আদালতের বিভিন্ন বিভাগে প্রচুর মামলা জমে রয়েছে। তাই সাধারণ মানুষের বিচার পেতে দেরি হচ্ছে। আইনজীবীরা এমনই দাবি করেছেন কালনা আদালত নিয়ে। তাঁরা এ জন্য আদালতের দুর্বল পরিকাঠামোকেই দায়ী করেছেন।
আইনজীবীরা জানান, অ্যাডিশনাল চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (এসিজেএম), জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (জেএম) এবং মুন্সেফ আদালতে বেশি মামলা জমে রয়েছে। এসিজেএম আদালতে চার হাজার, জেএম আদালতে সাড়ে চার হাজার এবং মুন্সেফ আদালতে সাড়ে তিন হাজারেরও বেশি মামলা জমে রয়েছে। মারামারি, চুরি, ছিনতাই, প্রতারণা, খোরপোষ, বধূ নির্যাতনের মতো মামলাগুলির বিচার হয় এসিজেএম আদালতে। এসিজেএম আদালত থেকে জেএম আদালতে নানা মামলা স্থানান্তর করা হয়। |
আইনজীবীদের দাবি, এসিজেএম আদালতে জমে থাকা মামলার মধ্যে প্রায় ১৫০০টি খোরপোষের মামলা। জমি-জমা সংক্রান্ত মামলার বিচার মুন্সেফ আদালতে হয়। এই আদালতে প্রায় দু’দশকের মামলাও বিচারাধীন অবস্থায় রয়েছে। আইনজীবী অনিরুদ্ধ মণ্ডল জানান, ১৯৯৮ সালে কালনা ২ ব্লকের সিঙ্গেরকোন এলাকার একটি ঘটনায় ছ’জন অভিযুক্ত হয়। মামলা চলাকালীন দু’জন অভিযুক্ত মারা গিয়েছেন। মামলাটি বর্তমানে হাজিরার পর্যায়ে রয়েছে। এই মামলায় এক পক্ষের আইনজীবী অনিরুদ্ধবাবুর আশঙ্কা, সেটির নিষ্পত্তি হতে আরও এক দশক সময় লেগে যেতে পারে। ১৯৮৮ সালে কালনা শহরের শ্যামগঞ্জ পাড়ার দু’জন ব্যক্তি একটি পুকুরের দখল নিয়ে আদালতে মামলা করে। এই মামলার রায়ে এক পক্ষের পুকুর দখলের অধিকার রয়েছে বলে জানানো হয়। অনিরুদ্ধবাবু বলেন, “খোরপোষের বহু মামলার এখনও সমন পাঠানোর কাজও বাকি রয়েছে। এই অবস্থা চলতে থাকলে ভবিষ্যতে পরিস্থিতি মারাত্মক আকার নেবে।”বহু বছরের পুরনো কালনা মহকুমা আদালতের এমন পরিস্থিতি কেন? আইনজীবীরা দুর্বল পরিকাঠামোকেই এর জন্য দায়ী করেছেন। জেলার অন্য আদালতে একাধিক জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালত থাকলেও কালনায় এখনও শুধুমাত্র একটি জেএম আদালত রয়েছে। বর্তমানে জেএম আদালতে স্টেনোগ্রাফার পদে কোনও লোক নেই। বিচার ব্যবস্থার যাবতীয় বিষয় বিচারককে নিজে হাতে লিখতে হয়। মামলা সংখ্যার তুলনায় আদালতের সংখ্যা কম। আদালত লাগোয়া জিআর বিভাগের অবস্থা বেশ খারাপ। এই বিভাগের গুরুত্মপূর্ণ নথি অযত্নে নষ্ট হচ্ছে বলে অভিযোগ। আদালতের প্রবীণ আইনজীবী প্রভাত সাহার কথায়, “গুরুত্বপূর্ণ তিন বিভাগে প্রচুর মামলা পড়ে থাকায় সাধারণ মানুষের বিচার পেতে দীর্ঘ সময় লেগে যাচ্ছে।” সরকারি আইনজীবী বিকাশ রায় জানান, আদালতের পরিকাঠামো চার দশক ধরে খারাপ। অথচ মামলার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। আর এক সরকারি আইনজীবী মলয় পাঁজার বক্তব্য, “জিএম আদালতের সংখ্যা একাধিক বাড়লে চাপ কিছুটা কমে। সম্প্রতি কালনা মহকুমা আদালত ঘুরে যান ডিরেক্টর অফ প্রসিকিউশন আশিস চক্রবর্তী। সমস্যা সমাধানে তাঁকে উদ্যোগী হওয়ার জন্য আবেদন জানানো হয়েছে।” আশিসবাবু জানান, এই আদালতের কয়েকটি বিষয়ে সমস্যা রয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে তা জানানো হবে। |