হাড় কাঁপানো ঠান্ডাটা একটু বাগে এসেছে। রোদ অবশ্য কেমন যেন মরা। তার মধ্যেই মেলা অভিমুখে হাজার হাজার মানুষের ঢল। শয়ে শয়ে স্টল। গায়ে গায়ে আখড়া। চারদিকে হইচই। প্রশাসনের ব্যস্ততা। অজয় নদে মকরস্নানের কয়েক ঘণ্টা আগে রবিবার সকালে ধরা পড়ল জয়দেব মেলার চেনা ছবিটাই।
পরিবর্তন কি কিছুই হয়নি?
হয়েছে। প্রথমত, এ বার জয়দেব মেলার একটা বড় অংশ অজয়ের চরে সরে গিয়েছে। দ্বিতীয়ত, মেলা চত্বর পরিচ্ছন্ন রাখতে এ বার অনেকটাই তৎপর প্রশাসন। নদীর চর ও মেলা প্রাঙ্গণে প্রচুর ডাস্টবিন রাখা। বিডিও (ইলামবাজার) তথা মেলা কমিটির আন্যতম সদস্য অনিরুদ্ধ নন্দী বললেন, “অতিরিক্ত ভিড় সামলাতে এবং অগ্নিসংযোগ বা পদপিষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থেকে বাঁচতে অজয়ের চরে মেলা সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার যে চেষ্টা গত দু’তিন বছর ধরে চালানো হচ্ছিল, এ বার তা অনেকটাই সফল। পরিকাঠামোর উন্নতি অর্থাৎ রাস্তা, আলো এবং পানীয় জলের ব্যবস্থা হওয়ায় প্রচুর আখড়া ও স্টল নদীর চরে বসানো সম্ভব হয়েছে।” |
মেলায় হাজির বিদেশিনীও। ছবি: দয়াল সেনগুপ্ত |
চরে স্টল সরানো নিয়ে যদি মৃদু আপত্তি রয়েছে আখড়াগুলির। আখড়াগুলির পথ আটকে বসানো হয়েছে বেশ কিছু স্টলঅভিযোগ করলেন আখড়া কমিটির সম্পাদক সুভাষ কবিরাজ। তিনি বলেন, “প্রশাসনকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। আবার মেলার মূল প্রাঙ্গণ জয়দেবের রাধাবিনোদ মন্দির সংলগ্ল এলাকা ছেড়ে নদী চরে স্টল থেকে বেচাকেনা ঠিক মতো হবে কি না, তা নিয়ে আশঙ্কায় রয়েছেন গৌতম দেবনাথ বা অরূপ ঢালির মতো ব্যবসাদারেরা।
প্রশাসন অবশ্য ছোটখাটো বিষয় নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে না। তাদের একমাত্র লক্ষ্য, কী ভাবে মেলার তিন দিন সুষ্ঠু ভাবে কেটে যায়। বিশেষত মেলায় আসা লোকজনের সুবিধাঅসুবিধার উপরেই অন্য বারের তুলনায় জোর দেওয়া হয়েছে। অস্থায়ী শৌচাগার, পানীয় জলের ব্যবস্থা থেকে পুলিশের নজরদারিসবই বাড়ানো হয়েছে বলে দাবি প্রশাসনের। বর্ধমানের খোকন ব্যাপারী, পুরুলিয়া থেকে আসা প্রীতিবালা কর্মকার, কালীদাসী পোড়েল, বাঁকুড়ার সুব্রত শীলরা বললেন, “এখানে থাকা-খাওয়ার কোনও অসুবিধা নেই। তবে, মেলায় ভিড়ে টাকাপয়সা চুরি যাওয়ার বা পকেটমারির ঘটনা প্রায়ই ঘটে।”
প্রশ্ন রয়েছে মহিলাদের নিরাপত্তা নিয়েও। বোলপুরের এসডিপিও প্রশান্ত চৌধুরী জানালেন, কিছু মহিলা ও পুরুষ পুলিশকর্মী সাদা পোশাকে মেলায় ঘুরবেন। চুরি-ছিনতাই ও মহিলাদের সঙ্গে অভব্য আচরন যাতে না ঘটে, সে বিষয়ে নজরদারি করবেন।” পুলিশ-প্রশাসনেরর তরফে এ বারও মেলায় ‘গাইড ম্যাপ’ ও বিশেষ সতর্কীকরণ পোস্টার দেওয়া হয়েছে। এত কিছুর পরেও ভিড় সামলাতে ও উপযুক্ত পরিকাঠামো গড়ার ব্যাপারে এখনও প্রশাসনকে অনেক পথ যেতে হবে বলে মনে করছেন মেলায় আগত অনেকেই। |