লোক সংস্কৃতির নানা রঙে মাতবে এ বার পূবর্স্থলী। শনিবার থেকে পূর্বস্থলী ১ ব্লকের শ্রীরামপুর পঞ্চায়েতের তরুণ সঙ্ঘের মাঠে শুরু হয়েছে সারা ভারত লোক সংস্কৃতি উৎসব। সঙ্গে রয়েছে, কৃষি, হস্ত, কুটিরশিল্প মেলা ও আদিবাসী ক্রীড়া প্রতিযোগিতা। অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তা এই ব্লকের লোক সংস্কৃতি উৎসব ও কৃষিমেলা কমিটি।
এই উৎসবে এ বার আটটি রাজ্যের নৃত্যশিল্পীরা এসেছেন। এর মধ্যে রয়েছে আসামের বিহু নাচ, ওড়িশার সম্বলপুরি, ওড়িশি, গুটিপোয়া, গুজরাটের সিদ্ধিধামাল, পাঞ্জাবের ভাঙরা ও গিরধা, উত্তরপ্রদেশের হোলি নৃত্য, মনিপুরের মনিপুরি নৃত্য, সিকিমের লোকনৃত্য ছাড়াও থাকছে দার্জিলিংয়ের গোর্খা নৃত্য, পুরুলিয়ার ছৌ, কাটোয়ার রণ-পা নৃত্য। উদ্বোধন উপলক্ষে এ দিন হেমায়েতপুর থেকে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বেরোয়। তাতে হাঁটেন এলাকার স্বয়ম্ভর গোষ্ঠীর সদস্য, স্কুল পড়ুয়া, স্কাউট সদস্য-সহ এলাকার বহু মানুষ। রাস্তার দু’পাশে ছিল কয়েক হাজার মানুষের ভিড়। |
তরুণ সঙ্ঘের মাঠে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন হয়। ১৩তম বর্ষে পা রাখা এই মেলার উদ্বোধন করেন জেলাশাসক ওঙ্কার সিংহ মিনা। এর পরে নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। সপ্তাহব্যাপী এই মেলায় একশোটিরও বেশি স্টল রয়েছে। তাতে কৃষিজাত ফসলের ফুল, ফল ও ক্ষুদ্র, কুটির শিল্পের প্রদর্শনী রয়েছে। এ ছাড়া রয়েছে কৃষি, খাদ্য, প্রক্রিয়াকরণ ও উদ্যান পালন বিষয়ে আলোচনা সভা, মাটি পরীক্ষা, পশু মেলা, মৎস্য চাষিদের পরামর্শ দান শিবির, বিনা ব্যয়ে গবাদি পশুর চিকিৎসার ব্যবস্থা। মেলার এক একটি দিন উদ্যোক্তাদের তরফে এক একটি বিশেষ দিবস রাখা হয়েছে। ছাত্র ও যুব দিবস ছিল শনিবার। অন্যদিকে মহিলা ও নারী দিবস হল রবিবার। সোমবার রয়েছে শ্রমজীবী দিবস। এ ছাড়াও বিভিন্ন দিনে থাকছে প্রাণি সম্পদ দিবস, কৃষক দিবস, স্ব-নির্ভর দিবস, পরিবেশ দিবস এবং আদিবাসী দিবস।
প্রতিদিনই উন্নয়নমূলক নানা সেমিনার থাকছে যাতে সরকারি আধিকারিকেরা বোঝাবেন গ্রামের মানুষ কীভাবে তাঁদের নিজেদের পায়ে দাঁড়াবেন, উৎপাদিত পণ্যের বাজার কোন কোন জায়গায় রয়েছে, কোন কোন সম্প্রদায়ের জন্য কী কী সরকারি সুবিধা রয়েছে। শিল্পীদের পরিচয়পত্র দেওয়ারও ব্যবস্থা রাখা হয়েছে এই মেলায়। মূল মঞ্চের এক পাশে উদ্যোক্তাদের তরফে চিত্র প্রদর্শনী রয়েছে। স্বাধীনতা সংগ্রামে যোগ দেওয়া বিভিন্ন বিপ্লবীদের ছবি রাখা হয়েছে।
অন্যদিকে রাজ্যের লোকসংস্কৃতি ও আদিবাসী মঞ্চের উদ্যোগে এবং জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের সহযোগিতায় রবিবার থেকে এই মাঠেই লালন মেলা শুরু হচ্ছে। অভিনেত্রী দেবশ্রী রায় এর উদ্বোধন করবেন। এই মেলায় নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, বর্ধমান, উত্তর দিনাজপুর, মালদহ-সহ রাজ্যের ছ’টি জেলার লালন গানের শিল্পীরা অংশ নিয়েছে। লোক সংস্কৃতি উৎসব ও কৃষিমেলা কমিটির সম্পাদক দিলীপ মল্লিক বলেন, “মেলায় বিভিন্ন বিভাগের উপর রয়েছে প্রতিযোগিতা। সফল প্রতিযোগীদের পুরস্কৃত করা হবে। এ ছাড়াও আদিবাসীদের ক্রীড়া নিয়ে রয়েছে আলাদা একটি দিন।” মেলার মুখ্য উপদেষ্টা তথা ক্ষুদ্র, কুটির শিল্প, বস্ত্র, ভূমি দফতরের প্রতিমন্ত্রী স্বপন দেবনাথের কথায়, “বয়স যত বেড়েছে মেলার পরিধি তত বিস্তার লাভ করেছে। আশা করছি আবার মেলা এলাকার মানুষের মুখে হাসি ফোটাবে।” |