দিন ঘোষণাই সার
কেউই ভোট চাইছে না নাগাল্যান্ডে
ভোটের দিন ঘোষণা হয়ে গিয়েছে। কিন্তু রাজ্যের শাসক দল, বিরোধী দল, আম-জনতা, জঙ্গি সংগঠন, গির্জা, মানবাধিকার সংগঠন, নাগরিক সমাজ, উপজাতি সংগঠন কেউই ভোট চায় না! এমনই বিচিত্র অবস্থা নাগাল্যান্ডে। নাগাদের আপত্তি সত্ত্বেও ভোটপর্ব না পিছনোয় কেন্দ্র ও নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ মাথা চাড়া দিয়েছে রাজ্য জুড়ে। এই অবস্থায়, ভোট চাওয়া মানেই নিজের পায়ে কুড়ুল মারা।
তাই, শাসক বা বিরোধী দুই পক্ষই আপাতত বিভ্রান্ত।
নাগাল্যান্ডে পরিস্থিতি অনেকটাই ১৯৯৮ সালের মতো। ১৯৯৭ সালে, কেন্দ্র ও এনএসসিএন (আই এম) গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরের এক বছরের মধ্যে বিধানসভা নির্বাচন হয়েছিল। সব নাগা সংগঠনেরই দাবি ছিল, আগে বিদ্রোহী সংগঠনগুলির সঙ্গে আলোচনা হোক, তারপর রাজ্যে ভোট হবে। সার্বিকভাবে ‘ভোট বয়কট’-এর ডাক দেওয়া হয়। বিরোধী দলগুলিও নাগা সংগঠনগুলির দাবিকে সমর্থন জানায়। তৎকালীন শাসকদল কংগ্রেস বিরোধী দলের আপত্তি অগ্রাহ্য করে ভোটের ময়দানে নামে। ফাঁকা মাঠে গোল দিয়ে কংগ্রেসের জয় হয় ঠিকই। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী এস সি জামিরের গায়ে ‘নাগা বিরোধী’ তকমা চেপে বসে। যে অপবাদ এখনও ঘোচেনি। তার জেরেই ২০০৩-এ জামিরের ১০ বছরের শাসনের অবসান। ক্ষমতায় আসে বর্তমান এনপিএফ-বিজেপি জোট।
ঠিক দশ বছরর পরে যেন ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি। এ বার জামিরকে হঠিয়ে ক্ষমতা দখল করা মুখ্যমন্ত্রী নেফিয়ু রিও একই শাঁখের করাতের সামনে। ১৬ বছর ধরে চলা কেন্দ্র-আই-এম শান্তি আলোচনার অবিলম্বে চূড়ান্ত সমাধান চাইছে গোটা নাগাল্যান্ড। আই-এম অর্থাৎ মুইভা গোষ্ঠীর নেতারা জানিয়েছেন, সমাধান আসন্ন। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকও সেই ইঙ্গিত দিয়েছে। নাগা সমস্যার সমাধানের পরে, চুক্তি-উত্তর পর্বেরাজ্যের রাজনীতি-সমাজনীতিতে বিস্তর অদল-বদল আসতে চলেছে। তাই, এখনই নির্বাচন করে, আগামী পাঁচ বছরের জন্য সেই বদলের পথ রোধ করা হোক তা কেউই চাইছে না। কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকেই ভোট পিছনোর আবেদন জানায় নাগাদের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী উপজাতি প্রতিষ্ঠান নাগা হো হো। তাদের বক্তব্য, আট দশক ধরে লড়াই চলছে নাগাল্যান্ডে। এই পরিস্থিতিতে আগে স্থায়ী সমাধানের পথে না হেঁটে ফের জোড়াতালি দিয়ে ‘রাজ্য সরকার’ বানিয়ে লাভ নেই। এই মতে সমর্থন জানিয়েছে সব নাগা সংগঠন, গির্জা, মানবাধিকার সংগঠন ও রাজনৈতিক দল। নাগা নাগরিক সমাজও রাজ্য জুড়ে মানুষের মত নিয়ে দিল্লির সব রাজনৈতিক দলকে জানিয়ে দিয়েছে, নাগাল্যান্ডবাসী এখন নির্বাচন চাইছেন না।
কেবল অনুরোধ করাই নয়, হো হো-র প্রচ্ছন্ন হুমকি, রাজ্যবাসীর মতের বিরুদ্ধে ভোট করাতে গিয়ে কোনও গণ্ডগোল হলে বা ভোটের পরে কোনও সমস্যা হলে তার দায় নির্বাচন কমিশনকেই নিতে হবে।
জামিরের আমলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন প্রাক্তন কংগ্রেসি রিও। নাগাল্যান্ডে মানুষের আপত্তি অগ্রাহ্য করায় জামিরের ভাবমূর্তি কী দাংড়িয়েছে তা তিনি বিলক্ষণ জানেন। তাই, ভোটের দিন ঘোষণার আগেই রাজ্যের ৬০ জন বিধায়ককে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দ্বারস্থ হন তিনি। আবেদন রাখেন, ভোট পিছিয়ে দেওয়ার। তা হয়নি। এখন, ভোট প্রচার শুরু
করলে তাঁকেও ‘নাগা-বিরোধী’ তকমা পেতে হবে। আবার প্রচার না করলে, সেক্ষেত্রে কংগ্রেস কেড়ে নিতে পারে পালের হাওয়া।
সুযোগ বুঝে, কংগ্রেস ‘নির্বাচন নয় স্থায়ী সমাধানকে স্লোগান করে ‘পরোক্ষ প্রচার’ চালিয়ে যাচ্ছে। রিও ও বিজেপির ক্ষোভ, ১৯৯৮ সালের স্লোগানকে ধার করেই সুবিধা আদায় করতে চাইছে কংগ্রেস। এনপিএফ কংগ্রেসের ‘লোক দেখানো’ নাগাল্যান্ড প্রেমের সমালোচনা করলেও, এ ব্যাপারে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি নিলো রংমার বক্তব্য অন্য রকম। সাফাই দিতে রংমা জোর গলায় বলেন, “সে বার নাগা সংগঠনগুলি ভোট বয়কটের ডাক দেয়। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে আমাদের দাবি ভোট পিছিয়ে দেওয়া হোক ছয় মাস। বর্তমান সরকার কেন্দ্রকে রাজি করাতে পারেনি, সেটা তাদের ব্যর্থতা।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.