মেলাবেন তিনি মেলাবেন, এমন একটা কথা শুনে এসেছি জন্ম ইস্তক। আর তাই, এত অশান্তি, এত বিরোধ, এত আমরা-ওরা, তবু হাল ছাড়িনি। কেবল এই ‘তিনি’টি কিনি, সেটার হদিশ মিলছিল না কিছুতেই। হঠাৎ খেয়াল হল, কী আশ্চর্য, এত দিন ধরে চোখের সামনে দৃশ্যগুলোর জন্ম হয়ে চলেছিল, বুঝতেই পারিনি!
পশ্চিমবঙ্গের নেতা এবং নেত্রীরা প্রত্যেকেই নিজের মত নিজের পথ তীব্র ভাবে পালন করেন, কেউ কারও মুখদর্শন করেন না, বাক্যালাপ দূরস্থান, একে অন্যের ছায়াও সযত্নে এড়িয়ে চলেন! |
কিন্তু যে-ই না তাঁরা বাইকে চড়লেন, অমনি বোঝা গেল, সকলের স্বভাবই হুবহু এক রকম। এক থান থেকে কাটা। এত প্রচার, এত উপদেশ, তবু পশ্য পশ্য কারও মাথায় হেলমেট নেই। সঙ্গের চারটি ছবি গত কয়েক বছরের মধ্যেই তোলা। যাঁদের দেখা যাচ্ছে, তাঁদের কোনও দু’জনের খুব সদ্ভাব বলে শুনিনি। এক জনের বাইক ঈশান কোণ লক্ষ করে চললে অন্য জনের নাক নৈঋর্ত-বরাবর থাকে। কিন্তু মাথা সব্বার ফাঁকা।
তাই বলছিলাম, কে মেলাবেন, বুঝে ফেলেছি।
প্রিয়দর্শী রাহা। কলকাতা ৫৪
|
কেবল গুজরাত কেন’ প্রবন্ধে (১৮-১২) সাম্প্রদায়িকতা প্রসঙ্গে ইতিহাসবিদ তপন রায়চৌধুরীর মতামত বিষয়ে এই পত্র। তিনি মনে করেন, ‘হিন্দু মুসলমান সাম্প্রদায়িকতা ব্রিটিশের সৃষ্টি। ওঁদের আগে সাম্প্রদায়িকতার এই বিষবৃক্ষ ডালপালা মেলেনি।’ প্রসঙ্গত রাজা রামমোহনের মতামত উল্লেখ্য। ইংল্যান্ডের রাজাকে তিনি লিখেছিলেন, “The greater part of hindustan having been for several centuries subject to muhammadan rule, the civil and religious rights of its original inhabitants were constantly trampled upon...Divine providence at last...stirred up the english nation to break the yoke of those tyrants and to receive the oppressed natives of Bengal under its protection.” পরে লিখেছেন, “your dutiful subjects consequently have not viewed the English as a body of conquerors, but rather as deliverers, and look up to your majesty not as a ruler, but also as a father and protector.” (রামমোহন রচনাবলি, হরফ, ১৯৭৩, পৃ: ৫০৮-৯) সাম্প্রদায়িকতার ডালপালা না-হলেও শিকড় তো মনে হয় ইংরেজ রাজত্বের পূর্বেই দেখা গিয়েছিল। ইউরোপে ধর্মীয় হানাহানি প্রসঙ্গে তপনবাবু বলেন, ‘টলারেন্স কথাটায় ভারতবর্ষ ছাড়া কেউ বিশ্বাস রাখেনি।’ ভারতে বৌদ্ধধর্মের উপর যে অত্যাচার হয়েছিল, তা তো বিবেকানন্দও স্বীকার করেন। এ প্রসঙ্গে তিনি শঙ্করাচার্যের ‘narrowness of heart’-এর কথাও বলেছেন। (Complete works of Swami Vivekananda, vol vii, p118 এবং vol vi, p 394) অধ্যাপকের মতে, ‘শিক্ষিত বাঙালি অসাম্প্রদায়িক, হিন্দু মুসলিম ভেদে বিশ্বাস করে না, এর চেয়ে মিথ্যে আর হয় না।” শিক্ষিত বাঙালির মধ্যে সাম্প্রদায়িকতায় বিশ্বাসী যেমন আছেন, অসাম্প্রদায়িকও তো মনে হয় খুব কম নয়। বাঙালি মুসলমানের মধ্যেও আছেন। হিন্দু মুসলমানের মধ্যে ভেদে বিশ্বাস করলেই একজন সাম্প্রদায়িক হয়ে ওঠে না। বিদ্বেষের ফলেই সাম্প্রদায়িকতার উদ্ভব হয়।
গৌরীপদ ভট্টাচার্য। কলকাতা-৪৫ |