মাস দু’য়েক আগে সাঁইথিয়া-রামপুরহাট রেললাইনে বৈদ্যুতিক ট্রেন (ইএমইউ) চালানোর জন্য কাজ শুরু হয়। খুঁটি পোঁতা বা তার টানার কাজ এখনও অনেকটাই বাকি। এরই মধ্যে চুরি যায় কয়েকশো মিটার বিদ্যুতের তার। এক বার নয়, চার বার। তার চুরির ঘটনায় বেশ দুঃশ্চিন্তায় ছিল রেল কর্তৃপক্ষ। অবশেষে ওই চুরির ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালিয়ে শনিবার ও রবিবার ৫ জন গ্রেফতার হয়।
পুরো না হলেও চুরি যাওয়া তারের কিছুটা উদ্ধার হয়েছে। আরপিএফ সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃতেরা হল সাঁইথিয়া বিবেকানন্দপল্লির প্রেমলাল চৌধুরী, মহম্মদবাজার থানার আঙারগড়িয়ার সুভাষ বাগদি ও ছোটন অঙ্কুর, সাঁইথিয়া সরলা গ্রামের সঞ্জীত বাগদি এবং সাঁইথিয়া টাউন হাইস্কুল পাড়ার বুদ্ধরাম সাউ ওরফে লোহা সিং। ধৃতদের আজ, সোমবার বোলপুর আদালতে হাজির করানো হবে। তবে রেলের তার চুরি এই প্রথম নয়। গত অক্টোবর মাসে সিউড়ির মহিষাডহরি, দুবরাজপুর, চিনপাই, কচুজোড়েও তার চুরি হয়েছে। সেই সব ঘটনার এখনও কোনও কিনারা হয়নি। |
উদ্ধার হওয়া তার ও ধৃতেরা। —নিজস্ব চিত্র। |
রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, হাওড়া ডিভিশনের বর্ধমান-সাহেবগঞ্জ লুপ লাইনের সাঁইথিয়া-রামপুরহাটের মধ্যে বৈদ্যুতিক ট্রেন চালানোর জন্য বিদ্যুতের কাজ শুরু হয় গত নভেম্বর মাসে। কাজ শুরুর আগেই ওই মাসে বিদ্যুদয়নের জন্য আনা তার চুরি যায়। তল্লাশি চললেও দুষ্কৃতীরা তো ধরা পড়েনি, উদ্ধার হয়নি চুরি যাওয়া তারও। এর মধ্যে গত ২২ ও ২৮ ডিসেম্বর ফের তার চুরি হয়। এর পরেই নড়েচড়ে বসে রেল কর্তৃপক্ষ। দুষ্কৃতীদের ধরতে স্থানীয় রেল সুরক্ষা বাহিনীর জওয়ানদের সঙ্গে সাঁইথিয়ায় ঘাঁটি গাড়েন ওই বাহিনীর সিআইডি হেডকোয়ার্টার (কলকাতা) ও হাওড়া ২ ডিভিশনের অফিসাররা। তাঁদের মধ্যে ছিলেন সিআইডি হেডকোয়ার্টারের ইন্সপ্সেক্টর রাকেশকুমার মিশ্র, দীপঙ্কর দে ও হাওড়া ২ ডিভিশেনর অফিসার দেবকীকুমার বসু। তাঁদের ঘাঁটি গাড়ার পরেও গত ৮ জানুয়ারি ফের চুরি হয়। এর ফলে দুঃশ্চিন্তা আরও বাড়ে রেল কর্তৃপক্ষের। সাঁইথিয়া-গদাধরপুরের মধ্যে এই চুরির ঘটনা ঘটে।
অবশেষে শনিবার রাতে খবর পেয়ে প্রেমলাল চৌধুরী নামে ওই দুষ্কৃতীকে আটক করা হয়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ওই দিন রাতে সুভাষ বাগদি ও ছোটন অঙ্কুরকে আটক করা হয়। এর পরে রবিবার সঞ্জীত বাগদি ও লোহা সিংহকে আটক করে ওই দল। রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, দুষ্কৃতীরা প্রায় ১৫০০-১৬০০ মিটার তার চুরি হয়েছিল। তার মধ্যে প্রেম ও লোহার বাড়ি থেকে ৮০০-৯০০ মিটার তার উদ্ধার হয়েছে।
গত ২৪ ডিসেম্বর রাতে সাঁইথিয়া-গদাধরপুর রেললাইনের মাঝে ঝুলে থাকা তার আপ বিশ্বভারতী ফার্স্ট প্যাসেঞ্জারে জড়িয়ে গিয়েছিল। এর ফলে আপ লাইনে সমস্ত ট্রেন বিভিন্ন স্টেশনে আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা দাঁড়িয়ে যায়। রেল পুলিশের অনুমান, দুষ্কৃতীরা চুরি করতে না পেরে ওই ভাবে তার কেটে রেখে পালিয়েছিল। এ দিকে, শনিবার দুষ্কৃতীদের ধরতে গিয়ে হাতে আঘাত পান রাকেশবাবু। আরপিএফ-এর ডিআইজি (পূর্ব) জিএম ঈশ্বর রাও বলেন, “চুরির ঘটনার তদন্ত চলছে। তার চুরির ঘটনায় জড়িতদের খোঁজে তল্লাশি চলছে। এলাকায় নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।” |