক্ষমতার স্পষ্ট ও সুষম বণ্টন ও ভারসাম্য জরুরি। কেননা এই ভারসাম্যের অভাব গণতন্ত্রকে বিপন্ন করিয়া তোলে। শ্রীলঙ্কার মতো পাকিস্তানেও গণতন্ত্র যে কিছুতেই দৃঢ়মূল হইতে পারিতেছে না, তাহার পিছনে শাসনব্যবস্থার এই স্তম্ভগুলির পারস্পরিক আন্তঃসম্পর্কের সমস্যার ক্রিয়া আছে। দেশে আইনের শাসন রক্ষায় এবং সংবিধানসম্মত আইনি শাসন বলবৎ করায় আদালত ও বিচারপতিদের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আবার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায়, বিশেষত প্রতিনিধিত্বমূলক পরিষদীয় গণতন্ত্রে নির্বাচিত আইনসভার সার্বভৌমত্ব লইয়াও সংশয় পোষণ করা সম্ভব নয়। ভারতের দিকে তাকাইলে বুঝা যায়, নানা সময়ে নানা সমস্যা সত্ত্বেও এ দেশে গণতন্ত্রের তিন স্তম্ভের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার ক্ষেত্রে তুলনায় সাফল্য অনেক বেশি। সরকারের সহিত বিচারবিভাগের দ্বন্দ্ব বাধিয়াছে, মতান্তর হইয়াছে। কিন্তু তাহা এমন কোনও সাংবিধানিক সঙ্কট সৃষ্টি করে নাই, যাহার সুযোগে বিচারবিভাগ কিংবা সরকার অতিরিক্ত ক্ষমতাশালী হইয়া উঠিতে পারে। এমনকী সত্তরের দশকে জরুরি অবস্থার দিনগুলিতে যে অনিয়ম দেখা দিয়াছিল, তাহাও কখনওই শ্রীলঙ্কা বা পাকিস্তানের মতো দুই পক্ষের চরম রণোন্মাদনা বা বিষোদ্গারে অধঃপতিত হয় নাই। শ্রীলঙ্কার প্রধান বিচারপতি আজ তাঁহার বিরুদ্ধে রাজাপক্ষে গোত্রের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলিতেছেন। পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতির পুত্রের বিরুদ্ধেও আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ উঠিয়াছে। ভারতে বফর্স কেলেঙ্কারি লইয়া দেশ উত্তাল হইলেও কোনও বিচারপতি কিংবা রাজনীতিক সে জন্য অপসারিত হন নাই, জনাদেশ যদি কাহাকেও গদিচ্যুত করিয়া থাকে, সেটা ভিন্ন প্রশ্ন। গণতান্ত্রিক কাঠামোর মধ্যে, সাংবিধানিক শর্ত মান্য করিয়াই এই সমস্যাগুলির সমাধান হইয়াছে। ইহা একই সঙ্গে শ্লাঘা এবং সতর্কতার বিষয়। গণতান্ত্রিক সাফল্যের শ্লাঘা, গণতন্ত্রকে রক্ষা করিবার প্রয়োজন সম্পর্কে সতর্কতা।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.