|
|
|
|
ছাদে পড়ছে গোলা, যখন তখন গুলি |
সাবির ইবন ইউসুফ • শ্রীনগর |
ফের সংঘর্ষবিরতি লঙ্ঘন কাশ্মীরে! কিছু ঘটনায় ভারত দুষছে পাকিস্তানকে, আবার কিছু ঘটনায় পাকিস্তান ভারতকে। কখনও অস্ত্র হাতে সীমান্ত পেরিয়ে কাশ্মীরে ঢুকে পড়ছে পাক সেনা। কখনও আবার তৎপর ভারতীয় সেনা সীমান্ত অঞ্চলে জারি করছে যুদ্ধের পরিস্থিতি।
এ সবের মাঝখানেই জাঁতাকলে পড়ে গিয়েছেন কাশ্মীরের সাধারণ মানুষ। সবর্দাই ভয়, আতঙ্কের পরিবেশ বিরাজ করছে তাঁদের চারিধারে। বার বার সংঘর্ষবিরতি লঙ্ঘনের ঘটনায় ব্যাহত হচ্ছে তাঁদের দৈনন্দিন জীবনের স্বাভাবিক ছন্দ। নিরাপদে যেতে পারছেন না কর্মক্ষেত্রে। ঘরবন্দি হয়েই কাটাচ্ছেন দিনের পর দিন। অবিরাম গুলিযুদ্ধে বলি হচ্ছে তাঁদের সন্তানদের শৈশব। কূটনৈতিক স্তরে কাশ্মীর সমস্যা সমাধানের চেষ্টা তো চলছে, কিন্তু কেউ খোঁজ রাখে না আদতে কেমন আছেন কাশ্মীরের সাধারণ মানুষ। কেউ জানতে চায় না কী চান তাঁরা। চুরান্ডা গ্রামের ঘটনা। গত তিন মাসে একের পর এক সংঘর্ষবিরতি লঙ্ঘনের ঘটনায় এক প্রকার থমকে গিয়েছে সেখানকার জনজীবন। ভারত-পাকিস্তান দু’পক্ষের মধ্যে গুলিযুদ্ধে মৃত্যু হয়েছে অন্তত তিন জন গ্রামবাসীর। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে একাধিক বসতবাড়ি। সন্ত্রস্ত গ্রামবাসীরা চাইছেন অবিলম্বেই একটা হেস্তনেস্ত করুক দিল্লি। তাঁদেরই কথা, “গুলিযুদ্ধে নরক হয়ে গিয়েছে আমাদের জীবন।” |
|
আতঙ্কের ছবি চোখেমুখে। কাশ্মীরের চুরান্ডা গ্রামের শিশুরা।—নিজস্ব চিত্র |
হঠাৎ হঠাৎ গুলির আওয়াজে, বিস্ফোরণের ভয়ানক শব্দে জ্ঞান হারাচ্ছে তাঁদের সন্তানেরা। কাশ্মীরের অশান্ত পরিবেশ বিরূপ প্রভাব বিস্তার করছে শিশু মনে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে মানসিক বিকারগ্রস্ত হয়ে পড়ছে তারা। আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলছে শিশু মন। সহায়হীন গ্রামবাসীরা জানাচ্ছেন, “আমরা জানি না এই পরিস্থিতিতে আমাদের কী করণীয়। দু’ দেশের এক মারণ যুদ্ধের ফাঁদে পড়ে গিয়েছি আমরা। কেউই নেই আমাদের কথা ভাবার।”
গত সপ্তাহেরই ঘটনা, কোনও মতে মৃত্যুর মুখ থেকে বেঁচে ফিরলেন চুরান্ডারই বাসিন্দা আব্দুল রশিদ দিদার ও তাঁর পরিবার। রাতে ঘুমোতে গিয়েছিলেন নিশ্চিন্তে। হঠাৎই ভয়ানক আওয়াজে ভেঙে গেল ঘুম। কামানের গোলা এসে পড়ল তাঁদের বাড়ির ছাদে। রশিদ বলছেন, “আমি ভাবলাম নতুন করে যুদ্ধ শুরু হল বোধহয়।” জীবন বাঁচাতে পরিবারের বাকিদের নিয়ে বাড়ির কাছের এক ধর্মশালাতে গিয়ে ওঠেন রশিদ।
সরল সাধারণ গ্রামবাসীরা বোঝেন না কূটনীতি, বোঝেন না রাজনীতির হিসেব নিকেশ। তাঁরা শুধু এটাই চায় ভারত ও পাকিস্তান, দু’পক্ষই যেন সংঘর্ষবিরতি চুক্তির শর্তাবলী মেনে চলে। চুরান্ডা গ্রামের পঞ্চায়েত প্রধান লাল দিন বলেন, “আমাদের কোনও দোষ নেই। অথচ ৬৫ বছর ধরে ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষের দায়ভার বহন করে চলেছি আমরা।” সীমান্ত বরাবর গুলির লড়াইয়ের শিকার হচ্ছেন বহু মানুষ। বিস্ফোরণের প্রভাবে বা গুলির আঘাতে প্রতিবন্ধীও হয়ে যাচ্ছেন অনেকে। লাল দিন বলেন সরকার বহু দিন ধরেই তাঁদের সুরক্ষার জন্য কংক্রিটের বাঙ্কার তৈরি করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছেন। কিন্তু এখনও পর্যন্ত তা পালনের কোনও প্রচেষ্টাই করা হয়নি। গ্রামবাসীদের দাবি, নিদেন পক্ষে গ্রামের স্কুলগুলির আশপাশে কংক্রিটের বাঙ্কার বানানো হোক, যাতে জরুরি অবস্থায় ছোটরা সেখানে আশ্রয় নিতে পারে। খাঁচাবন্দি গ্রামবাসীদের অভিযোগ, “বিপদ বুঝলে পালিয়ে আশ্রয় নেওয়ার মতো জায়গা কিছুই নেই এখানে। গ্রামের এক দিকে পাক সীমান্ত অন্য দিকে কাঁটাতার। যেন জীবন্ত কবর দেওয়া হয়েছে আমাদের।” |
|
|
|
|
|